শ্রীমঙ্গলে গাছে গাছে দুলছে আমের মুকুল, ফুলের সঙ্গে ছড়াচ্ছে সৌরভ

February 4, 2025,

এহসান বিন মুজাহির : বিদায়ের পথে শীতকাল। এখনও ফালগুন মাস না এলেও মাঘের শেষ দিকে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যেই লেগেছে ফাগুনের ছোঁয়া। ব্যক্তি উদ্যোগে লাগানো আম গাছসহ আম বাগানগুলোতে এখন দেখা মিলেছে আমের মুকুল। বসন্তের নানা ফুলের সঙ্গে সৌরভ ছড়াচ্ছে আমের মুকুল।

চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এই মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। বাতাসে মিশে সৃুষ্ট করছে মৌ  মৌ ঘ্রাণ। সোনালি হলুদ রঙের আমের মুকুলের মনকাড়া ঘ্রাণ মানুষের মনকে করছে বিমোহিত। গাছে গাছে মৌমাছির দল ঘুরে বেড়াচ্ছে গুনগুন শব্দে। ছোট পাখিরাও মুকুলে বসছে মনের আনন্দে। এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের আম গাছসহ উপজেলাজুড়েই। দৃশ্যটি যে কাউকেই কাছে টানবে। এককথায় বলা যায় মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে প্রকৃতি। মনকে করে তুলছে আরো প্রাণবন্ত। পাশাপাশি জানান দিচ্ছে মধুমাসের আগমনী বার্তা।

সরেজমিনে শ্রীমঙ্গল শহরতলীর মুসলিমবাগ আবাসিক এলাকা, পৌর শহরের সন্ধানী আবাসিক এলাকা, কলেজ রোড ডাক বাংলা পুকুরপাড়, কালিঘাট রোড, জালালিয়া রোড, ভানুগাছ রোড এবং আশিদ্রোন ইউনিয়নের মোহাজেরাবাদ, সিন্দুরখান ইউনিয়নের সাইটুলা, উপজেলার সদর ইউনিয়নসহ প্রায় ৯টি ইউনিয়নের গ্রামগঞ্জের এলাকার অনেক বাড়ির আঙিনায়, পুকুর ধারে আম গাছে মুকুল ধরেছে। এরমধ্যে চা বাগান কালীঘাট, রাজঘাট, ভাড়াউড়া, সাতগাঁও, জাগছড়া, সোনাছড়া, বর্মা ছড়া, বিদ্যাবিল, উদনাছড়া, ভুরভুরিয়াছড়া, মাজদিহি, কাকিয়াছড়া, হরিণছড়াসহ গ্রামগঞ্জ ও শহরের প্রায় সব এলাকাতেই রয়েছে আমগাছ। তবে বেশি মুকুল এসেছে চা বাগান এলাকায়। কারণ বাগানগুলোতে আম গাছে পরিচর্যা হয় বেশি। আম চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই আম গাছের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। তবে গড়ে ওঠা নতুন আম জাতেরই গাছ বেশি হচ্ছে। গেলো দুই সপ্তাহ থেকে গাছে আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। মূলত আবহাওয়াগত কারনে দেশীয় জাতের গাছে এই আগাম মুকুল আসতে শুরু করেছে বলে জানান বাগান সংশ্লিষ্টরা।

এবারের শীত মৌসুমে উপজেলায় অন্যান্য বছরের তুলনায় কম শীত ছিল। এছাড়া মাঘ মাস শেষের পথে। কিন্তু মাঘে এখনও মেঘের দেখা মিলেনি। তবে এ সময় শিলাবৃষ্টি হলে আমের মুকুলের ক্ষতি হবে। তবে আমের ফলন নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন বাগান মালিকরা। আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কাও কাজ করছে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাগান মালিক আব্দুল জলিল জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে তাদের লাগানো আম গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। কিছু গাছ মুকুলে ছেয়ে গেছে। বেশিরভাগ গাছে মুকুল বের হচ্ছে। মুকুল আসার পর থেকেই তারা গাছের পরিচর্যা করেছেন। মুকুলের বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের আক্রমন থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ গ্রহণ করছেন। আমচাষী শিপন মিয়া জানান, বছরজুড়ে গাছের পরিচর্যা করার কারণে এখন প্রতি বছরই বাগানে আমের ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুক’ল থাকলে এবার আমের ভালো ফল হবে। আম বাগানের মালিক কবির মিয়া বলেন, এবার আগাম প্রতিটি গাছেই আমের মুকুল আসছে। যদি আবহাওয়া প্রতিকুল না হয় তাহলে ভালো ফলন হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, এ বছর আমের আগাম মুকুল ফুটেছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে মুকুলগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই। আমের মুকুলের পরিচর্যায় এভোমেট্রিন ও ছত্রাকনাশক মেনকোজেভ বালাইনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমচাষী এবং সংশ্লিষ্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং সময়মতো পরিচর্যা হলে চলতি মৌসুমে আমের ভালো ফলন হবে বলে ধারণ করা হচ্ছে। আর এ কারণেই আশায় বুক বেধে বাগান মালিকরা শুরু করেছেন পরিচর্যা। তাদের আশা, চলতি মৌসুমে তারা আম থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শ হলো গাছে মুকুল আসার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে পুরো গাছে সাইপারম্যাক্সিন ও কীটনাশক দিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করে গাছ ধুয়ে দিতে পারলে গাছে বাস করা হপার বা  শোষকজাতীয় পোকাসহ অন্যান্য পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। যদি সঠিক সময়ে হপার বা শোষকপোকা দমন করা না যায় তাহলে আমের ফলন কমে যেতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com