বড়লেখা থানা পুলিশের অভিযানে আন্তঃজেলা গরু চোর চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার: ৩ গরু উদ্ধার

July 27, 2024,

আব্দুর রব॥ বড়লেখায় চুরি হওয়া তিনটি গরু উদ্ধারসহ আন্তঃজেলা গরু চোর চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দিবাগত রাতে সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ৫ চোরই চুরির ঘটনার সাথে তাদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

এরমধ্যে ৪ জন শনিবার ২৭ জুলাই বিকেলে ও একজন গত শুক্রবার বিকেলে জবানবন্দি দিয়েছে। বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জিয়াউল হকের আদালতে তারা এই জবানবন্দি প্রদান করে। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- নবীগঞ্জ উপজেলার ছালামতপুর গ্রামের আব্দুল খালিক মিয়ার ছেলে মো. তাজুল ইসলাম (৩৩), একই গ্রামের জজ উল্লার ছেলে মুহিব মিয়া (৩২), ছোট শাকুয়া গ্রামের আছির মিয়ার ছেলে আলিম উদ্দিন (৩০), পূর্ব পাইকপাড়া গ্রামের আব্দুল মনাফ বাবুর্চীর ছেলে জসিম উদ্দিন (২২) ও ছালামতপুর গ্রামের হবিব উল্লার ছেলে সাহেদ আহমদ (২৬)।

পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ২৫ জুলাই ভোররাতের দিকে বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের গাংকুল গ্রামের রাছনা বেগমের বাড়ির গোয়ালঘর থেকে ৩টি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। সকালে ঘুম থেকে উঠতে গিয়ে বাড়ির লোকজন বুঝতে পারেন তাদের ঘরের দরজা বাহির দিক থেকে বন্ধ করা। পরে তারা দরজা ভেঙে ঘর থেকে বের হয়ে দেখতে পান গোয়ালঘরে রাখা ৬টি গরুর মধ্যে ৩টি গরু নেই। এরপর স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে না পেয়ে ওইদিন (বৃহস্পতিবার) বিকেলে বড়লেখা থানায় অজ্ঞাতনামা চোরদের আসামি করে একটি মামলা করেন রাছনা বেগম। মামলার পরপরই বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্ত্তীর নির্দেশনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান ও সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) উস্তার মিয়াসহ একদল পুলিশ সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করেন। ওইদিন দিবাগত রাতে (২৫ জুলাই) ফেঞ্চুগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাজুল ইসলাম (৩৩), সাহেদ আহমদ (২৬) ও জসিম উদ্দিন (২২) নামের তিন চোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেখানোমতে চুরি যাওয়া ৩টি গরু উদ্ধার করা হয়। পরদিন ২৬ জুলাই বিকেলে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে জসিম উদ্দিন বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জিয়াউল হকের আদালতে স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দি প্রাদন করে। অন্যদিকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার তাজুল ইসলাম (৩৩) ও সাহেদ আহমদ (২৬) চুরির ঘটনায় জড়িত কয়েকজন সহযোগীর নাম বলে। পরে পুলিশ তাদের দেওয়া তথ্যমতে গত ২৬ জুলাই দিবাগত রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানার সহযোগিতায় মুহিব মিয়া (৩২) ও আলিম উদ্দিন (৩০) নামের আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করে।

বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী শনিবার বিকেলে বলেন, চুরির ঘটনাটি সম্পূর্ণ ক্লু-লেস। মামলার পরপরই তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ একটি চৌকস টিমকে অভিযানে পাঠাই। চুরির আনুমানিক প্রায় ৪৮ ঘটনার মধ্যেই ঘটনায় জড়িত পুরো টিমকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চুরি যাওয়া ৩টি গরু উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তঃজেলা গরু চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য। গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জনই চুরি ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ওসি আরও বলেন, তাদের (গ্রেপ্তার হওয়া চোর) নামে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা এবং সাজাসহ গ্রেপ্তারী পরোয়ানাও রয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে গত ২৫ জুলাই বড়লেখার শাহবাজপুরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য এবং স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতায় ভারত থেকে চোরাই পথে আনা ২টি গরু উদ্ধার এবং এর সাথে জড়িত চেরাগ আলী (৫০) নামের এক চোরকে গ্রেপ্তার করেছে শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ। এ ঘটনায় তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক নব গোপাল দাশ বাদী হয়ে বড়লেখা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেছেন। মামলার আসামিরা হচ্ছে- উপজেলা পাতন গ্রামের চেরাগ আলী (৫০), দৌলতপুর গ্রামের হান্নাই (৪৫), সায়পুর গ্রামের আবুল হোসেন (৪৫)।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com