লাইলাতুল বরাত: কী করবো কী করবো না

May 21, 2016,

এহসান বিন মুজাহির॥ রাসুলের (সা.) ভাষায় লাইলাতুল বরাত ‘লাইলাতুন নিসফী মিন শাবান’। অর্থাৎ শাবান মাসের ১৫তম রজনী। হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক-বিদ্বেষী লোক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হা. ৫৬৬৫, আল মু’জামুল কাবীর ২০/১০৯, শুআবুল ইমান, হদিস নং. ৬৬২৮)
হযরত আসিম ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবি বকর তাঁর পিতার সনদে দাদা হযরত আবুবকর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল সা. ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা শাবানের ১৫তম রাত্রে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং সকল পাপীকে (যারা ক্ষমা প্রার্থনা করে) ক্ষমা করে দেন। তবে’ মুশরিক’ (আল্লাহর সাথে সমকক্ষ সাব্যস্তকারী) ও ‘মুশহিন’ (হিংসুক) ব্যতীত। (-বায়হাকি ফি শুয়াবিল ঈমান হা. ৩৮৩৫)
হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.), আবু সালাম আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা), আবু মুসা আশআরী (রা.) আবু হুরায়রা (রা.), আবুবকর (রা.),আউফ ইবনে মালিক (রা.) ও হজরত আয়েশা (রা) সকলেই এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। হাদিসবিশারদগণ উক্ত হাদিসের রাবীদেরকে ছেক্বাহ তথা বিশ্বস্ত বলেছেন। মূল কথা হাদিসটি ‘সহীহ’। (-সহী ইবনে হিব্বান, আত তারগীব ওয়াত তারহীব ২ খন্ড:পৃঃ ১১৮, মাজমাউল ফাওয়ায়ীদ খন্ড ৮,পৃ. ৬৫, মুসনাদে বাযযার,খন্ড ৮.পৃ. ৬৭)
করণীয়:
হজরত আলী (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ১৫ শাবানের রাত যখন হয়, তোমরা রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে পালন করো এবং দিনের বেলা রোজা রাখো। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে এসে বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিক অন্বেষণকারী আছে কি? আমি তাকে রিজিক প্রদান করব। আছে কি কোনো রোগাক্রান্ত? আমি তাকে আরোগ্য দান করব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে তাদের ডাকতে থাকেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হা. ১৩৮৮)।
সারারাত জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগী করত: পরদিন অর্থাৎ ১৫তম দিনে নফল রোজা রাখার চেষ্টা করা। তবে বাধ্যতামুলক নয়। এই রোজা মুস্তাহাব। নিজের যাবতীয় গোনাহের জন্য তাওবাহ করে রাব্বুল আলামিনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। নিজের মনের নেক আশা-আকাঙ্খা পূরণের জন্য ও মৃতদের মাগফিরাতের জন্য বেশী বেশী করে দোয়া করা। নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আযকার, দোয়া-দুরুদ, তাওবাহ-ইসতিগফার, দান-সদকা, উমরি ক্বাযা নামাজ, কবর জিয়ারতসহ ইত্যাদি নফল আমলের মাধ্যমে রাতগুজার করা। তবে মাকবারে তথা কবরে যাওয়া জররী নয়। কবর জিয়ারতকে রুসম বা রেওয়াজ পরিণত করা যাবে না। কারণ রাসুল (সা.) চুপিসারে একাকী জান্নাতুল বাকিতে কবর জিয়ারত করেছেন। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-কে নিদ্রা থেকে জাগ্রত করেননি এবং পরবর্তীতেও কবর জিয়ারত করার কথা বলেননি। তবে দলবদ্ধ ছাড়া একাকীভাবে কবর জিয়ারতে কোন বাধা নেই। আনুষ্ঠানিকতা ও জামাত ছাড়া একাকীভাবে সামর্থ্যানুযায়ী নফল ইবাদত-বন্দেগী করা। মসজিদে গিয়ে সমবেতভাবে ইবাদতের জরুরত নেই। যে সকল ইবাদত নামাজ জামাতে ও সমবেতভাবে আদায় করার প্রচলন রাসুল থেকে প্রমাণিত রয়েছে তা জামাতে আদায় করা। বাকীগুলো একাকীভাবে করা। আল্লাহ তায়ালা নফল ইবাদতকে একাকিত্বে আদায় করাই বেশি ভালবাসেন। ইখলাছের সাথে স্বল্প আমল ঐকান্তিকতাহীন অধিক আমল থেকে উত্তম।
বর্জণীয়: শবে বরাতের আলাদা কোন নামাজ তথা নির্দিষ্ট সুরা দিয়ে নির্দিষ্ট রাকাত পড়ার রেওয়াজ ইসলামে নেই। শবে বরাত উপলক্ষে হালওয়া রুটি, তাবারুকের আয়োজন, রাতে মসজিদে অতিরিক্ত আলোকসজ্জ্বা করা, মরিচলাইট, তারাবাতি, আধুনিক নয়ানাভিরাম বর্ণিল বাতির ঝাড়ে দিগদিগন্ত পল্লাবিত করা, আগরবাতি, মোমবাতি, গোলাপজল পটকা, আতশাজি, রাস্তা-হাটবাজারে যুবকদের আড্ডা, অশূচি প্রতোযোগীতা এসকল কাজ নিন্দনীয়। এসকল কাজের কোন ভিত্তি শরীয়তে নেই। এগুলো অবশ্যই বর্জনীয়।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com