ড্যান্ডি নেশা থেকে রুখে দাড়ালো ৮ বছরের শিশু নয়ন

তোফায়ের পাপ্পু॥ ড্যান্ডি নেশা থেকে রুখে দাড়াল নয়ন। ৮ বছরের শিশুটি এই বয়সে স্কুলে লেখাপড়ার কথা! পরিবারের অসীম অভাবের দায়ে ছেলেটি পিতা মাতার আদর ¯েœহ থেকে দূরে। গত ২/৩ বছর আগে পিতা তার মাকে ছেড়ে অন্যত্রে চলে যায়। তার মা মানুষের বাসায় বাসায় কাজ করে পেটের দায় মুছন করেন।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের রেল কলোনীতে বসবাসকালী সখিনা বিবির ছেটা ছেলে নয়ন মিয়া। নয়ন মিয়া সারাদিন কোথা হতে কোথায় যায় সে খবর তার মা রাখতে পারছেন না। তার মা নিজে সারা দিন মানুষের বাসায় বাসায় কাজ করে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরেন। বড় ছেলে শ্রীমঙ্গলস্থ সাগর দিঘী রোডের একটি চায়ের স্টলে কাজ করে। আর ছোট ছেলে নয়ন শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায় আর তার সম বয়সী অন্যান্য ছেলেদের সাথে মিশে ড্যান্ডি নামক নেশায় আশক্ত থাকে। প্রায়ই সে রাতে ড্যান্ডি নামক নেশা করে থাকে।
নয়নের মা সখিনা বিবি বলেন আমি সারাদিন কাজ করে দিন কাটাই। আমার ২টা ছেলে। বড়টা চায়ের দোকানে কাজ করে আর ছোট ছেলেটা কিছু করে না। আমরা গরীব দরিদ্র পরিবার আমার ছেলেগুলোরে অন্যরার মতো মানুষ কইরা তুলতে পারব না কি আর করার কপালে যা আছে তাই অইব।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় শ্রীমঙ্গলস্থ স্টেশন রোডে নয়ন মিয়া ড্যান্ডি নামক নেশা করতে ছিলো। স্থানীয় সামাজিক ও সাহিত্য সংগঠন ‘অঙ্গীকার’ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ সারোয়ার জাহান জুয়েল ,তাকে ড্যান্ডি নেশা করতে দেখলে তাকে ধরে নিয়ে তার মায়ের কাছে নিয়ে যান। এবং তাকে এই নেশার কুফল বলেন। নয়ন মিয়া ড্যান্ডি নামক নেশার ভয়াবহ পরিনতি শুনে সে আর কখনওই এই নেশা করবে না বলে ওয়াদা করে।
নয়ন মিয়া যেন ড্যান্ডি নামক নেশা থেকে দূরে থাকেন সেজন্য পরের দিন সকালে ‘অঙ্গীকার’ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ সারোয়ার জাহান জুয়েল তাকে মক্কা ক্লথ স্টোর নামক একটি দোকানে কাজ করার জন্য একটা ব্যবস্থা করে দেন।
তিনি জানান নয়ন মিয়াকে নতুন জীবন শুরু করার জন্য তাকে নতুন জামা কাপড় কিনে দেয়া হয়েছে। সে ওয়াদা করেছে আর কোন দিন নেশা করবে না। আপাদত কাজ করতে দেয়া হয়েছে। কেননা তাকে আগে ড্যান্ডি নামক নেশা আর আর অযথা ঘুরা ফেরা থেকে বিরত থাকতে হলে কিছুদিন অন্যভাবে থাকতে দেয়া উচিত। তাহলে সে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে। কয়েকদিন যাওয়ার পরে তাকে স্কুলে ভর্তি করা হবে। তার চিকিৎসার জন্য তাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। ঔষধও কিনে দেয়া হয়েছে।
নয়ন মিয়ার মা আরও বলেন ২/৩ বছর আগে স্বামী- সুমন মিয়া পরিবার ছেড়ে চলে যান। এর পর থেকে তিনি সন্তানদের তেমন একটা খোজ খবর নিতে পারছেন না। তিনি সারা দিন বাসা বাড়ীতে কাজ করেই দিন চলে যায়। আর সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর ক্লান্ত হয়ে গেলে আর তেমন একটা খেয়াল নিতে পারেন না। পর দিন সকালে ভোর বেলা আবার কাজে চলে যান।
মানুষ মানুষের জন্যই। সমাজে ধনী গরীব, ভাল খারাপ লোক রয়েছে বলেই সমাজে ভেদাবেদ রয়েছে। কিন্তু সমাজ নিয়ে সমাজের মানুষ নিয়ে, সমাজের সুবিধা বঞ্চিত ছিন্নমুল মানুষ নিয়ে কে ওই বা চিন্তা করেন। আসুন আমরা সবাই একে অপরের প্রতি সহানুভুতিশীল হই। সে যেই হোক সমাজে বসবাসকারী লোক একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, ¯েœহ, ভালবাসা, মূল্যবোধ নিয়ে জীবনযাপন করি। তাহলে সমাজ যেমন সুন্দর ও সুশৃংখল হবে তেমনি দেশও শান্তিতে পরিনত হবে।
মন্তব্য করুন