কুলাউড়ায় সাবেক রেঞ্জ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষদের মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ
মাহফুজ শাকিল : কুলাউড়ায় বনের ভেতর থেকে বিনা অনুমতিতে সেগুন গাছ কর্তন ও পাচার চেষ্টা জনিত অপরাধের ঘটনায় একটি মামলা করেছে বনবিভাগ। এ মামলায় প্রকৃত দোষীদের আড়াল করে নিরীহ তিনজনকে আসামি দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। মামলায় আসামী করা হয় উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মনছড়া গ্রামের চেরাগ আলীর ছেলে মো. জাকির (২৮), আব্দুল মালিকের ছেলে মো. আনফর (৪০), তমিজ মিয়ার ছেলে মো. আনছার (২৭)। তারা তিনজন ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন না এমনকি গাছ কাটার তথ্য বনবিভাগকে দেয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান। এছাড়া মামলায় স্থানীয় কাউকে সাক্ষী না করে দেওয়া হয়েছে বন বিভাগের তিনজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৮ মে কুলাউড়া বনবিভাগের বনছড়া বিটের মনছড়া মৌজার ২০০৮-০৯ সনের বাগান থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই প্রায় একশত ফুট সেগুন গাছ কর্তন করা হয়। এ ঘটনার সাথে স্থানীয় বাসিন্দা আখলিছ মিয়া গংসহ একটি প্রভাবশালী মহল জড়িত রয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। ঘটনার দিন তারা প্রায় ৭০-৮০ ফুট সেগুন গাছ কর্তন করে পাচার করে। খবর পেয়ে স্থানীয় বনবিভাগ প্রায় ৩১ ফুট পরিমাণ সেগুন কাঠ জব্দ দেখিয়ে কাঠগুলো উদ্ধার করে গাজীপুর রেঞ্জ অফিসে নেয়া হয়। পরবর্তীতে এই ঘটনায় সাবেক রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে মনছড়া গ্রামের বাসিন্দা জাকির, আনফর, আনছার নামে তিনজনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনায় সাবেক রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন প্রভাবিত হয়ে প্রকৃত আসামিদের আড়াল করে বনআইনে অপরাধের অভিযোগ দিয়ে নিরীহ ওই তিনজনের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এছাড়া মনছড়া বিট থেকে নিয়মিত অবাধে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাটা হচ্ছে। এতে বনের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। মাঝেমধ্যে বনবিভাগ লোক দেখানো মামলা করলেও এখনও বন্ধ নেই গাছ কাটা। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন থেকে এই মনছড়া বিট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার গাছ কর্তন করে যাচ্ছে। এতে নীরব ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় বনবিভাগ।
ভুক্তভোগী মো. আনছার, জাকির, আনফর বলেন, সেগুন গাছ কাটার সাথে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও আমাদের তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হলো। বর্তমানে মামলা থেকে জামিন নিয়েছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, যারা গাছ কাটলো তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলো না, ঘটনার দিন স্থানীয় বাসিন্দা আখলিছ, মাসুক, আমির ও মখলিছ মিলে বনায়ন থেকে সেগুন গাছ কর্তন করে দুই গাড়ি কাঠ পাচার করেন। ওই ঘটনাটি তখন স্থানীয় মনছড়া বিট অফিসের গার্ডকে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে এসে কিছু কাঠ জব্দ করেন। গাছ কাটার তথ্য দেবার কারণে আখলিছ গংয়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তৎকালীন রেঞ্জার আমাদের নামে মামলা দিয়েছেন। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মিথ্যা মামলা থেকে আমাদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।
অভিযোগের বিষয়ে মনছড়া গ্রামের বাসিন্দা আখলিছ মিয়া বলেন, সেগুন গাছ কাটার সাথে আমরা জড়িত নই। প্রায় ১৫ বছর আগে স্থানীয় ৫২ জন লোক মিলে ওই বাগানটি করেছি। কারা গাছ কেটেছি আমি জানিনা। আমাদের কোন সদস্যও গাছ কাটেনি। সেগুন গাছ কাটা হয়েছে জেনে আমরা প্রায় ৪০-৪৫ ফুট কাঠ উদ্ধার করতে বনবিভাগকে সহায়তা করেছি।
এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে মামলার সাক্ষী বন বিভাগের মনছড়া বিটের ফরেস্ট গার্ড প্রতাপ চন্দ্র দেব বলেন, যতটুকু জেনেছি স্থানীয় বাসিন্দা আখলিছ মিয়া গং এই সেগুন গাছ কর্তন করেছেন। হাতি দিয়ে কর্তনকৃত গাছ নেয়া হয়েছে। পরে রাতে গাছ কাটার বিষয়টি জানাজানি হয়। ওইসময় কিছু কাঠ জব্দ করে আখলিছ মিয়াসহ কয়েকজনের নাম আমি রেঞ্জ কর্মকর্তার কাছে দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে মামলায় তাদের নাম কিভাবে বাদ পড়লো সেটি আমি বলতে পারবো না।
মামলার বিষয়ে কুলাউড়ার সাবেক রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, যারা গাছ কেটেছে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দেয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন