হনুমানের থাবায় সুন্দরবন আর সরকারের হাতে রাষ্ট্রের ক্ষতি
মুনজের আহমদ চৌধুরী॥ আমাদের আওয়ামীলীগ-বিএনপি জামাতের নেতারা বিদেশীদের, ক্ষমতার প্রভুদের দুয়ারে দুয়ারে ক্ষমতা ভিক্ষা করেন। বিএনপি-জামাত এখন প্রভুদের কাছে ক্ষমতার যাবার আর্ন্তজাতিক আশির্বাদ ভিক্ষা করছে। তারা পুর্ব-পশ্চিমের প্রভুদের কাছে,বাংলাদেশে বর্তমান সরকার ব্যার্থ, আর নিজেরা ক্ষমতায় গেলেই সব সমস্যার সমাধান করে দিতে পারবে-সকাতরে এ আর্জি শোনাতে ব্যাস্ত। ক্ষমতার বিনিময়ে বাংলাদেশের জল-স্থলে সব সুবিধার আগাম প্রতিশ্রুতিও তারা শোনান প্রভুদের। এই প্রতিশ্রুতির বিষয়টির অবশ্য প্রমান নেই, আছে জনশ্রুতি। অন্যদিকে বাংলাদেশে বর্তমান সরকার বিদেশীদের কাছে এই সরকারের সাফল্য আর বিএনপি জামাত মানে আসল বিরোধীদলের ধংস্ব আর নাশকতার রাজনীতির প্রচারনায় ব্যাস্ত। তাদের কথা,ক্ষমতায় তারাঁ থাকলেই ভাল থাকবে দেশ। এমন দ্যুতিয়ালিতে ব্যায় হচ্ছে জনগনের অর্থ।
আওয়ামীলীগ-বিএনপির ক্ষমতা ভিক্ষার এই রাজনীতিতে দেশ,জনগন আক্রান্ত। জনগনের প্রতি আমাদের রাজনীতিকরা আস্থাশীল নন বলেই সুষ্ট নির্বাচন নয়, তারা ক্ষমতা ভিক্ষা আর দোষ দেয়া আর দায় চাপানোর রাজনীতিতে ব্যাস্ত। বিএনপি-আওয়ামীলীগের এই লড়াই ,নি:সন্দেহে জনগনের স্বার্থরক্ষার নয়। যেনতেনভাবে ক্ষমতায় আকড়েঁ থাকা; নয়তো যে করেই হোক ক্ষমতায় মধুবৃত্তে পৌছুবাঁর লড়াই। জনগনের সুবিধা, অসুবিধা, অধিকার নয়, এ লড়াই ক্ষমতার । কেবলমাত্র নিজেদের স্বার্থ-সিদ্ধি আর ক্ষমতায় গিয়ে লুটপাটের জন্য দলগুলো জনগনের ‘নিরাপত্তা,জনদাবী,ন্যায়,আইনের শাসনের মতো, গনমানুষের আকাংখার বাংলাদেশের মিথ্যে সপ্ন বেঁচে তারা প্রতিনিয়ত প্রতারনা করেন বাংলাদেশের জনগনের সাথে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলাদেশী জাতীয়বাদের মতো পরম তাৎপর্যময় অর্জনগুলো আজ রাজনীতিবিদদের কাছে কেবল পন্য। নিজেদের স্বার্থ আর সুবিধার দামে তারাঁ বেচেঁন-কেনেন। কথা দিয়ে না রাখার সংস্কৃতিতে প্রতিশ্রুতি আর ইশতেহার আছে মুদ্রিত অক্ষরে, গালভরা বুলি আর লিখে দেয়া বক্তৃতায় আছে কেবল… সপ্নের আলোকিত স্বদেশ।
ক্ষমতার রাজনীতির দৌড়ে থাকা দল-সরকারগুলোর শ্লোগান আর সুন্দর কথার মালা ছাড়া লুটপাট আর নৈরাজ্যে সেভাবে তাদের মধ্যে কোন ভিন্নতা নেই। গাছ, মাছ, প্রতিবেশ-পরিবেশ থেকে শুরু করে বঞ্চিত চা শ্রমিকদের এতটুকু জমি,সবখানেই ক্ষমতাসীনদের লোলুপ,হিং¯্র দৃষ্টি। সিপিবির সেই শ্লোগানের মত,সব আমলেই একই বাস্তবতা…নৌকা-পাল্লা-ধানের শীষ,সব সাপের একই বিষ।
প্রিয় ঠিকানা,আমার হৃদয় মাজার মৌলভীবাজারের কথাই বলি। লাউয়াছড়া বনাঞ্চলের ভেতরে রেল লাইনের দুপাশে হাজার হাজার গাছ কাটতে মরিয়া সরকারের রেলওয়ে। অগ্রজ সাংবাদিক,কবি জাবেদ ভুইঁয়ার মতোন কিছু মানুষ, সচেতন রাজনৈতিক কর্মী ছাড়া প্রকৃতি রক্ষার এ আন্দোলনে ক্ষমতার রাজনীতির দলগুলোর, রাজনীতিকদের অংশগ্রহন নেই।
