শ্রীমঙ্গলে অর্ধশত কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষক-কর্মচারিদের মানবেতর জীবনযাপন

November 2, 2020,

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ শ্রীমঙ্গলে করোনা ভাইরাসের কারণে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় বন্ধ রয়েছে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোও। ৭ মাস ধরে কিন্ডারগার্টেনগুলো স্কুল বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৬ শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারি। সেইসাথে বন্ধ রয়েছে তাদের মাসিক বেতনও। আর্থিক অনটনের কারণে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ওইসব শিক্ষকসহ কর্মচারিদের দুর্ভোগ লাঘবে কেউ এগিয়ে না আসায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। এদিকে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় স্কুল ভাড়া যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা। এতে করে ব্যক্তি মালিকানাধীন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস ও কিন্ডারগার্টেন সংগঠন সুত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশ’র মতো কিন্ডারগার্টেন স্কুলে সাড়ে ৬ শতাধিক স্থানীয় তরুণ-তরুণী শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তারা ওই সব স্কুলগুলোতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। মূলত ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায় পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে শিক্ষকদের বেতন যত সামান্য হলে ও মূলত তাদের প্রাইভেট টিউশনি প্রধান ভরসা ছিল।  কিন্তু করোনার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের  বেতন যেমন বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে তাদের প্রাইভেট টিউশনও। বর্তমানে শিক্ষকরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় আর্থিক অনটনে অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তবে তারা যে এক কঠিন অবস্থায় পারছেন মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতেও পারছেন না।

ছুটি আরও দীর্ঘ হলে শ্রীমঙ্গলে ভাড়া বাসায় পরিচালিত অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন দি এক্সপার্ট কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান। তিনি জানান ৭ মাস যাবত স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুল ভাড়া, শিক্ষক কর্মচারির বেতনসহ অন্যান্য খরচ প্রায় ৩ লক্ষাধিক বকেয়া রয়েছে। একদিকে ভাড়ার জন্য মালিক চাপ দিচ্ছেন, অন্যদিকে শিক্ষকদের দুর্ভোগের বিষয়টি নিয়ে বড় দুশ্চিন্তা! চলতি মাসে স্কুল খুলে দেয়া না হলে স্কুল রক্ষা করা দুরূ ব্যাপার হয়ে যাবে।

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক ঐক্য পরিষদ শ্রীমঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ জানান-গত ১৬ মার্চ থেকে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো ফি আদায় করতে পারিনি, শিক্ষক কর্মচারির বেতন পরিশোধ করতে পারিনি! পরিবার পরিজন নিয়ে  সংসার পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছি। তাই দ্রুত স্কুল খুলে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।

শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাংবাদিক ও শিক্ষানুরাগী ইসমাইল মাহমুদ জানান-সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ১৬ মার্চ  থেকে স্কুল বন্ধ দেয়া হয়। আজ অবধি বন্ধই রয়েছে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার কারণে মাসের পর স্কুল ভাড়া, শিক্ষক কর্মকর্তা, কর্মচারির বেতন, বিদ্যু গ্যাস বিল বাবত ৪ লক্ষ ২০ হজার টাকা ঘাটতি হয়েছে। এসব ঘাটতি স্কুল খুলার পরও পূরণ করা সম্ভব হবে না! অভিভাবকরা বেতন দিচ্ছেন না, পরিচালকরাও এ কঠিন দুভোর্গে শিক্ষকদেরপ্রতি এগিয়ে আসছেন না, এমতাবস্থায় শিক্ষকদেও আর্থিক সংকট নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তা খুব জরুরি। পাশাপাশি কঠোর শর্তসাপেক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খুলে দেয়া দরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি যত দীর্ঘ হবে শিক্ষকরা বেকার হবেন, শিক্ষার্থীরা ঝরে পরবে।এছাড়া বহু বিন্ডারগার্টেন স্কুল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের জন্য খাদ্য সহায়তা এগিয়ে এলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর একাধিক নেতৃবৃন্দ। তাঁরা সরকারের কাছে শিক্ষকদের আর্থিক দুর্দশা লাঘবে আর্থিক সহায়তা, সহজ শর্তে ব্যাংক লোন এবং স্কুল দ্রুত খুলে দেয়ার দাবি জানান।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com