জেলা পরিষদ নির্বাচন : প্রচারণায় ব্যস্ত ১১৪ প্রার্থী ॥ মুখ খুলছেন না ভোটাররা

December 23, 2016,

ইমাদ উদ দীন॥ প্রতীক সম্বলিত লিফলেট হাতে প্রার্থীরা ছুটছেন রাত দিন। বিরামহীন ঠিকটাক চলছে তাদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। প্রতিদিনই দফায় দফায় প্রার্থীদের পক্ষে চলছে ভোট প্রার্থনা। প্রার্থী নিজে কিংবা তার স্বপক্ষে লোকজন রাত দিন যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।তুলে ধরছেন নিজ পছন্দের প্রার্থীর যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা। কুশল বিনিময় আর সালাম আদাব জানিয়ে চাইছেন তাদের মূল্যবান ভোট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভোটারদের কাছে করছেন ভোটের আবেদন নিবেদন। প্রার্থীর পক্ষে প্রচরণায় মাঠে আছেন একাধীক টিম। ভোট চাওয়ার এ দলে পুরুষের পাশাপাশি বাদ পড়ছেন না নারীরাও। নিজদের পক্ষে ভোট টানতে কাজে লাগানো হচ্ছে ভোটারদের আতœীয় স্বজনকে। আতœীয়তার সম্পর্কে তারা ভোট চাইছেন নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে। ভোট যুদ্ধে বিজয়ী হতে চালানো হচ্ছে না কৌশল। ইলেক্ট্ররাল কলেজ পদ্বতিতে ভোট হওয়ায় দেশে এবারই প্রথম জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। তাই সাধারণ ভোটারদের অংশগ্রহণ না থাকায় মাঠে ঘাঠে হাটে জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা অনান্য নির্বাচনের মত নয় ততটা সরগরম। তারপরও প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচারণায় অনেকটা জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ। আর হাতে মাত্র পাঁচ দিন। ভোটের দিন ঘনিয়ে আসায় প্রার্থীদের প্রচারণার কাজে রাত দিন একাকার। কাটছে র্নিঘুম রাত। ফুরসদ নেই দিনেও। এখন প্রার্থীদের একটাই লক্ষ্য যে ভাবেই হউক ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে শেষ মুর্হুতে তাদের মনজয় করে মূল্যবান ভোট নিজেদের ভাগে আনা। ভোট যুদ্ধের বৈতরণী পার হতে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে চলছে নানা কলা কৌশল। দিচ্ছেন নানা উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি। তবে ভোটাররা জনপ্রতিনিধি হওয়ায় তারাও অধিক সচেতন। তারা সহজেই যেমন কাউকে দিচ্ছেন না ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। তেমনি কোন প্রার্থীর পক্ষেও মুখও খুলছেন না সহজেই। নিজ দল বা নিকটজন না হলে প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সরাসরি ভোট চাইতেও নামছেন তারা। ভোটের মাঠে প্রার্থীরা সরব হলেও ভোটাররা রয়েছেন নিরব। চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ব্যাপক প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত থাকলেও বসে নেই সদস্য প্রার্থীরাও। চেয়ারম্যান প্রার্থীর তুলনায় সদস্য প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকার আয়তন ও ভোটার কম হলেও তাদের মত তারাও হরদম ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। প্রত্যাশা ভোটারদের মন জয় করে তাদের কাঙ্খিত রায় পাওয়ার।
আসন্ন মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন,সাধারন সদস্য পদে ৮৬ ও সংরক্ষিত (মহিলা) সদস্য পদে ২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। নির্বাচনে সাধারণ সদস্য ১৫ পদের বিপরীতে ৮৬জন ও সংরক্ষিত সাধারণ সদস্য (মহিলা) ৫ পদের বিপরীতে ২২জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন।
জেলা নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক ও আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী মো:আজিজুর রহমান “চশমা”,সাবেক এমপি ও ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এম শাহীন “আনারস”, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এম এ রহিম শহিদ (সিআইপি)“মোটরসাইকেল”,সিনিয়র সাংবাদিক বকসি ইকবাল আহমদ “ঘোড়া”, যুক্তরাজ্য প্রবাসী কমিউনিটি নেতা সুহেল আহমদ “তালগাছ”,যুক্তরাজ্য আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি ও আওয়ামীলীগের সদস্য শাহাবুদ্দিন সাবুল “প্রজাপতি” প্রতীক নিয়ে মাঠে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৬ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে আজিজুর রহমান ছাড়া ৫ জনই দল নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী দাবী করে মাঠে কাজ করলেও এদের মধ্যে ৩ জনের রয়েছে দলীয় পরিচিতি।
ইতোমধ্যে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন “মোটরসাইকেল” প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শিক্ষানুরাগী এম এ রহিম শহিদ (সিআইপি) ও “প্রজাপতি” প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী যুক্তরাজ্য আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি, আওয়ামীলীগের সদস্য ও লেবার পার্টির সদস্য শাহাবুদ্দীন সাবুল। এই দুজন প্রার্থী একই দলের হওয়ায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩ জন।
“আনারস” প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক এমপি এমএম শাহীন নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাবী করে ঐক্যবদ্ধ মৌলভীবাজারবাসীর ব্যানারে প্রার্থী বলে প্রচার প্রচারণা চালালেও এখন তিনি দলের কোন পদ পদবীতে না থাকলেও ছিলেন সাবেক জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক কুটির বিষয়ক সম্পাদক। এদিক দিয়ে তিনও বিএনপি ঘরনার প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে আলোচনা হচ্ছে। তবে বিএনপি বা ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মত সরাসরি তার সাথে নির্বাচনী মাঠে কাজ করতে দেখা না গেলেও তাদের মৌন সর্মথন রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে জেলা জুড়ে দলীয় ভাবে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা দল সমর্থিত “চশমা” প্রতীকের প্রার্থী মো: আজিজুর রহমানের পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালালেও অনেকটা বিভ্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে তাদের। কারণ ভোটের মাঠে কাজ করতে গেলে দলের অনেক ভোটার ও তৃণমুলের নেতা কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন কেন ভোটের আগে দলের অন্য দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ম্যানেজ করা হল না। কেন তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হলেন। তুলছেন পক্ষে বিপক্ষে এরকম নানা প্রশ্ন। এই সমঝতা না হওয়ার ক্ষেত্রে তারা দলের দ্বায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। নিজ দলের এই তিনজন প্রার্থীর সাথে দলীয় ভোটার ও দলের নেতাকর্মীদের সর্ম্পক থাকায় তারাও পড়ছেন বিপাকে। তারা ভোটের মাঠে কাজ করতে সরাসরি তাদের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারছেন না দলীয় সর্ম্পক থাকায়। তবে দিন যত যাচ্ছে ভোটের সময় ঘনিয়ে আসায় জেলা জুড়ে নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে। কে কোন দল ও মতের, কার কি যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা, কার দ্বারা এ জেলাবাসীর উন্নয়ন হবে ইত্যাদি নানা বিষয় জেলার সুশিল সমাজ ও সচেতন মহলের আলোচনায় উঠে আসছে।
মনোনয়ন জমাদান থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সুর্হাদ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা যায় মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে ২১ পদে মোট ১১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। ৬৭টি ইউনিয়ন ও ৫টি পৌরসভায় মোট (নির্বাচকমন্ডলীর সদস্য) ভোটার ৯৫৬ জন। জেলার ৭টি উপজেলার ১৫টি ওয়ার্ডে ১৫টি কেন্দ্রে ২৮ ডিসেম্বর ভোটাররা তাদের ভোট প্রদান করবেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com