দিশেহারা কৃষক সর্বত্রে হা-হা-কার: মৌলভীবাজারে ফসল তলিয়ে গিয়ে ১শত ১৩ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি

April 20, 2017,

হোসাইন আহমদ॥ মৌলভীবাজারে কয়েক দিনের অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওর, হাইল হাওর, সোনাদিঘি, কাওয়াদিঘির হাওর ও কইরকোনা বিলসহ ৭ উপজেলার ১৭ হাজার ৪শ ৩২ হেক্টর জমি পানির নিছে তলিয়ে যায়। যার মধ্যে ১০ হাজার ২শ ৭৬ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১শত ১৩ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। রোর ধান তলিয়ে যাওয়ায় দূর্ভোগ বাড়ছে এলাকার সাধারণ কৃষকদের মধ্যে। তাদের মাঝে বিরাজ করছে হাহাকার। ৬ মাসের ঘামঝরা পরিশ্রমের ফসল একমুটুও ঘরে আনতে পারেননি এ জেলার কৃষকরা। বোরো চাষীদের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
ওই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক সিন্ডিকেট চাল ব্যবসীয়রা ইতি মধ্যে কয়েক দফায় চালের দাম বৃদ্ধি করেছেন। যার কারণে ছেলে সন্তানদের নিয়ে দু-মুট ভাত খেতে হিমশিক খাচ্ছেন অনেক দিনমজুর কৃষকরা।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার কাঞ্জার হাওর, মানিক হাওর, হাইল হাওর ও কাউয়াদিঘি হাওর পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে আবাতকৃত ১০৪২৫ হেক্টের জমির মধ্যে সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে গেছে ৩৪৮ হেক্টর, শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওর পানির নিছে তালিয়ে গিয়ে আবাতকৃত ৯৫৬৬ হেক্টের জমির মধ্যে ২৫০ হেক্টর, রাজনগর উপজেলার সোনাদিঘি, কাইয়াদিঘি ও সিঙ্গাহুরা হাওর পানির নিছে তালিয়ে গিয়ে আবাতকৃত ১৩২০০ হেক্টের জমির মধ্যে ৯৮৭ হেক্টর, কমলগঞ্জ উপজেলার কেওলার হাওর পানির নিছে তালিয়ে গিয়ে আবাতকৃত ৩৮৭৫ হেক্টের জমির মধ্যে ১০৯ হেক্টর, কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওর, ডলডল হাওর, রফিনগর হাওর, খাদিমপাড়া হাওর, আলিয়ার হাওর, বহিষমারা বলি,

মেঘাবিল, হাওর বিল, কালাপানির বিল, পালের বিল, হাগুয়া বিল ও লাউয়র বিলসহ অন্যান্য বিল পানির নিছে তালিয়ে গিয়ে আবাতকৃত ৬৫৫০ হেক্টের জমির মধ্যে ৩৩৯৬ হেক্টর, বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওর, মালাম বিল ও হুয়ালা বলি পানির নিছে তালিয়ে গিয়ে আবাতকৃত ৪৩৪০ হেক্টের জমির মধ্যে ১৯৭০ হেক্টর,  জুড়ী উপজেলা হাকালুকি হাওর ও কইরকোনা বিল পানির নিছে তালিয়ে গিয়ে আবাতকৃত ৫৪৭০ হেক্টের জমির মধ্যে ৩২১৬ হেক্টর।
এ বিষয়ে কথা হয় হাকালুকি হাওর পারের কৃষক ইদই মিয়ার সাথে তিনি বলেন, কৃষি কাজের আয় দিয়ে ৩ মেয়ে ও ২ ছেলের লেখাপড়ার খরচ এবং সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু এই বছর এক মুটো ধান ঘরে তুলতে পারিনি কিভাবে বাচ্চাদের খাওয়াব এবং সংসার চালাবো চিন্তা করে কুলকিনারা পাচ্ছি না। কথা হয় অপর কৃষক রাজনগর উপজেলার আব্দুল্লার সাথে সে বলে, ভাই বোরো ধানের আয় দিয়ে সংসার চালাতাম কিন্তু এখন ঘরে ধানও নেই গ্রামে কাজও নেই। এখন অসহায়ের মতো দিন কাটছে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ শাহজাহান তথ্যটি নিশ্চিত করে বলেন, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে বোরো চাষীদের এ বিশাল ক্ষতি হয়েছে। সরকারী ভাবে তাদের সহযোগীতা করতে চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ক্ষতি পোষিয়ে উঠার জন্য আগামী আমন মৌসুমে লক্ষ মাত্রার চেয়ে বেশি জমি চাষাবাদ করার পরিকল্পনা নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com