চা রপ্তানি ২০২৪ সালে কিছুটা বেড়েছে-চা বোর্ড চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো: সরওয়ার হোসেন

March 1, 2025,

সাইফুল ইসলাম : বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন বলেছেন, ‘ বিগত ১৫ বছরে চা রপ্তানি ড্রপ করে ছিলো রিলেশনশীপের কারণেই। চা রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে রিলেশনশীপটা মেটার করে। এই রিলেশনশীপ অনেক সময় পলিটিক্যাল লিডারশীপের উপর ডিফেন্ড করে। যে সকল দেশ আমাদের কাছ থেকে ইমপোর্ট করতো, তাদের কোনো কারণে হয়তো বুঝা-পড়াতে কোন একটা গ্যাপ ছিল, সেটা কিন্তু ডিপ্লোমেটিক কারণেও হতে পারে। প্রতিটি মানুষ কেনা-কাটার আগে সিদ্ধান্ত নেয় কোথা থেকে ক্রয় করবে। এটাও একটা রিলেশনশীপের বিষয়। কান্ট্রি টু কান্ট্রির রিলেশনশীপ, ডিপ্লোমেটিক রিলেশনশীপের বিষয়ে চলে আসে এবং বাহিরে চায়ের কম্পিটিশন বেড়েছে। এখন অনেকগুলো দেশেই সস্তায় চা উৎপাদন করছে। যেখানে আমরা প্রাইসের জন্য স্ট্রাগল করছি। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের রপ্তানী অনেক কমেছিল এটা সত্য।  ২০২৪ সালে রপ্তানি আবার কিছুটা বেড়েছে। এই বাড়াতে আমরা খুব বেশি খুশি না, আমাদের অনেক সুযোগ আছে, তাই রপ্তানি আরো বাড়াতে হবে।’

২৭ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ চা গবেষনা কেন্দ্র (বিটিআরআই)  ৫৯তম বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের বার্ষিক কোর্স প্রশিক্ষনের সমাপনী দিনে প্রশিক্ষনার্থীদের মাঝে সনদ বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের সাথে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে দেশের বিভিন্ন বাগানের ২০ জন সহকারী ব্যবস্থাপক প্রশিক্ষনার্থীদের নিয়ে গুণগত মান নিয়ে চা উৎপাদনের উপর ৭দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ কোর্স প্রদান করা হয়। এসময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চা বোর্ডের সদস্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) ড. পীযুষ দত্ত, চা গবেষণা কন্দ্রের পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন, প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. একে এম রফিকুল হকসহ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষণার্থীগন।

চা রপ্তানির বিষয়ে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘চা রপ্তানির  জন্য সবার আগে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে আগে যে দেশগুলোতে রপ্তানি করা হতো সেসব দেশের সাথে যোগাযোগ উন্নত করতে হবে। বিগত কয়েক বছরে কোন কারণে আমাদের লিংকআপ দুর্বল হওয়ায় চায়ের মার্কেট অন্যান্য দেশ দখল করে নিয়েছে। সেখান থেকে উত্তোরণ ঘটাতে হবে। এখন আমাদের মিশন হলো বিদেশী  এম্বেসিগুলোর সাথে দেশের ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে  যাতে আমাদের চা ইম্পোর্ট করে সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখার অনুরোধ। প্রয়োজনে চা সেক্টর থেকে বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধি যাবে এবং আমাদের চা গুলো প্রদর্শনী করবে বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে, যাতে তাদের মধ্যে আকর্ষণ বাড়ে। অনেকেই হয়তো জানেও না বাংলাদেশে কোয়ালিটি চা উৎপাদন হয় ?। এছাড়া যারা চা ইমপোর্ট করেন তারা যদি চা ইমপোর্ট কমিয়ে এক্সপোর্ট করেন তাহলে দেশ উপকৃত হবে।’

চায়ের বাজার নিয়ে তিনি বলেন, ‘ চায়ের বাজারে কয়েকটা গ্রুপের উপর এই চা সেক্টর নির্ভরশীল। আমি সিন্ডিকেট বলবো না, কিন্তু কয়েকটা গ্রুপের ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে চায়ের মার্কেট প্রাইসটা কি রকম হবে ?। চায়ের প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ১৬০ টাকার নিচে নামালে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা নির্ধারণ করার কারণে  অকশনে চায়ের মূল্য নিচে নামতে পারছে না। যদি প্রাইস আমরা কমিয়ে দেই, তাহলে অকশনে মুড়ির দামে চা বিক্রি হওয়া শুরু হবে। এতে বাগান মালিকরা আরো ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। এমনিতেই বেশির ভাই বাগান এখন লোকসানে আছে। কারন কস্ট অব প্রডাকশন ২২০ টাকার উপরে। সেখানে আমরা ২২০ টাকার নিচে চা সেল করলে তারা লস গুণতে হবে। এজন্য লো প্রাইস আর কমানো যাবে না।’

