এক মাসেও উদ্ধার হয়নি বড়হাটের অক্ষত বোমা এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক
হোসাইন আহমদ॥ বড়হাটের জঙ্গি আস্তানায় জঙ্গিদের নিক্ষিপ্ত দুটি বোমার মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হলেও একটি এখনও অক্ষত অবস্থায় বাড়ির পেছনের বোরো ধানের জমিতে পড়ে আছে। জমির ধান পেকে আসলেও কাঠতে পারছেন না মালিক। অভিযানের পরের কয়েক দিন স্থানীয়দেরকে ওই জমির পাশের রাস্তা দিয়ে যেতে পুলিশ বাঁধা দিলেও এখন সাধারণ মানুষ নিয়মীত যাতায়াত করছে। তবে তাদের মধ্য থেকে আতংক কাটেনি। কারণ যে কোন সময় বোমা বিস্ফোরিত হয়ে দূঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা।
সরেজমিন ২ মে মঙ্গলবার দুপুরে জমির পাশে গেলে দেখা যায় বোমা নিক্ষিপ্ত জমির পাশের রাস্তা দিয়ে যোহরের নামাযে যাচ্ছেন ওই এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম গিয়াস। এসময় তার সাথে প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি বলেন, শুনেছি এখানে একটি বোমা পড়ে আছে। তাহলে আপনি ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন যে কোন সময় এটা বিস্ফোরিত হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন তাহলে আর কি করব। দেখা যায় জমি থেকে প্রায় ১০০ হাত উত্তরে ওই রাস্তায় এলাকার শিশুরা ক্রিকেট খেলছে। এসময় ১২ বছরের শিশু নাহিদ বলে, আমাদের মধ্যে সব সময় ভয় কাজ করে। যে কোন সময় বোমা বিস্ফোরিত হতে পারে। খোলা মাঠ না থাকায় আমরা সবাই নিয়মীত এখানে খেলাধোলা করি।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মুনিম রেনু মিয়ার ২২ শতকের জমিটি চুক্তিতে চাষাবাদ করেছেন দিনমজুর সুলতান মিয়া। তিনি বলেন, ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ওই জমিতে বোরো ধান রোপন করেছিলাম। কিন্তু ধান পেকে আসলেও প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বাঁধার কারণে কাঠতে পারছিনা। চাষাবাদের সম্পন্ন ব্যয় আমি বহন করেছি। জমির মালিককে ফসলের ৩ ভাগের ১ভাগ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ধান না কাঠায় সম্পন্ন ব্যয় আমাকে বহন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, কবে এটা জমি থেকে উদ্ধার করা হবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে এবিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
জঙ্গি বাড়ির পাহারার দায়িত্বে থাকা এসআই মোশাররফ হোসেন বলেন, ওই বাড়িতে নতুন ভাবে কেউ ঢুকছে কিনা এবং অন্য জঙ্গিরা আবার এসে কিনা এটা দেখার জন্য পূর্ববর্তী দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদেরকে বলে গেছেন। তবে জমিতে নিক্ষিপ্ত বোমার বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। কারণ এবিষয়ে আমাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি।
এলাকার বাসিন্দা পৌর মেয়র মোং ফজলুর রহমান বলেন, জমির ধান না কাটার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মালিককে বলা হয়েছে।
এবিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল বলেন, জমিতে পানির কারণে বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এটা উদ্ধার করতে পারছেন না। তারা বলেছেন এটা চিহ্নিত করে রাখার জন্য। লোকজন তো বোমা নিক্ষিপ্ত জমির পাশ দিয়ে নিয়মীত যাতায়াত করছে যে কোন সময় এটা বিস্ফোরিত হয়ে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমি বলতে পারবো না কারণ আমি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নয়।
প্রসঙ্গত, ২৯ মার্চ মঙ্গলবার রাত থেকে বড়হাট ও নাসিরপুর দুইটি জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রাখেছিলো পুলিশ ও র্যাব। পৃথক দুটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় আশপাশের দুই কিলোমিটার জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। ওইদিন সন্ধ্যায় অভিযান চালায় (সর্বাধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাক্টিকস) সোয়াট দল। নাসিরপুরে সোয়াত টিমের প্রধান মরিরুল ইসলামের নেতৃত্বে “অপারেশন হিটব্যাক” পরিচালনা করা হয়। অপারেশন হিটব্যাক চলা কালে আত্মঘাতি বোম বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ওই আস্তানায় দুই শিশুসহ একই পরিবারের ৭জন নিহত হয়। নাসিরপুর অপারেশন হিট ব্যাক চলা কলে মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রাখে পুলিশ ও র্যাব। পরের দিন ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় বড়হাটের জঙ্গি আস্তানা রেকি করার পর রাতে অভিযানে নামে সোয়াট টিম। অভিযানের নাম দেওয়া হয় “অপারেশন ম্যাক্সিমাস”। এতে নিহত হয় নারীসহ তিন জঙ্গি।
মন্তব্য করুন