প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গনে এক স্বপ্নের ফেরিওয়ালা কুলাউড়ার শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শরীফ উল ইসলাম
কুলাউড়া অফিস : আমার স্বপ্ন আমার স্কুল নামে কুলাউড়া উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গনে একটি প্রকল্প চালু করেছেন। সেই প্রকল্পে রয়েছে রঙ্গিণ স্কুল, শহীদ মিনার, শতভাগ মিড ডে মিল, শতভাগ উপস্থিতি, শিশু শ্রেণিকক্ষ সজ্জিতকরণসহ নানা ব্যতিক্রমীসব উদ্যোগ। এর প্রয়োগের ফলে ইতোমধ্যে তিনি সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ট শিক্ষা অফিসার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। গৃহীত প্রসংশনীয় উদ্যোগের কারণেই তিনি সকল মহলে প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন। কুলাউড়া উপজেলা প্রাথমিক অফিসসুত্র জানায়, শিক্ষা অফিসার মোঃ শরীফ উল ইসলাম এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকে সামগ্রিক শিক্ষার পরিবর্তণের প্রতি মনযোগ দেন। তাঁর সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে কুলাউড়া উপজেলায় ২৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে রঙ্গিন করে সাজানো হয়। এরপর শিশুদেরকে স্কুলমুখী করতে শিশু শ্রেণিকক্ষকে সাজানো হয় বাহারি খেলনা আর রঙ্গের সমন্বয়ে। বিদ্যালয়ে শতভাগ শিশু ভর্তি আর উপস্থিতির ক্ষেত্রে এক নতুন ও ইতিবাচক সাড়া পড়ে। এদিকে ঝরেপড়া রোধ ও শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে মিড ডে মিল চালু করা হয়। মিড ডে মিল চালু করতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন জাতীয় দিবসে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয় শুধু টিফিন বক্স। এতে করে টিফিন বক্স কেনার ঝামেলামুক্ত হন অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। মিড ডে মিল চালু করতে কোন দানশীল ব্যক্তির কাছ থেকে অনুদান নিতে হয়নি। শিক্ষার্থীরাই যার যার বাড়ি থেকে টিফিন ভর্তি খাবার নিয়ে আসে। যাদের সাধ্য বেশি তারা অতিরিক্ত খাবার নিয়ে আসে। এসে যে আনতে পারেনা তার সাথে ভাগাভাগি করে খায়। এভাবে কুলাউড়া উপজেলায় ৫০ভাগ স্কুলে মিড ডে মিল চালু হয়েছে। রঙ্গিন স্কুল ভবনের সামনে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের সম্মানে নির্মিত হচ্ছে শহীদ মিনার। এসব শহীদ মিনার স্থাপনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভাষা শহীদদের স্মরণের পাশাপাশি জাতীয় দিবসে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করা। ইতোমধ্যে ৩০টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বররের মধ্যে এর সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে যেসব স্কুলে শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছে তারমধ্যে চুনঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জয়নাল আবেদীন, হিঙ্গাজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রজত কান্তি দেব, আমীর ছলফু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ মোঃ শফিকুর রহমান সিদ্দিকী ও নলডরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়েশা বেগম জানান, শিক্ষক শিক্ষিকা, পরিচালনা কমিটি ও এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের সহায়তা ও আন্তরিকতায় এই শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়। শহীদ মিনার স্থাপনে এখন অনেক প্রবাসীরাও এগিয়ে আসছেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের এধরনের ক্রিয়াশীল উদ্যোগকে বাস্তবায়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকবৃন্দ এমনকি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন। বর্তমানে তারা সম্মিলিতিভাবে শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছেন। উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসারগণ, ঝরেপড়া রোধ ও শিক্ষার মান উন্নয়নে আন্তরিকতার সাথে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৪জন সহকারি শিক্ষা অফিসাররা প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলার সবক’টি বিদ্যালয় চষে বেড়ান। তাছাড়া বিদ্যালয় পরিদর্শণে গিয়ে শিক্ষা অফিসার নিজে ক্লাস নেন এবং যাচাই করে ক্লাসের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান। শিক্ষা অফিসারের এসব ক্রিয়াশীল উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা প্রচেষ্টা’র উদ্যোগে এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের অর্থায়নে ‘একিভূত শিক্ষা’ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে ও ঝরে পড়া রোধে ১৫টি স্কুলে কাজ চলছে। এই প্রকল্পেরও সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। কুলাউড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শরীফ উল ইসলাম জানান, আমি প্রজেক্টের নাম দিয়েছি ‘আমার স্বপ্ন আমার স্কুল’। এটি একটি নমনীয় প্রজেক্ট। এখানে আমাদের নিজস্ব কিছু উপাদান আছে। যেমন শহিদ মিনার, প্রাক প্রাথমিক কক্ষ সজ্জিতকরণ, ক্লাসরুম দেয়ালিকা, মিড ডে মিল, স্মাইলি, সেরা মা নির্বাচন, মা নম্বর ওয়ান ইত্যাদি। এখানে কিছু ভালো ভালো উপাদান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া হয়েছে। সরকারিও বেসরকারি সংস্থার সম্মিলিত প্রয়াসেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
মন্তব্য করুন