রাবার বাগানে শুকনো পাতার মর্মর শব্দ মনে দোলা লাগে

February 10, 2019,

তোফায়েল পাপ্পু॥  “ও ঝরা পাতা ও ঝরা পাতাগো, তোমার সাথে আমার রাত পোহানো কথাগো তোমার সাথে আমার দিন কাটানো কথা।”

কবি আবুল হাসানের এই কবিতা ও জলের গান যেন বাস্তবে কথাই বলেছে। ঝিরঝিরে বাতাসে ঝরা পাতার কাব্য মনে দোলা দেয়।

পায়ে পায়ে মাড়িয়ে গেলে মর্মর ধ্বনি ওঠে। গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ার দৃশ্য বিষন্ন করলেও এক ধরনের মায়ায় ডুবিয়ে দেয়। নিয়ে যায় অন্য এক ভুবনে। শুকনো পাতার র্মমর শব্দ মনে দোলা লাগে। বসন্তের আগমনে হঠাৎ করেই চোখে পড়লো, কঙ্কালসার গাছে সবুজের কুঁড়ি। দেখতে দেখতে স্বগর্বে বেরিয়ে আসতে শুরু করবে কয়েকটা দিন পরেই। গাছগুলো ভরে উঠতে শুরু করবে সবুজ পাতায়।

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যে ভরপুর দেশের চা বাগান অধ্যুষিত এলাকা মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল। শুধু চায়ের জন্য বিখ্যাত শ্রীমঙ্গল’ তা নয় পর্যটন খাতেও বেশ সুনাম রয়েছে। প্রকৃতিতে শীতকাল বিদায়ের জন্য প্রস্তুতি   চলছে। আসছে বসন্তকাল। প্রতি বছরই এই সময়টাতে শ্রীমঙ্গলের রাবার বাগানগুলোর গাছের পাতা ঝড়ে পরে মাটিতে নকশার মতো পরে থাকে। আর গাছে শুধু থাকে ডালপালা। গাছগুলো মরা গাছের মতোই দাড়িঁয়ে থাকে। এখানকার অন্যান্য পর্যটক স্থানগুলোতে যেভাবে এই সময়টাতে ভীড় জমে থাকে এর চেয়েও বেশী এই সময় রাবার বাগানগুলোতে ভীড় জমান পর্যটকরা। ছবি তুলতে মেতে উঠেন তারা।

রাবার বাগানগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় যেনো আগুন লাগিয়ে পুরানো হয়েছে। বাগানে প্রবেশ করেলে শুকনা ঝড়া পাতার মর্মর শব্দ মন ব্যাকুল হয়ে যায়। হাটার সাথে সাথে ছন্দের মতো মনে হয়।

শনিবার বিকেলে শ্রীমঙ্গলের বেশ কয়েকটি রাবার বাগানে ঘুরতে গেলে লক্ষ্য করা যায় রাস্তার পাশে গাড়ি দাড়ঁ করিয়ে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা বাগানের ভিতরে প্রবেশ করে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মনে হচ্ছিল যেনো এই অপার সৌন্দর্য্য দেখে তারা বাহিরের দেশে কোথাও এসেছে। আর রাবার বাগানগুলো দৃশ্য সত্যিই যেনো মনে হচ্ছিলো যুক্তরাষ্ট্য বা ইউরোপের কোন একটি দেশ।

সারি সারি গাছ একেক দিকে একেক রকম লাগে। দু’চুখ জোড়ানোর মতো দৃশ্য। রাবার বাগানে ছবি তুলার সময় কথা হয় মো: ইউসুফ আলীর সাথে তিনি বলেন শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে এসে অনেক জায়গা ঘুরেছি কিন্তু  রাবার বাগানে এরকম অপরুপ দৃশ্য দেখে সত্যিই বিষ্মৃত। তিনি বলেন বাহিরের কোন এক দেশে এসেছি মনে হয়। বিটিআরআই চা বাগান সংলগ্নে রাবার বাগানের পাশে রাস্তার পাশে দেখা গেলো কয়েকটি গাড়ি দাড় করানো। এখানে গিয়েও দেখা যায় অনেক দর্শনার্থীরা ছবি তুলছেন। কেউ কেউ সেল্পি নিচ্ছেন। আর হৈ হুল্লুল করছেন। ছোট, বড় লোকদের সাথে শিশুরাও দেখা যায়। এখানে কথা হয় মোনালিসা নামের এক ভদ্র মহিলার সাথে তিনি বলেন সত্যি অপূর্ব এক দৃশ্য। সারি সারি গাছের নিচে শুকনো পাতা ঝড়ে পড়ে আছে। আর গাছগুলো সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছে। পাতার মর্মর মর্মর শব্দগুলো সত্যি মন কাড়ার মতো। আমাদের পরিবার নিয়ে এসেছি এখানে বেড়াতে। হঠাত চোখে পড়ল এরকম এক দৃশ্য। তাই গাড়ি থেকে নেমে ছবি তুলছি। ষ্মৃতি করে রাখব। ছবি দেখলে মনে হবে যে শ্রমঙ্গল বেড়াতে গিয়ে রাবার বাগানে ছবি তুলেছি।

এসময় স্থানীয় বিক্রমজিৎ বর্ধনের সাথে দেখা হলে তিনি বলেন প্রতি বছরই ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই এই এলাকার প্রত্যেকটি রাবার বাগানের চিত্র বদলে যায়। গাছের পাতা ঝড়ে পরে মাটিতে। আর গাছগুলো মৃত’র মতো দাড়িঁয়ে থাকে। প্রতিদিন স্থানীয় শহরের লোকজনের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকরা এই রাবার বাগানের সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন।

রাবার বাগানের সবচেয়ে মনোমুগ্ধগর দৃশ্য দেখতে হলে বিকেল বেলাই সবচেয়ে ভালো। বিকেল শেষে যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে শুরু করে তখন পশ্চিম দিকে সূর্য অস্ত যায় সে দৃশ্য আরও অতি সুন্দর। ছবি তোলার জন্য একদম পরিপক্ক সময়।

 

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com