নিম্নমানের চা ভারত থেকে চোরাই পথে আসার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যারা ওপার থেকে সেগুলো পাঠাচ্ছে দোষ শুধু তাদের না, আমাদের নিজেরাও চরিত্রহীন। ওপার থেকে নিয়ে আসতেছে-তো আমাদের লোক’ই, আমাদের লোক যদি লোভে পড়ে রাতের অন্ধকারে নিজের দেশের ক্ষতি করে নিয়ে আসে সেটাও আমাদের ঠিক করতে হবে। সবকিছু আইনকানুন দিয়ে হয় না, আমাদের নিজেদের চরিত্র ঠিক করতে হবে। নিজেদের আত্মসম্মানবোধ, দেশপ্রেম আছে, সেগুলো ঘাটতি থাকলে বর্ডার যতই সীল মারা হোক না কেন, কোন না কোন ভাবে সেগুলো আসবেই। যারাই এর সাথে সম্পৃক্ত তাদের দেশপ্রেমের প্রতি জাগ্রত হতে হবে।’

ন্যাশনাল টি কোম্পানির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে এই কোম্পানিতে অনেক অনিয়ম হয়েছে, সেই অনিয়মের জন্য অনেক ব্যাংক লোন হয়েছে, পরবর্তিতে সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন সরকার চেষ্টা করছে, নতুন পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে, আমি আশাবাদী নতুন যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তারা সততার সাথে কাজ করলে অবশ্যই এই কোম্পানি ভালো করবে। তাদের প্রতিটি বাগান ভালো আছে। যারা অনিয়মের সাথে যুক্ত ছিলেন তাদের ব্যাপারে লিগ্যাল প্রসিকিউশনে বা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে বলে আমি বিশ্বাস করি। তবে আমি নির্ধারিত করে বলতে পারবো না কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কারণ এটা একটা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি।’

প্রসঙ্গত: বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে নয় কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। ২০২৩ সালে ছিল ১০ কোটি দুই লাখ কেজি। ২০২৩ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদনের পর ২০২৪ সালে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে দেশে চা উৎপাদন কমেছে।বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য বলছে—২০২৪ সালে সাড়ে ২৪ লাখ কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। ২০১৭ সালের পর সর্বোচ্চ। ২০১৭ সালে এই পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ ৬০ হাজার কেজি। ২০২৪ সালে রপ্তানি আয় ছিল চার কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

তবে চা বোর্ডের তথ্যে দেখা গেছে বিগত কয়েক বছরে রপ্তানি ওঠানামা করেছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ছয় লাখ কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। ২০১৯ সালে তা কমে হয়েছিল ছয় লাখ কেজি। এরপর ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ২১ লাখ ৭০ হাজার কেজি। তবে ২০২১ সালে কমে হয় ছয় লাখ ৮০ হাজার কেজি। ২০২২ সালে রপ্তানি বেড়ে হয় সাত লাখ ৮০ হাজার কেজি। ২০২৩ সালে আরও বেড়ে হয় ১০ লাখ ৪০ হাজার কেজি। মধ্যপ্রাচ্যসহ যে সব দেশে প্রবাসী বাঙালিদের বসবাস সেখানে বাংলাদেশি চায়ের চাহিদা বেশি বলে জানান চা রপ্তানির সঙ্গে জড়িত এক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে নবম বৃহত্তম চা উৎপাদক। বৈশ্বিক উৎপাদনে এর অবদান দুই শতাংশ। বিশ্বের বৃহত্তম চা উৎপাদনকারী চীন। এরপর ভারত, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে চা রপ্তানি করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রপ্তানি কমবেশি হওয়া সত্ত্বেও ২০২৫ সালে বাংলাদেশ চা বোর্ড দেড় কোটি কেজি রপ্তানির লক্ষ্য নিয়েছে। ২০০২ সালে বাংলাদেশ এক বছরে সর্বোচ্চ দেড় কোটি কেজি চা রপ্তানি করেছিল।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com