কুলাউড়ায় লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি জনদুর্ভোগ চরমে

June 20, 2024,

স্টাফ রিপোর্টার॥ কুলাউড়ায় টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হাকালুকিসহ প্রতিটি হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পৌরসভাসহ উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।
এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে আছেন। ডুবে গেছে নি¤œাঞ্চলের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ। বিভিন্ন বাসা-বাড়ির লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে উঠেছেন। এছাড়াও উপজেলার প্রায় ৭ শত হেক্টর জমির আউশধান ও গীস্মকালীন শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২৭ টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেদ্রে দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে টিলা ধ্বসে পড়ার আশঙ্কায় পাহাড়ের পাদদেশ ঝুঁকি নিয়ে বসবসাকারী পরিবারকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। জানা গেছে, গত ৩ দিন থেকে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুলাউড়া পৌর এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকেছে।
সোমবার (১৭ জুন) সকাল থেকে বুধবার বিকাল পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরেছে। ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে উপজেলার ভুকশিমইল, জয়চন্ডী, কাদিপুর, ব্রাহ্মণবাজার, বরমচাল, ভাটেরা, সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে পানি উঠেছে।
এতে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘরে ঠিকতে না পেরে অনেক পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে উঠেছেন। এছাড়াও উপজেলা শহরের সাথে যোগাযোগের প্রধান প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে পানিবন্দি মানুষদের খোঁজ-খবর নিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার বিকাল পর্যন্ত হাকালুকি হাওর তীরবর্তী ভূকশিমইল, জয়চন্ডী, কাদিপুর, বরমচাল ও ভাটেরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান সাহেদ।
এ সময় তাঁরা আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রিত লোকজনের খোঁজখবর নেন এবং তাদের খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেন।
কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ জানান, তাঁর পৌরসভার প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। অনেকের বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। বিশেষ করে ১ নং ওয়ার্ডের ৯০ ভাগ ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত। অনেকেই এসে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। তাদেরকে শুঁকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, ভুকশিমইল ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ১০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং বুধবার বিকেল পর্যন্ত শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। এসব পরিবারের মধ্যে তারা শুকনো খাবার দিচ্ছেন।
জয়চন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহাবুব বলেন, তাঁর ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি মানুষের জন্য ৫টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বুধবার বিকাল পর্যন্ত এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। শহরের সাথে প্রধান সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। প্রশাসনের নির্দেশনা পেয়ে সরকারের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করছেন।
কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ গিলমান বলেন, পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁর ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি মানুষের জন্য ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বুধবার বিকাল পর্যন্ত প্রায় ৪০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।
কুলাউড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শিমুল আলী বলেন, কুলাউড়ায় এখন পর্যন্ত ২৭ টি আশ্রয়কেন্দ্রে খোলা হয়েছে। বুধবার বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন জানান, বন্যায় কুলাউড়া উপজেলায় ৪৮০ হেক্টর আউশ ধান এবং ১৬৫ হেক্টর গীস্মকালীন শাক-সবজি নিমজ্জিত রয়েছে। পানি আরও বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে বলেও জানান তিনি।
কুলাউড়া সংসদীয় আসনের এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল জানান, গত দু’দিন থেকে তিনি উপজেলার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রিত পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন। আশ্রয় কেন্দ্রে ওটা পরিবারের মধ্যে শুঁকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি দেওয়া হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com