ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিশুরা: মৌলভীবাজারে ৫১টি প্রাইমারী স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষক নেই

হোসাইন আহমদ॥ শিক্ষার্থীদের সত, আদর্শ ও নৈতিকতা সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলার জন্য পুথিগত বৃদ্ধার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন। কোন ধর্মই মানুষকে খারাপ হতে বলেনি। শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠলে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। কর্মক্ষেত্রে গিয়ে আন্তরিকতার সহিত নিজ দায়িত্ব পালন করে। এজন্যই শিক্ষা বোর্ড আদিকাল থেকে পাঠ্য পুস্তকের পাশাপাশি সব ধর্মের “ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা” নামে একটি বই সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করেছে।
কিন্তু মৌলভীবাজার জেলার ৬ উপজেলার ৫১টি প্রাইমারী স্কুলের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদানের জন্য কোন ধর্মীয় শিক্ষক নেই। এর মধ্যে ৩৫ টি স্কুলে মুসলিম ও ১৬ টি স্কুলে অন্য ধর্মাবলম্বী কোন শিক্ষক নেই। অন্য ধর্মের শিক্ষক দিয়ে নামকা ওয়াস্তে চলছে ওই গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের পাঠদান। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, চাকমা ও সাওতালসহ প্রায় সব ধর্মের শিক্ষার্থীদের মৌলভীবাজার বসবাস। শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ধর্মের প্রতি টান থাকাটা স্বাভাবিক। মৌলভীবাজারের প্রাইমারী লেভেলে ধর্মীয় শিক্ষার ওই দূর অবস্থা দেখে অভিবাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যার কারণে শিশু বয়সেই অনেক শিক্ষার্থী নৈতিকতা বিবর্ষীত হয়ে অন্যায় অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। সমাজে বাড়ছে শিশু অপরাধ। নেশা জাতীয় দ্রব্যের সাথেও আসক্ত হচ্ছে তারা।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলায় মুসলিম শিক্ষক নেই ৪টি স্কুলে। এগুলো হলো, দেওয়ান নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাশকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দশকাউনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও করম উল্ল্যাহপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই উপজেলায় হিন্দু শিক্ষক নেই ৩টি স্কুলে। এগুলো হলো, সরকার বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিমারাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রফিনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
কমলগঞ্জ উপজেলায় মুসলিম শিক্ষক নেই মহেন্দ্র কোমার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
রাজনগর উপজেলায় মুসলিম শিক্ষক নেই ৬টি স্কুলে। এগুলো হলো, উত্তর অন্তেহরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুনামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্যটগরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম ভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গবিন্দপুর ও বাউবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওই উপজেলায় হিন্দু শিক্ষক নেই শুধু উত্তর দাস টিলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
জুড়ী উপজেলায় মুসলিম শিক্ষক নেই ২টি স্কুলো। এগুলো হলো, বাছিরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুলাই মোনাঙ্গাবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওই উপজেলায় হিন্দু শিক্ষক নেই ১২টি স্কুলে। এগুলো হলো, টালিয়াভরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দূর্ঘাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিশ্বনাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাটেরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সায়রা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আব্দুল মন্নান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইব্রাহীম আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম বটুলি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিরইন তলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, লাঠিটিলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ গোয়াল বাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
বড়লেখা উপজেলার সবকটি স্কুলে হিন্দু শিক্ষক থাকলেও মুসলিম শিক্ষক নেই, কটালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উত্তরবাগিরপার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সবকটি স্কুলে হিন্দু শিক্ষক থাকলেও মুসলিম শিক্ষক নেই ২০টি স্কুলো। এগুলো হলো, সুইলপুর, খতরপুর, গন্ধর্বপুর, ভামমী, লইয়ারকুল, মনারগাও, বরুনা ফয়জুর, নয়ানশ্রী, উত্তর জিসাদপুর তিতপুর, শ্বাসন, জলিলিরা খামিরা পুঞ্জি, কামাসিদ, রায়পবান, কৃঞ্চরাম, উত্তর পাচডিম, খাকড়িহড়া, প;আলিত্রোন, হাউজিং এক্টেট ও রাজখাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন ধর্মীয় শিক্ষক নেই।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের সাতে কথা হলে তারা বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের ওই প্রতিষ্ঠান গুলোতে ধর্মীয় শিক্ষক নেই। ভিন্ন ধর্মের শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে ইসলাম ধর্ম বিষয়ের পাঠদান করতে গিয়ে একদিকে শিক্ষকরা যেমন বিভ্রত হন অন্যদিকে শিশু বয়সে ধর্মীয় বিষয়ের প্রকৃত শিক্ষাগ্রহণ থেকে ছাত্রছাত্রীরাও বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা একাধিকবার জেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি এ বিষয়ে কোন গুরুত্ব দেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, টাকার বিনিময়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিভিন্ন জায়গায় বদলি করলেও ধর্মী শিক্ষার বিষয়টি সমাধান করার জন্য তিনি কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। একাধিকবার বিষয়টি অবহিত করলেও তিনি এড়িয়ে যান।
জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী আহসান বলেন, এরকম কোন তথ্য আমাদরে কাছে নেই। জেলা অফিস হিসেবে এরকম তথ্য আপনাদের অফিসে থাকার কথা এমন প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, খোজ নিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।
মন্তব্য করুন