সেতুর অভাবে দুই জেলার ৩৫ গ্রামের দূর্ভোগ
হোসাইন আহমদ॥ মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকা খলিলপুর ইউনিয়ন। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এরা বরাক নদী (স্থানীয়দের কাছে মরা গাং হিসেবে পরিচিত)। ওই নদীর ওপারে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়ন। বরাক নদীর অর্ধেক মৌলভীবাজার ও অর্ধেক হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের খতিয়ানে রয়েছে। নদীর মালিক দুই জেলাবাসী। ব্যবহার করছেন উভয় জেলার স্থানীয় বাসিন্দারা। নদীটি মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলাবাসীর মিলনস্থ হিসেবে পরিচিত। সেতু না থাকায় অধ্যবদি সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুই জেলাবাসীর চলছে যোগাযোগ। প্রতি বছর দীর্ঘ ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্য এ নদীতে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করতে খরচ হয় প্রায় লক্ষাধিক টাকা। এলাকাবাসী চাঁদা তুলে ব্যয়বার বহন করেন। নদীতে সেতু হলে মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ বাইপাস রাস্তা হিসেবে এটি ব্যবহার করা যাবে। তরান্মিত হবে দু-জেলার সার্বিক উন্নয়ন।
বরাক নদীতে সেতু না থাকার কারণে বেশি দূভোর্গ পোহাতে হচ্ছে মৌলভীবাজার অংশের প্রায় ৩৫ হাজার বাসিন্দাকে। স্বাধীনতার পর থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন নিবেদন করে আসলেও আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি নদী তীরবর্তী মৌলভীবাজার অংশের কেশবচর, সাবটিয়া, দেওয়ান নগর, হলিমপুর, ঘোড়ারাই, কাটারাই, কঞ্চনপুর, চাঁনপুর, নামুয়া, খলিলপুর ও সাদুহাটি এবং হবিগঞ্জ অংশের ফরিদপুর, নোয়াহাটি, সিটফরিদপুর, ধর্মনগর, আলমপুর, নাজিমপুর, ফরাসতপুর, বখশিপুর, মুকিমপুর ও সিছনপুর গ্রামসহ উভয় জেলার ৩৫ গ্রামের লোকের। যার কারণে অর্থনৈতিক, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগের দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে উভয় জেলার প্রায় ৫০ হাজার লোক।
সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান, সাবেক সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী মরহুম সৈয়দ মহসিন আলী’র কাছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে করা হয়ে ছিল একাধিক আবেদন। তারা পরিদর্শন করে ছিলেন নদী তীরবর্তী এলাকা। সর্বশেষ গত ১৫ আগষ্ট মৌলভীবাজার-৩ আসনের (সদর-রাজনগর) অংশের সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসিন ও হবিগঞ্জ-১ আসনের (নবীগঞ্জ-বাহুবল) অংশের সংসদ সদস্য এম এ মুনিম চৌধুরীকে অতিথি করে উভয় জেলার বাসিন্দাদের উদ্যোগে সভা করা হয়ে ছিল। তারা উভয়ই আসস্থ করেছেন সেতুটি নির্মাণ করে দিবেন বলে। কিন্তু তাদের ওই বাণী কতটুকু সফল হবে এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর।
