প্রবাসীদের টাকায় স্কুলের ভবন নির্মাণ

April 23, 2017,

হোসাইন আহমদ॥ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমনি বহুপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে অনেক এখন প্রাবাসে পাড়ি জমিয়েছেন। ওই স্কুলের সাবেক ছাত্র এবং এলাকার প্রবাসীদের অনুদানে ঝড়াঝীর্ণ স্কুলের তিন তলা ফাউন্ডেশনের ৩০-৯০ বর্গ ফুটের একটি বিল্ডিং ইতি মধ্যে দু’তলা নির্মানাধীন। এর পাশে একটি মসজিদও নির্মাণ করা হচ্ছে।
সরেজমিন ১২ এপ্রিল স্কুলে গেলে কথা হয় প্রধান শিক্ষক এবং ওই স্কুলের সাবেক ছাত্র মৌলুদ আহমদ এর সাথে। তিনি বলেন, ১৫৪ শতক জায়গার উপর ১৯২১ সালে আমাদের স্কুলটি প্রতিষ্টিত হয়। ঝড়াঝীর্ণ একটি টিন শেড ব্যতীত আর কোন বিল্ডি নেই আমাদের। চলতি বছর স্কুলে ৮৫৯ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। তুলনামূলক অন্যান্য প্রতিষ্টান থেকে আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক বেশি। পর্যাপ্ত ক্লাস রুম না থাকায় শীপ্টের মাধ্যমে ক্লাস নিতে হয়। দূর্ভোগ পুহাতে হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।
জানা যায়, ২০১৬ সালে ১জুন দায়িত্ব নেয় নতুন ম্যানেজিং কমিটি। ওই স্কুলের সাবেক ছাত্র ইমদাদুল হক মছনুকে সভাপতি করে ১২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। সভাপতি দায়িত্ব নেয়ার পর স্কুলের কার্যক্রম উন্নত করার লক্ষ্যে এলাকাবাসী ও অভিবাবকদের সাথে একাধিক বৈঠক করে সমস্যা চিহ্নত করেন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ভবনের জন্য আবেদন নিবেদন করে কোন সাড়া না পাওয়ায় এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেরা একটি বিল্ডি তৈরি করবেন। যেমন সিদ্ধান্ত তেমন কাজ। তখন থেকে কমিটির সবাই এলাকার প্রবাসীদের সাথে যোগাযোগ শুরু করে দিলেন। ইতি মধ্যে ৩০-৯০ বর্গ ফুটের তিন তলা বিশিষ্ট একটি ভবণ নির্মাণাধীন। ভবনের এক তলার কাজ সম্পন্ন করে শিক্ষর্থীরা ক্লাস শুরু করে দিয়েছে। ওই ভবন ও মসজিদ নির্মাণ করতে খরচ হবে ৭০ লক্ষ টাকা। সব টাকা আসছে প্রবাসীদের কাছ থেকে। লন্ডন, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানী ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীরা ওই অনুদান দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের আরো দুটি বিল্ডি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এটা শেষ করে অন্যটাতে হাত দিব। স্কুলের অবকাঠামোগত আরও বেশ উন্নয়ন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ব্রেন্স এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভালো রিজাল্টের জন্য এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাহিরে আরও ৫ জন খন্ডকালি শিক্ষক রেখেছি।
এ বিষয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং ওই স্কুলের সাবেক ছাত্র ইমদাদুল হক মছনু এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শহরে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্টান এবং পরিবারের কাজ নিয়ে ব্যস্থ থাকি। সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার আমার নূন্যতম ইচ্ছা ছিলনা। এলাকার মানুষের অনুরোধে এ দায়িত্ব নিয়েছি। স্কুলকে নিজের একটি প্রতিষ্টান মনে করে সাধ্য অনুযায়ী উন্নয়নের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ইতি মধ্যে আমরা একটি ভবন নির্মাণ করেছি এবং উন্নয়নের বাকী কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আমাদের স্কুলকে একটি একাডেমিক ভবন বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের উৎসাহের জন্য আমার বাবার নামে একটি মেধাবৃত্তি প্রকল্প শুরু করেছি। যারা ওই স্কুল থেকে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় এপ্লাস পাবে তাদেরকে ওই প্রকল্প থেকে ১০ হাজার টাকা বৃত্তি দেয়া হয়। এটা ধারাবাহিক অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আগামীতে ওই স্কুলকে আমরা কলেজ লেভেল উন্নত করতে চাই। এজন্য এখন থেকে এই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। তিনি বলেন, স্কুলের সেবা করে জীবনের বাকী সময়টুকু কাটাতে চাই।
স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু সুফিয়ান বলেন, এটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। আমাদের সময়ের চেয়ে স্কুলের লেখাপড়ার মান অনেক উন্নত হয়েছে। এধারা অব্যাহত থাকলে স্কুলটি জেলার মধ্যে অন্যতম স্কুলে পরিণত হবে।
ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, সাধারণ শিক্ষক সদস্য রবীন্দ্র কুমার সরকার, মোঃ নুরুল ইসলাম, সংরক্ষিত মহিলা শিক্ষক সদস্য ফাতেমা জোহরা খাতুন, অভিবাবক সদস্য মোঃ মাহবুব আলম, মোঃ আলাল আহমদ, মোঃ খালিছুর রহমান, মোতাহের মিয়া, মহিলা সদস্য কৃঞ্চ রাণী দেব, দাতা সদস্য মসলু আহমেদ, শিক্ষানুরাগী সদস্য মগনুজ্জামান ও সদস্য সচিব প্রধান শিক্ষক মৌলুদ আহমদ।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com