মৌলভীবাজার এনডিএফ’র কমঃ আবদুল হক ও কমঃ হেমন্ত সরকার-এর মৃত্যুবার্ষিকী পালন
স্টাফ রিপোর্টার॥ উপমহাদেশের প্রখ্যাত কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা কমরেড আবদুল হক-এর ২১-তম মৃত্যুবার্ষিকী এবং ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেতা কমরেড হেমন্ত সরকার-এর ১৮-তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন কমরেড আবদুল হক ও কমরেড হেমন্ত সরকার আমৃত্যু শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ-আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজি বিরোধী লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন। তাদের তাদের দেখিয়ে দেওয়া পথে এই সংগ্রাম এখনও চলছে। এনডিএফ জেলা কমিটির সভাপতি শহীদ সাগ্নিকের সভাপতিত্বে ২৮ ডিসেম্বর বধুবার সন্ধ্যায় শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা এনডিএফ’র সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, ধ্রবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ ২৩০৫ এর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং ২৪৫৩-এর সভাপতি সোহেল আহমেদ প্রমূখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সকল দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে বলেন সমগ্র পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় এক গভীর ও সামগ্রিক সংকট, দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বৃহত্তম ও গভীরতম অর্থনৈতিক সংকট ও মন্দা আঁকাবাঁকা গতিপথে ৯ম বছরে পড়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়ে মহামন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। পুঁজি ও শক্তির অনুপাতে বাজার ও প্রভাববলয় পুণর্বন্টনকে কেন্দ্র করে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, মুদ্রাযুদ্ধ, স্থানীয় ও আঞ্চলিক যুদ্ধ বিস্তৃত হয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদ বৃদ্ধি করে চলছে। সাম্রাজ্যবাদীরা সংকটের বোঝা বিশ্ব শ্রমিকশ্রেণি, নিপীড়িত জাতি ও জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ায় দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম, বিদ্রোহ-বিপ্লব তথা বিশ্ববিপ্লবের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে চলেছে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়ছে জাতীয় ক্ষেত্রে। বাজার ও প্রভাববলয় পুণর্বন্টন প্রশ্নে আন্তসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে বাংলাদেশসহ এতদাঞ্চলকে নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থল সংযোগ সেতু এবং প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের সংযোগকারী মালাক্কা প্রণালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যেমন তার প্রাধান্য অব্যাহত রাখতে চায় তেমনই সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া ও পুঁজিবাদী চীন তাদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সাম্রাজ্যবাদীরা স্বীয় স্বার্থে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এর ঐতিহাসিক দায়িত্ব হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ ও আমলা-দালাল পুঁজির শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে শাণিত করে সাম্রাজ্যবাদী অন্যায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সকল শক্তি ও ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলা। তাহলেই কেবল কমরেড আবদুল হক ও কমরেড হেমন্ত সরকারের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদস সম্ভব হবে। উল্লেখ্য ১৯৯৫ সালের ২২ ডিসেম্বর ৭৫ বছর বয়সে কমরেড আবদুল হক এবং ১৯৯৮ সালের ২৮ ডিসম্বের ৮২ বছর বয়সে মহান এই দুইনেতা আত্মগোপনে থেকে মৃত্যুবরণ করেন।
সভা থেকে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ ও রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও সংস্থা সমূহের সাথে সম্পাদিত জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিল, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ, শ্রমিক-কর্মচারিদের জন্য বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে মজুরি নির্ধারণ ও গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন, ভূমিহীন দরিদ্র কৃষকের হাতে জমি ও কাজ, কৃষি উৎপাদনের খরচ কমানো এবং ফসলের ন্যায্যমূল্য, সার, ডিজেল. কীটনাশকের দাম কমানোর দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন