কমলগঞ্জে অবাধে চলছে মাদক ও জুয়ার রমরমা আসর ঃ যুব সমাজ হচ্ছে বিপথগামী
প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ কমলগঞ্জ উপজেলায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে বেড়েই চলেছে রমরমা মাদক ব্যবসা ও জুয়া আসর। মাদক ব্যবসা থেকে বাদ পড়েনি নারী-পুরুষ কেউই। উপজেলার পাড়া-মহল্লায় অনেকটা খোলামেলাভাবেই চলছে মাদক বেচাকেনা ও জুয়ার আসর। কাঁচা অর্থ লোভে কিশোর ও যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে এসব ব্যবসায়। যুব সমাজ হচ্ছে বিপথগামী। ফলে পরিবার ও সমাজে বিশৃঙ্খলা নেমে আসছে। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা মাঝে-মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে ছিচকে মাদক ব্যবসায়ীও জুয়াড়ীদের আটক করলে ও মূল মাদক ব্যবসায়ী জুয়ার আসরের আয়োজকরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। যার কারণে থামানো যাচ্ছেনা মাদক ও জুয়ার আসরসমুহ। তবে মাঝে-মধ্যে পুলিশী অভিযানে মাদকসহ বিক্রেতা আটক হলেও আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আবার মাদক ব্যবসা শুরু করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ও মাদক সেবনকারী ও জুয়া খেলায় জড়িতদের দেয়া তথ্যমতে জানা গেছে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি কেনা-বেচা হচ্ছে চা বাগানে দেশীয় প্রদ্ধতিতে তৈরী চোলাই মদ। আর গাঁজা। এছাড়া উপজেলার ইসলামপুর ও চাতলাপুর সীমান্ত দিয়ে অবাধে ভারত থেকে অবৈধ পথে আসা ফেনসেডিল, হুইসকি, অফিসার চয়েস, রাম, বিয়ার, ভটকাসহ ইয়াবা।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, উপজেলার ২২টি চা বাগানে বৈধ মদের পাট্টা রয়েছে। এইসব পাট্টায় মাদক সহজ লভ্য হওয়ার কারণে বাগানের শ্রমিকদের পাশাপাশি বস্তি এলাকার উঠতি বয়সের যুবকরা মাদকের দিকে ধাবিত হচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে একশ্রেণীর সুযোগ সন্ধানীরা পাত্রখোলা, মাধবপুর, ফুলবাড়ী, আলীনগর, মদনমোহনপুর, চাতলাপুর, শমসেরনগর, দেওড়াছড়া ও কানিহাটি চা বাগানসমুহে নিজেদের বসত বাড়ীতেই গড়ে তুলেছেন চোলাই মদের কারখানা ও অবৈধ পাট্টা।
এছাড়া মাদক বেচাকেনাসহ ও জুয়ার আসর চলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছাতকছড়া গ্রামের রেনুর দোকানের সামনের বাড়ীতে, মাধবপুর ইউনিয়নের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান সড়কের পাশের্^ অবস্থিত মসজিদের পাশের্^, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ফুলবাড়ী চা বাগানের এক মহিলা জন প্রতিনিধির বাড়ীতে, পশ্চিম কুমড়া কাপন ও দক্ষিণ কুমড়া কাপনের দুটি বাড়িতে ইয়াবা ও ভারতীয় মাদক বিক্রি করা হয়। এছাড়া ভ্রাম্যমানভাবে কমলগঞ্জ পৌরসভার কমলগঞ্জ মডেল হাইস্কুলের সম্মুখে, নতুন ধলাই ব্রীজের পাশের্^, উপজেলা পরিষদ কিন্ডার গার্ডেন এর সম্মুখে ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি হয়। এছাড়া কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রানীর বাজারস্থ ধলাই নদীর পাড় সংলগ্ন শ্মাশানে নিয়মিত সন্ধ্যার পর যুবকরা জড়ো হয়ে মাদক সেবন করে। অপরদিকে শমসেরনগর ইউনিয়নের শিংরাউলী গ্রামের একটি বাড়ীতে ও আলীনগর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ীর সম্মুখে একটি বাড়ীতে, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের লংগুরপাড় গ্রামে ধলাই নদীর পাড়ে নিয়মিত জুয়ার আসর বসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার বিভিন্ন এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, আমার প্রতিবাদ করতে গেলে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকিও দেয়। তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাদক ব্যবসা ও জুয়া পরিচালনা করছি। এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে কোন লাভ হবে না। আশেপাশের প্রায় সব গ্রামে মাদক বিক্রি হয়। আমাদের সন্তানদের নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, অবাধে মাদক ও জুয়ার আসর চলার কোন সুযোগ নেই। জুয়া ও মাদকের ব্যাপারে আমরা সোচ্চার। জুয়া ও মাদক বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
মন্তব্য করুন