কমলগঞ্জে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উৎসব পালিত

November 23, 2022,

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ সিলেট বৃহত্তর আদিবাসী ফোরামের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে কমলগঞ্জের মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মাঠে আদিবাসী সধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই সাথে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বর্ষ বিদায় অনুষ্ঠিত হয়।

বর্ণাঢ্য আয়োজনে বুধবার ২৩ নভেম্বর বৃহত্তর সিলেটের খাসিয়া পুঞ্জির প্রধানদের সাথে মতবিনিময়, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সভায় আলোচনা সভা ও নানান খেলাধূলা ও খাসিয়া নৃত্যের মাধ্যমে মাগুরছড়া খেলার মাঠে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

দুপুৃর ১২টায় অনুষ্ঠান শুরু হলেও মূল পর্ব শুরু হয় বেলা ২টায়। মাগুরছড়া ফুটবল মাঠের একপ্রান্তে বাঁশের খুঁটির উপর প্রাকৃতিক পরিবেশে নারিকেল গাছের পাতার দিয়ে ছাউনী দিয়ে আলোচনা সভার মঞ্চ তৈরি করা হয়। এ মঞ্চে বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনন্দ মোহন সিনহার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের  সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দ্বীপ চাঁন কানু, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিছ বেগম, মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসিদ আলী।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান জিডিসন প্রধান সুচিয়াং। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মণিপুরি আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সমরজিত সিংহ, কবি সনাতন হামোম, আদিবাসী নেতা পরিমল সিংহ বাড়াইক, নিরঞ্জন দেব, ভিম্পল সিংহ, মো. জাকারিয়া আহমদ প্রমুখ।

মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান জিডিসন প্রধান সুচিয়াং জানান, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং আদিবাসীদের অধিকার বাস্তবায়নে সরকার উদ্যোগী হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা এবং খাসি জনগোষ্ঠীর বর্ণিল সংস্কৃতির সৌরভ ছড়িয়ে পড়ুক  বিশ্বময়।

খাসিয়া আদিবাসী ভাষায় তদের নিজস্ব বর্র্ষপুঞ্জি হিসেবে বছরের শেষ দিন ২৩ নভেম্বর ‘খাসি সেং কুটস্নেম’। খাসিয়া আদিবাসী ভাষায় এ অনুষ্ঠানটি হচ্ছে ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ দেশব্যাপি খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উৎসব (বর্ষ বিদায়) মাগুরছড়া পুঞ্জিুর মাঠে বুধবার উৎসবের আমেজে উৎসবে মিলিত হয় তারা এই দিনে। বর্ণিল সাজে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ছেলে মেয়েরা সাজে তারা। এ উৎসবের মাধ্যমে তাদের বিলুপ্ত প্রায় সংস্কৃতি ও খেলাধূলাকে তুলে ধরা হয়। আদিবাসী খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসবের মূল আকর্ষণ ঐহিত্যবাহী খাসি পোশাক পরে মেয়েদের নাচ-গান, তৈল যুক্ত একটি বাঁশে উঠে উপরে রাখা মুঠোফোন গ্রহন, দুটি পুকুরে বড়শী দিয়ে মাছ শিকার, তীর ধনুক খেলা, গুলতি চালানো বিভিন্ন ধরণের তাদের নিজস্ব ভাষাতে গান গেয়ে অতিথিদের আনন্দ দেওয়া হয়।

বেশ বড় আকারে মেলাসহ নানা আয়োজন করা হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মাঠে মাগুরছড়া পুঞ্জির ইয়োথ ক্লাবের উদ্যোগে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বৃহত্তর সিলেটে প্রায় ৮০টির মতো খাসিয়া পুঞ্জি রয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটি খাসিয়া পুঞ্জির খাসিয়ারা কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির  ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ অর্থাৎ বর্ষবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

খাসিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালি ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষসহ দেশী-বিদেশী পর্যটকরা অংশগ্রহণ করেন। বর্ষপুঞ্জি অনুযায়ী ১৫৮তম বর্ষকে বিদায় ও ১৫৯তম বর্ষকে বরণ করে নিলো খাসিয়া জনগোষ্ঠী। ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ২৩ নভেম্বর খাসি বর্ষ বিদায় ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ পালন করা হয়। পরদিন ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয় খাসি বর্ষবরণ।

 

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com