কমলগঞ্জ-আদমপুর সড়কটি খানাখন্দে বেহাল অবস্থা ঃ চলাচলে দুর্ভোগ; টেন্ডার হলেও কাজ করেনি ঠিকাদার

June 26, 2024,

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে সংস্কারের অভাবে কমলগঞ্জ-আদমপুর সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে। সড়কটির ৫ কিলোমিটার অংশের বিটুমিন ও খোয়া উঠে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত আর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায়ই স্কুল, কলেজগামী শিক্ষার্থী ও বহনকারী যাত্রীদের টমটম, ইজিবাইক, অটোরিকশা উল্টে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। সম্প্রতি সিএনজি অটোরিক্সা উল্টে এক যাত্রী নিহত হবার পর আতংকিত যাত্রীরা। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবী সড়কটি মেরামতের জন্য প্রায় দেড় বছর আগে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হবার ভয়ে ঠিকাদার কাজটি করেননি। ফলে সড়কটি মেরামত না হওয়ায় দিন দিন আরো বেহাল দশায় পরিণত হচ্ছে। দ্রুত সড়কটি মেরামতের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সুত্রে জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে আদমপুর বাজার পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৭ কিলোমিটার। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি ব্যয়ে এলজিইডির অর্থায়নে কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুুহনী থেকে আদমপুর বাজার পর্যন্ত রাস্তার কার্পেটিং করা হয়। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৬ বছরে রাস্তাটিতে কাপেটিং উঠে খানাখন্দে সৃষ্টি হয়েছে। দিন যত যাচ্ছে ততই বিশাল গর্ত হচ্ছে। রাস্তাটিতে চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর মৌলভীবাজার সড়কটি মেরামতের জন্য দরপত্র আহবান করেছিল। ওই ঠিকাদার বাজারে পাথর ও বিটুমিনের দাম বৃদ্ধিতে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে কাজটি না করে সরকারী বিধি মোতাবেক ১০ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে চলে যায়। ফলে রাস্তাটি মেরামত করতে হিমশিম খাচ্ছে এলজিইডি বিভাগ।
আদমপুর এলাকার স্থানীয় শাব্বির এলাহী, আব্দুস সালাম, মিলন সিংহ অভিযোগ করেন বলেন, প্রায় আড়াই বছর আগে থেকেই কমলগঞ্জ-আদমপুর সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আদমপুর, ইসলামপুর, কমলগঞ্জ সদর ও আলীনগর ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষের চলাচলের প্রধান সড়ক এটি। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন শত শত গাড়ি জেলা ও উপজেলা সদরের সাথে চলাচল করে থাকে। সর্বশেষ সাড়ে ছয় বছর আগে সড়কটি সংস্কার করা হয়। এরপর মেরামত না করায় সড়কের অনেক স্থানে বিটুমিন ও ইট-পাথর উঠে গিয়ে ছোট-বড় প্রায় দু’শতাধিক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কমলগঞ্জ-আদমপুর সড়কটির আলেপুর নামক এলাকা হতে আদমপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কের অসংখ্য স্থানে কার্পেটিং উঠে ইটের খোয়া ও পাথর বেরিয়ে পড়েছে। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় খানাখন্দ। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইঞ্জিনচালিত যানবাহন, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে।
এ সড়কে চলাচলকারী অটোরিকশাচালক হোসেন আলী ও ফরিদ মিয়া বলেন, আমাদেরকে বাঁচান আপনারা। কিছু একটা করেন রাস্তার জন্য। তিনি আরো বলেন, রাস্তায় অনেক খানাখন্দ থাকায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় গাড়ি করে এই রাস্তা দিয়ে রোগী নিয়ে গেলে তাঁদের অবস্থা আরও কাহিল হয়ে পড়ে।
মাইক্রোবাস চালক ছত্তার মিয়া বলেন, ‘ভাঙাচোরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রায়ই নাটবল্টু খুলে পড়ে যায়। ফলে সারা দিন ভ্যান চালিয়ে যা রোজগার করি, তার একটা অংশ মেরামতেই শেষ হয়ে যায়। ২০ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগে ৪০-৪৫ মিনিট।
আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আবদাল হোসেন বলেন, রাস্তাটি মেরামতের জন্য বার বার সংশ্লিষ্টদের কাছে জানিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় চলাচলে অনুপযোগী হয়ে উঠেছে সড়কটি। দ্রুত মেরামতের দাবী জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে এলজিইডি’র কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, কমলগঞ্জ-আদমপুর সড়কটি সংস্কারেরর জন্য ২০২২-২৩ অর্থ বছরে টেন্ডার আহবান করা হয়। কিন্তু জিনিস পত্রের মুল্য বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্তের ভয়ে ঠিকাদার কাজ করতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে আবারও রাজস্ব খাত হতে মেরামতের চেষ্টা করলেও টাকা বেশি হওয়ায় সেটাও করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি ঘূর্নিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পূর্ণবাসন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আশা করি অতি দ্রুতই রাস্তাটি মেরামত করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com