চা বাগানের জন্য লীজ দেয়া জমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্টার নামে ক্ষমতাসীনদের ভুমিগ্রাসের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মৌলভীবাজারে-হবিগঞ্জে এখন আন্দোলন করছেন চা শ্রমিকরা। প্রায় ১৫ লাখ চা জনগোষ্টি গত দেড়শ বছর ধরে এদেশে বাস করেও ভুমির অধিকার পাননি। মাত্র ৬৯ টাকা সাপ্তাহিক মজুরীতে যে শ্রমিকরা কাজ করছেন ,তাদের দেড়শ বছর ধরে চাষাবাদ করে আসা শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিতে চায় সরকার। চা শ্রমিকদের অস্তিত্ব বিপন্ন করতেও এ সরকার পিছু হটছে না। যেখানে চা শ্রমিকদের দীর্ঘ অর্ধ-শতকের বেশি আস্থার সম্পর্ক আওয়ামীলীগ আর নৌকা মার্কার সাথে। সিলেট,মৌলভীবাজারের অনেক সংসদীয় আসনে নৌকার নিñিদ্র নিরাপদ সিটে আওয়ামীলীগের ‘কলাগাছ‘ মার্কা প্রার্থীরাও অনায়াসে জিতে আসেন কেবল নৌকা আর আওয়ামীলীগের প্রতি চা শ্রমিকদের আন্তরিক আর অকুন্ঠ সমর্থনের কারনেই। ভোটের কথা এখানে এ কারনেই বলছি, চা শ্রমিকদের ভোট, অর্ধ শতাব্দীর সমর্থনের পরও ক্ষমতাশীনদের বেশি দরকার তাদের চাষের শেষ সম্বল ভুমিটুকু কেড়ে নেবার। জনরায়, ভোটের সমর্থনের চেয়ে নীতিনির্ধারকদের স্বার্থই এখানে বড় কেননা তাঁরা ধরেই নিয়েছেন সংখ্যালঘুদের ভোট দেবার বিকল্প জায়গা নেই অথবা ভোটেরই দরকার নেই!
চুনারুঘাটের চান্দপুর-বেগমখান বাগানের সাড়ে ১২শ চা শ্রমিকের চাষাবাদের ৫১১.৮৩ একর জমিতে এখন বছরে কয়েক কোটি টাকা মুল্যের ধান উৎপাদন করেন চা শ্রমিকরা। হবিগঞ্জে চা জনগোষ্টিকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতাশীনদের বিশ্বস্ত পুজিপতি লুটেরাদের স্বার্থ রক্ষা করতে চায় সরকার। রশিদপুরে গ্যাসক্ষেত্র করে, সিলেট নগরীসংলগ্ন লাক্কাতুরায় ষ্টেডিয়াম নির্মান করে সুবিধা রক্ষা হয়েছে, হচ্ছে ধনীক শ্রেনীর। মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোতে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে নির্মান করা হচ্ছে। টিলা আর পাহাড় কেটে প্রাসাদোপম বাগানবাড়ী,রির্সোট তৈরীর পাশাপাশি চলছে হ্যাচারী আর পোল্ট্রী খামার।
সুন্দরবনকে বিরান ভুমিতে পরিনত করার দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্র এখন বাস্তবায়নের নীলনকশার চুড়ান্ত পর্যায়ে। ১২ জুলাই চুক্তি হলো ভারতের কোম্পানীর সাথে রামপালে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মানের। সকল সতর্কবানী, বিশ্লেষন আর ক্ষতির সমূহ আশংকাকে উপেক্ষা কেন করা হয়েছে,তা জনগন জানেন। পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে আমার জানার পরিধি সংকীর্ন। তবে আমি সাধারন মানুষ হিসেবে এটুকু বুঝি, এই রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র সরকারের হাতে রাষ্ট্রের ক্ষতি। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন মরলে বাংলাদেশ কী বাচবে?
