শ্রীমঙ্গলে বিশ^ পরিবেশ দিবসের মানব/বন্ধন ও আলোচনা সভা

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি : শ্রীমঙ্গলে ‘‘প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে সকলে, একসাথে, এখনই” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পালিত হয়েছে বিশ^ পরিবেশ দিবস।
এ উপলক্ষে ১ জুন রবিবার সকাল ১১ টায় সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-টিআইবি, শ্রীমঙ্গল এর আয়োজনে মৌলভীবাজার রোড মানববন্ধন ও পরে অফিসে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সনাক টিআইবি, শ্রীমঙ্গলের সভাপতি এডভোকেট আলা উদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে ও এরিয়া কোÑঅর্ডিনেটর মো: আবু বকর এর সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন সনাকের সাবেক সভাপতি দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য্যসহ অন্যান্য সনাক সদস্য ইয়েস ও এসিজি সদস্যবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানূষজন অংশগ্রহণ করেন।
মানব বন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে শহর ও নগরে প্লাস্টিক বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনা পরিবেশ সুরক্ষায় একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ ২১ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে শুধু ঢাকা শহরে এর পরিমাণ দৈনিক ৬৪৬ টন যার একটি বড় অংশ খাল, বিল, নদী ও জলাশয়ে যায়। বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের একটি বড় অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে হয় যা পরিবেশবান্ধব নয়।
এছাড়া, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা এবং সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ, পৃথকীকরণ এবং পুনঃপ্রক্রিয়াজতকরণের সক্ষমতা এবং পদক্ষেপের ঘাটতি বিদ্যমান। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্যরে একটি বড় অংশ পয়ঃনিষ্কাশনের নর্দমাসহ নদী-নালা ও জলাশয়ের তলদেশে জমা হয়। এই বর্জ্য নদীর ড্রেজিংসহ বাংলাদেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে ব্যয়বহুল করছে, জলজ বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করছে, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবকে তরান্বিত করছে।
অন্যদিকে, একক ব্যবহার পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন এবং বিপণন নিষিদ্ধ হলেও তা নিশ্চিতে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক আইন প্রয়োগে ঘাটতিসহ বিবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে পলিথিন ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার ৫০০ প্রকারের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদিত হয় এবং এজন্য প্রতি বছর ১৪ লাখ ৯ হাজার টন ভার্জিন প্লাস্টিক রেজিন আমদানি করা হয়। সংগ্রহ ও পুনঃপ্রক্রিয়াজতকরণের মাধ্যেমে এই আমদানি হ্রাসের সুযোগ রয়েছে।
মানববন্ধনে সনাক-টিআইবি পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের জন্য সুপারিশ
১. ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে সেই ঘোষণা ২০২৫ সালের আইএনসি সভা থেকে প্রদান করতে হবে।
২.ন্যাশনাল থ্রিআর স্ট্রাটেজি ফর ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট” কৌশলপত্রটি হালনাগাদ ও সংশোধনসহ পরিবেশ সংক্রান্ত বৈশি^ক প্রতিশ্রুতির আলোকে একটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৩. প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ, পৃথকীকরণ, পুনঃপ্রক্রিয়াজতকরণের ব্যবস্থাসহ একটি আধুনিক ও কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভাগুলোর কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৪. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং জনসচেতনতা ও প্রচারণামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকরি প্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী এবং তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
৫. প্লাস্টিক শিল্পের জন্য আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি ও অন্যান্য প্রণোদনা হ্রাস করে পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণকে উৎসাহিত করতে হবে।
৬. অপ্রাতিষ্ঠানিক প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারীদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করার লক্ষ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে এবং প্লাস্টিক-সংক্রান্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে পরিবেশ দূষণ হ্রাস করতে হবে।
৭. সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষকরে, ‘উৎপাদনকারীর সম্প্রসারিত দায়িত্ব’ সম্পর্কিত নির্দেশিকাটির ব্যপক প্রচারণা নিশ্চিত করতে হবে।
৮.যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ এবং পরিবেশ দূষণ রোধে সাধারণ জনগণের মধ্যে প্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৯.নদী, জলাশয় ও পরিবেশের বিভিন্ন উৎসে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণসহ পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রমে নাগরিক উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১০. প্লাস্টিক দূষণ ও পরিবেশের ক্ষতিসহ এখাত-সংশ্লিষ্ট অনিয়মের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
মন্তব্য করুন