বড়লেখায় ভু-সম্পত্তি দখল করেও ক্ষান্ত নয় আশ্রিতরা!

February 18, 2021,

আব্দুর রব॥ আত্মীয়তার সুবাদে বাড়িতে জায়গা দেয়া হয়েছিল। বহু বছর এভাবে কেটেছে। প্রায় তিন দশক আগে কৌশলে বাড়ির জায়গা নিজের নামে রেকর্ড করিয়ে নেন চতুর আশ্রিতরা। বিষয়টি জানাজানির পর সৃষ্টি হয় বিরোধ। স্থানীয়ভাবে আপোষ নিষ্পত্তির চেষ্টা করেও মেলেনি সমাধান। বিরোধ শেষ পর্যন্ত গড়ায় সংঘর্ষে। এরপর হয় পাল্টাপাল্টি মামলা। আত্মীয়ের সম্পদ সুকৌশলে নিজের নামে রেকর্ডভুক্ত করার ঘটনাটি ঘটেছে বড়লেখা পৌরসভার মুড়িরগুল এলাকায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার মুড়িরগুল গ্রামের আব্দুল লতিফ তার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় আব্দুর রশিদকে বাড়িতে আশ্রয় দেন। কিন্তু আব্দুল লতিফ ব্যবসায়ীক কাজে অন্যত্র থাকায় আত্মীয় আব্দুর রশিদ কৌশলে বিগত মাঠ জরিপে (আরএস রেকর্ডে) মুড়িরগুল মৌজার জেএল নম্বর-৯৫, খতিয়ান নম্বর-৬৯, এসএ দাগ নম্বর-১৬৩, আরএস দাগ নম্বর-১৭২ এর ৮ শতাংশ ভুমি নিজের নামে অন্তর্ভূক্ত করে নেন। ঘটনাটি ধরা পড়ে ২০০৬ সালের দিকে। এরপর বিষয়টি নিয়ে উভয়ের সন্তানদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয়ভাবে একাধিক সালিশ হলেও এর কোনো সমাধান হয়নি। পরবর্তীতে আব্দুল লতিফের ছেলে আবুল কালাম আব্দুর রশিদের ছেলে ইসলাম উদ্দিন গংদের দখলীয় ৫ শতাংশ জমির ওপর ২০১৮ সালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৪ ধারা মামলা করেন (নং-৬৩/১৮)। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জায়গার ওপর স্থিতাবস্তা জারি করেন। পরে রেকর্ড সংশোধনের জন্য ২০১৯ সালে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুন্যাল মৌলভীবাজারে আবুল কালাম বাদী হয়ে আব্দুর রশিদের উত্তরাধিকারী ইসলাম উদ্দিন গংদের বিরুদ্ধে মামলা করেন (নং-৮০৬/২০১৯)। আশ্রিত হয়ে কৌশলে প্রকৃত মালিকের জায়গা নিজেদের নামে রেকর্ড করেও ক্ষান্ত হয়নি ইসলাম উদ্দিন গংরা। উল্টো তারা আবুল কালাম গংদের নানাভাবে হয়রানি ও মামলা তুলে নেয়ার হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। হুমকির ঘটনায় আবুল কালাম বড়লেখা থানায় জিডি করেন (নং-৮০২/২০)। এরপর গত বছরের মে মাসে ইসলাম উদ্দিন গংরা আবুল কালামের পরিবারের ওপর হামলা করেন। এ ঘটনায় কালামের ভাগ্না শফিকুল ইসলাম বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন (সিআর-১৬৩/২০)। আদালতের নির্দেশে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন বড়লেখার সহকারী কমিশনার (ভূমি)। তবে বিষয়টির স্থায়ী নিষ্পত্তি না হওয়ায় গত বছরের ১২ ডিসেম্বর নিজেদের জায়গায় গাছের ডাল কাটতে গেলে ইসলাম উদ্দিন গংরা আবারো হামলা করে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আবুল কালামসহ উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় আবুল কালামের ভাগ্না শফিকুল ইসলাম বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরেকটি মামলা করেন (সিআর-২৫৩/২০)। অপরদিকে এ মামলার পর ইসলাম উদ্দিন গংরা থানায় আবুল কালামসহ ৪জনের নাম উল্লেখ ও ২/৩ জনকে অজ্ঞাতনামা করে একটি মামলা করেন। ঘটনাস্থলে না থাকলেও দক্ষিণভাগ গ্রামের কামরুল ইসলামকেও মামলায় আসামি করা হয়। এ ঘটনাটির সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ তদন্তের জন্য ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম গত ৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।
ভুক্তভোগী আবুল কালাম জানান, ‘আমার দাদীর দূর সম্পর্কের আত্মীয় ইসলাম উদ্দিনের বাবা। তাদের কোনো বাড়ি-ঘর ও জমি না থাকায় আমাদের বাড়িতে আশ্রয় দেন আমার বাবা। কিন্তু আমার বাবা লেখাপড়া কম জানায় ইসলাম উদ্দিনের পিতা কৌশলে আমাদের জায়গা তাদের নামে রেকর্ডভুক্ত করে নেন। বিষয়টি ধরা পড়লে এলাকায় অনেক বিচার-বৈঠক হয়। কিন্তু কোনো সমাধান না হওয়ায় আমরা রেকর্ড সংশোধনের মামলা করি। মামলা করায় ইসলাম উদ্দিনরা আমাদের নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। কয়েক দফায় হামলাও করেন। সর্বশেষ আমাদের জায়গায় গাছের ডাল কাটতে গেলে ইসলাম উদ্দিন গংরা হামলা চালায়। আমরা আদালতে মামলা করি। পরে তারা উল্টো আমাদের হয়রানি করার জন্য থানায় মিথ্যা মামলা করে। আমরা ন্যায় বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছি।’
অভিযুক্ত ইসলাম উদ্দিন জানান, ‘আমাদের নামে ৮ শতক জমি রেকর্ড ও প্রিন্ট পর্চা রয়েছে। কিন্তু এটা সঠিক যে, দলিল নেই। এলাকায় বিচার বৈঠক হলে মুরব্বিরা সিদ্ধান্ত দেন এ জায়গার সম্পূর্ণ মালিক আমার চাচা। এ ৮ শতকে থাকতে হলে আমাদের মূল্য দিতে হবে। মূল্যবাবত সাড়ে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ হয়। আমরা টাকা যোগাড় করে ২০১৬ সালে এ ভুমি রেজিষ্ট্ররি করতে যাই। তখন তারা যাননি। এছাড়া দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলা হচ্ছে এটা সঠিক নয়। আবুল কালাম আমার আপন চাচাতো ভাই। তারা কৌশলে আমাদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে এলাকায় প্রচার করেছেন আমরা তাদের আপন কেউ নয়।’

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com