শ্রীমঙ্গলে আইন অমান্য করে কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রি, উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষিজমি

এহসান বিন মুজাহির : শ্রীমঙ্গল উপজেলায় কৃষি পণ্য উৎপাদনে সুনাম থাকলেও প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুম এলেই ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার হিড়িক পড়ে যায়। পরিবেশ আইনে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছেন না অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা। তিন ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করার ফলে উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষিজমি, ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ। হুমকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। অন্যদিকে ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। এ ছাড়া মাটি বোঝাই ভারী ট্রাক ও ট্রাক্টর চলার কারণে ধ্বংস করা হচ্ছে গ্রামীণ এলাকার কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট এবং ব্রিজ। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও, ভুনবীর, মির্জাপুর, আশিদ্রোন এবং সিন্দুরখান ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। এভাবে মাটি কেটে নেয়ার কারণে যেমন ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে এলাকার ঘরবাড়ি, ব্রিজ, রাস্তাঘাট। তেমনি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন উপজেলাবাসী।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় বেশিরভাগ জমিই তিন ফসলি। এখানে ধান, আলু, ভুট্টা, ধনিয়া, কাকরোলসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয়। মাটিকেটে বিক্রি করার ফলে দিন দিন কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাটির ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা করলেও ব্যবসায়ীরা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে ভিন্ন পথ অবলম্বন করেছেন। ব্যবসায়ীরা দিনে বা রাতে সময় পেলেই ফসলি জমির মাটি কেটে বিভিন্ন স্থানে এসব মাটি বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় কিছু মাটি ব্যবসায়ী প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত মাটির ব্যবসা করেন। তারা কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে জমির এক থেকে দেড় ফুট মাটি কিনে নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন। এলাকাবাসী জানান, মাটির টপ সয়েল কেটে নেয়ার ফলে কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে নালা অথবা জলকড়া জমিতে পরিণত হচ্ছে। নির্বিচারে যেভাবে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে, তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ফসলি জমি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে, হ্রাস পাবে ফসল উৎপাদন।
বাংলাদেশ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের (বাপা) জাতীয় পরিষদের সদস্য আ.স.ম সালেহ সোহেল বলেন, প্রতি বছর টপসয়েল কেটে বিক্রির কারণে কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি ঘরবাড়ি ও গাছপালার ভীত দুর্বল হয়ে পড়ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট। ধূলাবালিতে সয়লাভ মানুষের বসতবাড়ি। নেতিবাচক এসব কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন বলেন, কৃষি জমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই মাটি কাটার ফলে কৃষকরা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সম্মুখীন হবেন। তাছাড়া ফলনও কম পাবে। এভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। জমির এ ক্ষতি ২০ বছরেও পূরণ হবে না।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: ইসলাম উদ্দিন বলেন, কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা খবর পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করছি। যে বা যারা কৃষিজমির মাটি কাটছেন, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন