হাওর মহাপরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত নয় হাকালুকি হাওর!
হোসাইন আহমদ॥ দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হয়েও “হাওর মহাপরিকল্পনা”র অন্তর্ভুক্ত হয়নি মৌলভীবাজার তথা সিলেট বিভাগে অবস্থিত হাকালুকি হাওরসহ এজেলার কোন হাওরই।
মাঝে মধ্যে দু-এক বছর ব্যতীত কোন বছরই পরিপূর্ণ ভাবে এজেলার হাওরের কৃষকরা আগাম বন্যা ও পাহাড়ী ঢলের কারণে বোরো ধান ঘরে তুলতে পারেন না। যার কারণে অনাহারে অর্ধাহারে দিনকাল কাঠাতে হয় হাওর পারের কয়েক লক্ষ মানুষকে। লেখাপড়া ও জীবনমান উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছেন এজেলার হাওর পারের শিক্ষার্থীরা।
জানাযায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ৩৭৩টি হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকার সমন্বিত উন্নয়নের জন্য “হাওর মহাপরিকল্পনা” গ্রহণ করে সরকার। বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি গত ২০১২ সালের ৩ মে এ প্রকল্পটি অনুমোদন করেন। ইতোমধ্যে গত ২০১২-১৩ অর্থ বছর হতে ২০ বছর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত ‘হাওর মহাপরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা হয়। এ মহাপরিকল্পনায় মোট ১৫৩টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পসমূহ স্বল্প ১-৫ বছর, মধ্য ৬-১০ বছর ও দীর্ঘ ১১-২০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদী ৬৯টি, মধ্য মেয়াদী ৫৯টি ও দীর্ঘ মেয়াদী ২৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নে যথাক্রমে ৯ হাজার ৫১৩ কোটি, ১০ হাজার ৪১৬ কোটি ও ৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু এর মধ্যে মৌলভীবাজার জেলার কোন হাওরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
সামাজিক ও পরিবেশগত বিষয় বিবেচনায় রেখে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য হাওর এলাকার সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে এটি একটি ‘সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা’। এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বন্যা ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ সংরক্ষণ, ফসল উৎপাদন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, শিক্ষা, বসতি স্থাপন, স্বাস্থ্যসুবিধা, স্যানিটেশন, শিল্পকারখানা, বনায়ন, খনিজ সম্পদের ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উৎপাদন ইত্যাদি।
অথচ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি। এক সময়ে ঐ হাওর বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। মিঠা পানির সকল প্রজাতির ছোট-বড় সুস্বাদু মাছ, অতিথি ও দেশীয় পাখি, নানা প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, গুল্মলতা, নলখাগড়া ইত্যাদিতে ভরপুর ছিল হাকালুকি হাওর। হাওরের প্রাপ্ত বড় বড় ঝিনুক থেকে আহরিত হতো প্রচুর মূল্যবান মুক্তা। শতমূলি সহ পাওয়া যেত নানা জাতের ঔষধী লতাপাতা। বর্তমানে ঐ সব কিছুই ধ্বংস প্রাপ্ত। ১৯৬০ থেকে ৭০ দশকের ঐ হাওরের সম্পদ, প্রাচুর্য ও জীববৈচিত্র্যের অনেক কিছুই এখন আর নেই।
হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের অন্তর্ভুক্ত হলে তা কিছুটা রক্ষা পেত বলে দাবী করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দলনের সিলেটের সাধারন সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ও বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের মৌলভীবাজার জেলা শাখার আহ্বায়ক মাহিরুল ইসলাম।
মৌলভীবাজার জেলায় হাকালুকি হাওরসহ রয়েছে, কাউয়াদিঘী ও হাইল হাওরসহ ছোট বড় আরও বেশ কয়েকটি হাওর। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষের প্রশ্ন কেন এতগুলো হাওর থাকার পরেও মৌলভীবাজারকে “হাওর উন্নয়ন বোর্ডের” অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
হাওর অঞ্চলের বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্প, (JICA অর্থায়নে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড অংশ) কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার ২৯টি হাওরে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হলেও মৌলভীবাজারের হাকালুকি হওরের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে হাকালুকির মৌলভীবাজারের কৃষক ও মৎসজীবী উন্নয়ন চাহিদা হতে বঞ্চিত ও হুমকির মূখে হাওরাঞ্চলের জীববৈচিত্র।
এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরকে “হাওর মহাপরিকল্পনা”র অন্তর্ভুক্ত না করায় মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসিন, মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল মতিন, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযুদ্ধা মো. আজিজুর রহমান, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দ্রুত সময়ের মাধ্যে এ তিন উপজেলার হাকালুকির অংশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন প্রকল্পে আওতাভুক্ত করার জোর দাবী জানান।
এবিষয়ে তৎক্ষালিন মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য নবাব আলী আব্বাস খান বলেন, হাকালুকি হাওরকে “হাওর মহাপরিকল্পনা”র অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নপর্বে এবিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি। এমনকি মৌলভীবাজার আসলেও আমি বক্তব্যে এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরে ছিলাম।
মন্তব্য করুন