কমলগঞ্জের রুমানা জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ট জয়িতা নির্বাচিত

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ কমলগঞ্জ উপজেলার গোপালনগর পৌর এলাকার বাসিন্দা পুলিশ বাহিনীর সদস্য এস আই মোহাম্মদ আবদুল মান্নান এর কন্যা রুমানা আক্তার রুবি সমাজ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখায় এবছর শুধু কমলগঞ্জেই নয় জেলা পর্যায়েও জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন।
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ মাস্টার্স (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) শেষ বর্ষের ছাত্রী রুমানা ২ভাই ১ বোনের মধ্যে সবার বড়। ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের প্রতি তার ঝোঁক ছিল। তারই ধারাবাহিকতা লেখাপড়ার পাশাপাশি আজও তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন সমাজের দুঃস্থ, অসহায় ও বঞ্চিত মানুষের কল্যানে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সমাজ সেবায় বিলিয়ে দিচ্ছেন নিজেকে।
মৌলভীবাজার রেড ক্রিসেন্টের একজন যুবসদস্য হিসাবে বন্যাকবলিত এলাকায় ছুটে গেছেন দুর্গত মানুষের সাহায্যের জন্য। বিভিন্ন এলাকার দুস্থ মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করেছেন অনলাইনে। আলাপচারিতায় রুমানা জানান, তিনি মৌলভীবাজার সরকারী কলেজের একজন রোভার ম্যাট, সামাজিক সংগঠন স্বপ্নের ঢেউ এর কেন্দ্রীয় মহিলা সম্পাদিকা এবং সাতরং ট্রেনিং সেন্টারের একজন ট্রেইনার। এসব প্রতিষ্টানের সদস্য হিসাবে তিনি সবসময় তার সামাজিক দ্বায়িত্ব নিষ্টার সহিত পালনের চেষ্ঠা করে গেছেন।
রুমান তার বিভিন্ন সমাজ কর্মের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। এবছর জয়িতা অন্নেষণে উঠে এসেছে তার নাম। ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস ২০১৮ উপলক্ষে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর আয়োজিত এক বর্নাঢ্য অনুষ্টানে তার হাতে আনুষ্টানিকভাবে তুলে দেওয়া হয় জয়িতা‘র সন্মাননা স্বারক। একই তারিখে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনও আনুষ্টানিকভাবে তার হাতে তুলে দেয় জেলা পর্যায়ে জয়িতা হওয়ার সন্মাননা সনদ।
সাংবাদিকদের সাথে তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে রুমানা বলেন, আমার জীবনের শ্রেষ্ট উপহার আমি পেয়েছি। আমার মত একজন নগন্য মানুষের পক্ষে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ট জয়িতা হওয়ার সুযোগ কখনোই আসতো না যদি প্রতিটি সংগঠন আমার পাশে না থাকতো। যাদের উৎসাহ ও প্রেরণা আজ আমাকে এই পর্যায়ে টেনে এনেছে তাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। এই প্রাপ্তি শুধু আমার একার নয়, গোটা কমলগঞ্জবাসীর। জয়িতা নির্বাচিত হওয়ায় এখন এখন আমার কাজে আরও উৎসাহিত হয়েছি।
তিনি বলেন, সরকারের একার পক্ষে একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সমাজের দুঃস্থ পীড়িত, অসহায়, দূর্দশাগ্রস্থ মানুষের কল্যানে আমরা যে যে অবস্থানে আছি সেখান থেকে সাধ্যমত সহযোগীতায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
চিকিৎসার অভাবে নিভে যাচ্ছে আরেক জয়িতার —
শ্রীমঙ্গলে চিকিৎসার অভাবে নিভে যাচ্ছে এক জয়িতার আলো
“সমাজের বিত্তবানদের কাছে অমরী’র চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন আমরী ও তার স্বামী”
শূণ্য হাতে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে নিজের যোগ্যতায় উদ্যম ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলা সফলকাম নারী শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের নোওয়া গ্রামের এক জয়িতা অমরী পাল এবার হেরে যেতে বসেছেন। ক্রমশই নিভে যাচ্ছে তার সকল স্বপ্ন ও সাধনার গল্প।
২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তারিখে এক সড়ক দূর্ঘটনা আহত হয়ে তার সমস্ত শরীর অচল হয়ে যায়। জয়িতার গল্প ছেড়ে এক বছর ধরে তিনি বিছানার সাথে গড়েছেন মিতালী। অসহ্য যন্ত্রনায় কাতর অমরী বিছানায় শুয়ে শুয়ে আবারও জয়িতা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। সমাজের বিত্তবানদের সহযোগীতায় তিনি সুস্থ্য হয়ে আবারও কাজে লাগতে চান।
অমরীর চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গেছে। বর্তমানে তাকে প্রতিদিন দু’বেলা ইলেক্ট্রিক থেরাপী, ঔষধ, ক্যাথেডারসহ দৈনিক ৫০০ টাকা খরচ হয়। যা অমরীর স্বামীর পক্ষে প্রতিদিন খরচ করা সম্ভব হচ্ছে না। ডাক্তাররা বলছেন অমরীকে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারলে তিনি দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু অমরীর পরিবারের দারিদ্রতা ক্রমশ তাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
অমরী তার সংসারের শত অভাব অনটনের মধ্যেও তার মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে সেলাই প্রশিক্ষন নিয়ে ৫ বছর আগে ধীরে ধীরে শহরের কলেজ রোডে গড়ে তুলেছিলেন আচল টেইলার্স নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি লাভের চেহারা দেখার আগেই অমরীর অসুস্থ্যতার কারণে এখন সেটি বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে।
অমরীর স্বামী শহরের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে খুবই স্বল্পমূল্যে চাকুরী করেন। তাদের বড় ছেলে স্থানীয় ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রনীতে ও ছোট মেয়ে দেওয়ান শামসুল ইসলাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেনীতে পড়ালেখা করে। অমরীর স্বামীর পক্ষে তার ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া ও ঘর সংসারের খরচ চালিয়ে অমরীকে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না।
অমরীর উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। নিরুপায় হয়ে সমাজের বিত্তবানদের কাছে অমরীর চিকিৎসার জন্য সাহায্যে আবেদন জানিয়েছেন অমরী ও তার স্বামী। অমরীর চিকিৎসার জন্য আপনাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বাচিঁয়ে তুলুন এক জয়িতার স্বপ্নকে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ এবং বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী পরিচালিত “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ” শীর্ষক বিশেষ কার্যক্রমের আওতায় “অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জকারী নারী” ক্যাটাগরিতে অমরী রানী পালকে সর্বশ্রেষ্ঠ জযিতা ’র সম্মানে ভূষিত করা হয়।
অমরীর স্বামীর মোবাইল নম্বর : ০১৭৩২৩৭১২৩৯। এই নম্বরে বিকাশ একাউন্ট করা আছে। সাহায্য করার ইচ্ছা থাকলে যে কেউ অমরীর স্বামীর সাথে আলাপ করে বিকাশে সাহায্য পাঠাতে পারবেন। অথবা প্রাইম ব্যাংক শ্রীমঙ্গল শাখার একাউন্ট নম্বর ১৫০২১০৫০০২৪৩১৯ (সুনীল পাল) তে সাহায্য পাঠাতে পারবেন।