নবীগঞ্জ অংশে রয়েছে র প স্কুল এন্ড কলেজ, সানফ্লাওয়ার জুনিয়র স্কুল, উদয়ন বিদ্যাপিঠ, উলখান্দি এতিমখানা, আউশকান্দি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, অরবিট হসপিটাল, কেয়ার ডায়গনিষ্ট সেন্টার, সৈয়দপুর ফাজিল মাদ্রাসা, ইয়াকুবিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা, দাখিল মাদ্রাসা, ব্যাংক ও বীমাসহ আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্টান। খলিলপুর ইউনিয়ন মৌলভীবাজার শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে থাকায় নবীগঞ্জ অংশের ঐ সকল প্রতিষ্টানের সাথে স্বল্প সময়ে যোগাযোগ করা সুবিধা জনক। বিশেষ করে মুমূর্ষ রোগী ও গর্ভবর্তী মহিলাদের ক্ষেত্রে চরম দূভোর্গ পোয়াতে হয় ওই অঞ্চলের লোকদের। সেতু না থাকায় নদীর ওপারের নবীগঞ্জ অংশের হাসপাতাল গুলোতে যেতে পারে না তারা। যার কারণে বাধ্য হয়ে রোগীর জীবন বাঁচাতে ৩৫ কিঃ মিঃ দূরের মৌলভীবাজার শহর অথবা ২৫ কিঃ মিঃ দূরের সরকার বাজার হয়ে শেরপুরে যেতে হয়। ইতি মধ্যে অনেক রোগীই রাস্তায় মারা গেছেন। অথচ ওই সেতু হলে হাসপাতাল যেতে এলাকাবাসীর সময় লাগবে ৮/১০ মিনিট।
ওই আউশকান্দি বাজারের পাশ দিয়েই ঢাকা-সিলেট বিশ্ব রোড (প্রস্তাবিত ৪ লেইন রোড) এবং ৮ কিঃ মিঃ দূরে শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোন অবস্থিত। ইকোনমিক জোনের সাথে সহজে যোগাযোগ করতে পারলে বৃহত্তর এ অঞ্চলের লোকের বেকারত্ব দূর হবে। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে যাবে এ অঞ্চলের লোক। বিশ্ব রোড দিয়ে নবীগঞ্জ হয়ে অতি সহজেই ঢাকা ও সিলেটর সাথে স্বল্প সময়ে যোগাযোগ করা দু জেলা বাসীর জন্য অতি সহজ।
সরেজমিন গত রবিবার এলাকায় গেলে দেখা যায়, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, চাকুরিজীবিসহ নানা পেশার লোক ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘ ৩০০ মিটার নদীটি পার হচ্ছে। এ সময় স্কুল শিক্ষার্থী ফাতেমা, আয়শা, তামান্না, সানজিদা, ফাইজা, লিমা, হাবিব, বিলাল, সাজু, ফাহিম, শিবলু, তারেক ও ইকবালসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তারা বলে, ৩০০ মিটার সাঁকো পের হয়ে স্কুলে যেতে অনেক ভয় হয়। বর্ষা ও বৃষ্টির দিনে স্কুলে যাওয়াই সম্ভব হয় না। ওই নদীতে অনেক সহপাঠীদের বই, কলম, হাতের ঘড়ি এমনকি পায়ের জুতাও পড়েছে। যার কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কার্যকরি প্রদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বরাক নদীতে সেতু নিমার্ণ করে সরকার শিক্ষার ধার উন্মুচন করে দিয়ে অবহেলিত এ জনপদকে এগিয়ে নিবেন।
উপস্থিত কেশবচর এলাকার আব্দুল বশির, শিক্ষাক আব্দুল হাই, মাহমুদ মিয়া, সুব্রত চন্দ্র বিশ্বাস, আমিরুল ইসলাম শাহেদ, ডাঃ জুয়েল আহমদ ফয়েজ, সহ এলাকার শতাধিক লোক বলেন, সেতু না হওয়ায় উন্নয়নে দীর্ঘ দিয়ে আমাদের মৌলভীবাজার অংশের ২২ টি গ্রামের ৩৫ হাজার লোক পিছিয়ে রয়েছেন। ইতিপূর্বে আমরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও এখন পর্যন্ত সেতু নির্মাণের কোন ইতিবাচক উদ্যোগ দেখিনি। দুই জেলার বাসিন্দাদের কথা চিন্তা করে সেতুটি স্থাপন করা হলে সার্বিক দিক দিয়ে এ অঞ্চল অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এ প্রত্যাশা তাদের।
মন্তব্য করুন