চা-শ্রমিক সংঘের সভায় বক্তারা, দুর্গা পূজায় পূর্ণ বোনাস এবং বকেয়া মজুরি-রেশন পরিশোধের দাবি

September 30, 2024,

স্টাফ রিপোর্টার চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভায় আসন্ন শারদীয় দুর্গা পূজায় সকল শ্রমি কে পূর্ণ উৎসব বোনাস, ফুলতলা, তারাপুরসহ সকল বাগান চালু, বিভিন্ন বাগানের আটককৃত বকেয়া মজুরি-রেশন পরিশোধ এবং অবিলম্বে ২০২৩-২০২৪ মেয়াদের জন্য বাজারদরের সাথে সংগতিপূণ মজুরি নির্ধারণের দাবি জানানো হয়।

রোববার ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সদ্য সমাপ্ত সম্মেলনোত্তর নব-নির্বাচিত কমিটির ১ম সভা থেকে এই দাবি জানানো হয়। চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি রাজদেও কৈরীর সভাপতিত্বে কমলগঞ্জের শমসেরনগরস্থ কার্যালয়ে অনুষ্টিত সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মো: নুরুল মোহাইমীন ও সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস এবং ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হরিনারায়ন হাজরার পরিচালনায় অনুষ্টিত সভায় বক্তব্য রাখেন চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি শ্যামল অলমিক ও মধুরজক, সহ-সাধারণ সম্পাদব সুভাষ গৌড়, সাংগঠনিক সম্পাদক লক্ষèী রানী বাক্তি, কোষাধ্যক্ষ হেমরাজ লোহার, দপ্তর সম্পাদক রামনারায়ন গৌড়, প্রচার সম্পাদক কাজল হাজরা, জেলা কমিটির সদস্য সামরতি মৃধা, শুভা মৃধা, মংরা রোউতিয়া, সুনীল শব্দকর, শ্যামল রায় প্রমূখ।

সভায় বক্তারা বলেন দুর্গা পূজা উপলক্ষে বিভিন্ন বাগানে শ্রমিকদের কাজে উপস্থিতির উপর নির্ভর করে উৎসাহ/হাজিরা বোনাসকে উৎসব বোনাস হিসেবে চালিয়ে শ্রমিক ঠকানোর পাঁয়তরা চালানো হচ্ছে। উৎসব বোনাস সকল শ্রমিকের সমান হারে প্রদান করার আইন থাকলেও চা-বাগানের মালিকপক্ষ কাজে উপস্থিতির উপর বেআইনীভাবে একেক জন শ্রমিককে একের রকম বোনাস দিয়ে শ্রমিক ঠকাচ্ছেন। অথচ শ্রমআইনের ২ (২ক) এবং শ্রমবিধি ১১১ (৫) অনুযায়ী সকল শ্রমিককে সমান হারে বছরে ২ টি উৎসব বোনাস প্রদান বাধ্যতামূলক। সেই অনুযায়ী আসন্ন শারদীয় দুর্গা পূজার সকল শ্রমিক পূর্ণ উৎসব বোনাস হিসেবে ৫৫৬০ টাকা প্রদানের দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন চা-শ্রমিকদের অধিকাংশই সনাতন ধর্মাম্বলী হলেও দুর্গার পূজার প্রাক্কালে এনটিটির ১২ টি, দেউন্দি টি কোম্পানীর ৪ টিসহ রাজনগর, কালাগুল, ফুলতলা, তারাপুরসহ কমপক্ষে ২০/২৫টি চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন ঠিক মত পরিশোধ করা হচ্ছে না। এমন কি কোন কোন বাগান বেআইনীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দুর্গার পূজার আগে শ্রমিক মজুরি-রেশন পরিশোধ না করায় চা-শ্রমিকরা চরম অনিশ্চয়তায় খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। চা-শ্রমিকরা এমনিতেই যে মজুরি পান তা বর্তমান বাজারদরে ১ লিটার সোয়াবিন তেলও পাওয়া যায় না। তার উপর যদি মজুরি-রেশন আটক রাখা হয় তাহলে এই শ্রমিকদেরকে যে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্যের পড়তে হয় তা আর ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

সম্প্রতি চা-বাগান মালিকদের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট চা-শ্রমিকদের মজুরি সম্পর্কে সর্বসাকুল্যে দৈনিক ৫৬০.২৬ টাকা হিসেবে মাসিক ১৬,৮০৭ টাকা মজুরি প্রদানের তথ্য তুলে ধরার তীব্র নিন্দাা জানিয়ে বলেন চা-উৎপাদনকারী দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের চা-শ্রমিকদের মজুরি সর্বনিম্ন। শ্রীলঙ্কায় গত ৩০ এপ্রিল ২০২৪ চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৭০% বৃদ্ধি করে ১০০০ রুপি থেকে বাড়িয়ে ১৭০০ রুপি (প্রায় ৫.৭০ ডলার বা ৬৮০ টাকা) নির্ধারণ করে। নেপালে চা-শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি ৫০০ রুপি (৩.৮০ ডলার বা ৪৫০ টাকা); ভারতের আসাম রাজ্যে ব্রহ্মপুত্র ভ্যালিতে চা-শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি ২৫০ রুপি (৩ ডলার বা ৩৫২ টাকা) এবং বরাক ভ্যালিতে ২২৮ রুপি (২.৭৩ ডলার বা ৩২১ টাকা), পশ্চিমবঙ্গের চা-শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি ২৫০ রুপি (৩ ডলার বা ৩৫২ টাকা) এবং কেরালার চা-শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি ৪৩২.৬৫ রুপি (৫.১৮ ডলার বা ৬০৯ টাকা) পান। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের চা-শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনও চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশের চা-শ্রমিকদের সর্বশেষ ১৭০ টাকা মজুরির মেয়াদ ২০২২ সালে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২১ মাস অতিবাহিত হলেও নতুন মজুরি নির্ধারণ করে এখন চা-বাগান মালিক সমিতি বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সভা থেকে চা-শ্রমিকনেতারা সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও উৎপাদনে সক্রিয় থাকার প্রয়োজনে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ৬ সদস্যের পরিবারে ভরণ পোষণের খরচ হিসাব করে ২০২৩-২০২৪ মেয়াদের জন্য নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ এবং একটি পরিবারের সাপ্তাহিক প্রয়োজনের অনুপাতে চাল, আটা, ডাল, তেল, চিনি, সাবান, চা-পাতাসহ পূর্ণ রেশন প্রদান, ভূমির অধিকার প্রদান, চা-শিল্পে নৈমিত্তিক ছুটি (বছরে ১০ দিন) কার্যকর ও অর্জিত ছুটি প্রদানে বৈষম্যসহ শ্রম আইনের বৈষম্য নিরসন করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মজুরি ও উৎসব বোনাস প্রদানে সকল অনিয়ম বন্ধ করে শ্রমআইন মোতাবেক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক প্রদান, ফুলতলা চা-বাগানসহ বন্ধ সকল চা-বাগান চালু, বকেয়া মজুরিসহ নিয়মিত সকল চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ এবং ৯০ দিন কাজ করলেই সকল শ্রমিককে স্থায়ী করার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com