জুড়ি নদীর ছোট মাছ ধরার ফাঁদ ‘হগ্রা’

April 16, 2017,

এমদাদুল হক॥ ভারত থেকে বাংলাদেশের রাঘনা-বটুলী সীমান্ত এলাকা ভেদ করে ফুলতলা, সাগরনাল, গোয়ালবাড়ী ও জায়ফরনগর ইউনিয়ন হয়ে জুড়ি উপজেলা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়ে হাকালুকি হাওরে মিশেছে জুড়ি নদী।
জুড়ি নদীর পাড় ঘেষে যুগ যুগ ধরে কতো মানুষের বসবাস। আছে কত ভাঙ্গা-গড়ার কাহিনী, আর কতো হাসি-কান্নার গল্প। নদীর এপার ভাঙ্গে ওপার গড়ে এইতো নদীর খেলা, যে খেলা এখনো খেলেই চলেছে জুড়ি নদী।
সীমান্তবর্তী এলাকার জীবনচক্র ক্যামেরা আর কলমের কালীতে বন্দী করার প্রয়াসে যখন সীমান্তের জুড়ি নদীর তীরে হাঁটছিলাম তখনই চোখে পড়লো কয়েকটি অভিনব যন্ত্র। নদীর তীরে রাখা বাঁশের তৈরী সেই যন্ত্রের কয়েকটা ছবি ক্যামেরায় ধারন করলাম। নোটবুক আর কলম হাতে নিয়ে ঐ যন্ত্রের বিস্তারিত ধারনা নিতে যখন কাউকে খুঁজছিলাম তখনই পেলাম জুড়িরপার গ্রামের যুবক সিরাজুল ইসলামকে।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম- এটা কী ভাই?
প্রশ্নের উত্তরে সিরাজ ভাই বললেন, “বড় গাংগর ফারো থাকিয়া মাছ খাইতে অইলে অতা ‘হগ্রা’ ফানিত ফাতানি লাগে” অর্থাৎ বড় নদীর পাড়ে থেকে মাছ শিকার করতে হলে এসব ‘হগ্রা’ যন্ত্র নদীর পানিতে পেতে রাখতে হয়।

 


হগ্রা মানে কি? বুঝলাম না ভাই! –আরে বাবা, এটার ভেতরে মাছ ঢুকলে আর বের হতে পারে না। এটার নাম হলো ‘হগ্রা’। গ্রামীণ সনাতন প্রযুক্তিতে তৈরী মাছ ধরার যন্ত্র বা ফাঁদ।
এভাবে এই প্রতিবেদককে হগ্রা’র প্রাথমিক ধারণা দিলেন সিরাজ ভাই। তিনি বললেন, ‘জুড়ি নদীর পানি যখন কমে যায় তখন এই যন্ত্র বা ফাঁদ দিয়ে মানুষ ছোট মাছ ধরে।’
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার ফুলতলা, সাগরনাল, গোয়ালবাড়ী ও জায়ফরনগর ৪টি ইউনিয়ন ঘেঁষে বয়ে চলেছে জুড়ি নদী। নদী পাড়ের কমবেশি সব মানুষই শখের বশে মাছ শিকার করে। কেউ কেউ নিজেরা এই যন্ত্র তৈরী করে আবার কেউ তা ক্রয় করে।
জানা গেলো, ছোট মাছ ধরার জন্য বাঁশের শলা দিয়ে তৈরি করা হয় এটি। প্রতিটা হগ্রা উচ্চতায় ৫-৭ ফুট হয়। পুরোটাই নলাকৃতির। শুধু একপাশ দিয়ে মাছ ঢোকার জন্য ত্রিকোণাকৃতির প্রবেশদ্বার রয়েছে। এর ভিতরে মাছ ঢুকলে পরে আর বের হতে পারে না। এতে ধরা পড়ে পুটি, টেংরা, মলা, রাণী, চিংড়ি ও বিভিন্ন মাছের পোনা।
হগ্রা তুলতে আসা নদী পাড়ের লোকমান হোসেন বলেন, ‘হগ্রার মাছ তরতাজা ও সতেজ থাকে। কম কষ্টে বেশি মাছ শিকারের যন্ত্র এটি। ৭-৮ ঘন্টা পরপর পানির মধ্যে ডুবিয়ে রেখে আবার তোলার পর এতে প্রচুর ছোট মাছ পাওয়া যায়।’ জুড়ি নদীর পাড়ের সবার বাড়িতেই একাধিক হগ্রা থাকে বলেও জানান তিনি।
প্রতিদিন সকালে, বিকেলে ও মধ্যরাতে জুড়ি নদী থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে হগ্রা থেকে নদীর ছোট মাছ ধরে আনে নদীপাড়ের মানুষ।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com