লাউয়াছড়া থেকে সুন্দরবন; পরিবেশের ভয়াল ক্ষতি কিংবা হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকদের আর্তি আমাদের রাজনীতিকদের স্পর্শ করে না। তনুর মায়ের আর্তি, বিচারহীনতার বেদনা নতুন ইস্যু দিয়ে পুরনো ইস্যুকে হত্যার দেশে কোন ঘটনাই না…! যেখানে মানুষ হত্যার বিচার মেলে না, সেখানে ইস্যুর চাপায় ইস্যু হত্যা তো কি খবর হয়ে উঠতে পারে? পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন,গুলশানের জঙ্গি হামলায় কোনভাবেই বাংলাদেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়নি। সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্যেই নিহিত রাষ্ট্রের প্রকৃত ভাবমুর্তি এবং নীতিনির্ধারকদের মনোবিকার।
দেশের জঙ্গিবাদের ভয়াল উত্থান, গুলশানের হলি আর্টিজানের নারকীয়তার পর দেশের এমন বাস্তবতায় সন্মিলিত রাজনৈতিক ঐক্যের বিকল্প নেই। কিন্তু সেই ঐক্যের কোন সম্ভাবনা দৃশ্যত দৃশ্যমান নয়। সবকিছুর পর জঙ্গী-র মতো ভয়াল বিষয় যেন ক্ষমতার রাজনীতির ইস্যুর সঙ্গী হবে না,এ প্রত্যাশা করি। জঙ্গী যেন কোন ভাবেই কোন সমীকরনেই রাজনীতির কোন পর্যায়ের সঙ্গী না হতে পারে। নারকীয় সন্ত্রাসের এ কালো ভয়াল থাবা পীস টিভির মতো কারো কন্ঠ রুদ্ধ করেই কেবল থামানো যাবে না। আইএস জঙ্গিদের ল্যাপটপে পাওয়া পর্নের স্তুুপ, দেশের বিত্তবানের পুত্রদের মাত্র ১৮ বছরেই পৃথিবীর জাগতিক সুখ লাভ অত:পর বেহেশতে ৭০ জন পরী পাবার বাসনা থেকেই বোঝা সম্ভব জঙ্গিদের মনোজগত। ইমামদের হাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন খুৎবা ধরিয়ে দিলেই সমাধান হবে না। এখন পরিস্থিতির প্রয়োজনে দরকার পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্টান থেকে শুরু করে সবার সন্মিলিত সচেতনতা আর ইস্পাত কঠিন রাজনৈতিক ঐক্যের।
সভ্য সমাজ ব্যাবস্থায়, সবারই যেমন দায়িত্বশীল ভুমিকা কাম্য,তেমনি কোন ব্যাক্তি এমনকি আমার শত্রুরও কন্ঠও যেন রুদ্ধ করা না হয়। কারো কন্ঠ রুদ্ধ করার মানেই সমাধান নয়, বরং বৃহত্তর সংকটের শুরু।
পলিটিকস শব্দটার ভুলভাবে অভিহিত বঙ্গার্থ রাজনীতির মানে জনগনের কাছে যেন এখন যেন কেবল রাজার নীতি। বুঝিবা দেশটার নামে শাব্দিক অর্থে প্রজাতন্ত্র শব্দটি আছে বলেই। রাজনীতির শব্দের মানে আক্ষরিক অর্থেই লোকনীতি হয়ে উঠুক। রাজনীতি কথা বলুক জনগনের। বন্ধ হোক বিদেশীদের দুয়ারে ক্ষমতার ভিক্ষাবৃত্তির রাজনীতি। বন্ধ হোক ,লাউয়াছড়া আর সুন্দরবনে সরকারের হাত ধরে রাষ্ট্রের ক্ষতি। জনগনের ক্ষমতায়নের পথে যাত্রা শুরু হোক প্রিয় দেশমাতৃকার।
মন্তব্য করুন