হাওর রক্ষা আ*ন্দোলন মৌলভীবাজার জেলা আহবায়ক কমিটি ঘোষনা

স্টাফ রিপোর্টার : মৌলভীবাজার জেলার সাতটি উপজেলার প্রতিনিধি নিয়ে হাওর রক্ষা আন্দোলনের জেলা আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। কমিটি ঘোষনা উপলক্ষে এডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েব এর সভাপতিত্বে মৌলভীবাজার পৌরসভার কনফারেন্স হলে জেলার সংগ্রামী কৃষক-মৎস্যজীবি, পরিবেশবাদী সংগঠন ও সাংবাদিক প্রতিনিধি নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেন কাউয়াদিঘী হাওর রক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
সভায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ (অব:) মো: ইকবাল অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আ স ম ছালেহ সোহেলকে আহবায়ক ও এম খছরু চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে হাওর রক্ষা আন্দোলনের ৩৯ সদস্যের নির্বাহী কমিটি এবং ৮ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ ঘোষনা করেন। সাংবাদিক সরওয়ার আহমদ, বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিত্ব খালেদ চৌধুরী, বাইক্কা বিল রক্ষণাবেক্ষন সমিতির সভাপতি মিন্নত আলী।
স্বাগতিক বক্তব্য রাখেন হাওর রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব এম. খছরু চৌধুরী। কৃষক মৎসজীবী নেতাদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন কাউয়াদিঘীহ হাওর রক্ষা আন্দোলের যুগ্ম সদস্য সচিব আলমগীর হোসেন, খয়রুল হক (বড়লেখা), হাসানুজ্জামান (জুড়ী), শাহীন ইকবাল (কুলাউড়া), সামছুদ্দিন মাস্টার (রাজনগর), এ কে এম আব্দুস সালাম (কমলগঞ্জ), দুলাল দেব (শ্রীমঙ্গল), খায়রুল ইসলাম (সদর), এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম সিরাজী, এডভোকেট মো: মাসুক মিয়া, মৌলানা মকবুল হোসেন খাঁন, তানভীর আহমেদ লায়েক, ফজলুল হক নিরু, সাংবাদিক হুসাইন আহমদ, তাসনিম চৌধুরী, মো: আলমগীর হোসেন, সালাউদ্দিন আহমদ প্রমুখ।
খছরু চৌধুরী বলেন, আপনারা জানেন বিশিষ্ট জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী’র ভাষায় “মানুষের শরীরে যেমন একটা হৃৎপিণ্ড থাকে; এটা থেকে রক্ত শোষণ করে নিলে মানুষ যেভাবে বাঁচতে পারেনা — ঠিক তেমনি আমাদের পরিবেশের হৃৎপিণ্ড হচ্ছে হাওর ও জলাভূমি। সেই হাওর ও জলাভূমি ধ্বংস করলে আমাদের পরিবেশ আর বাঁচবে না।” আমরা এ কয়বছর যাবত মৌলভীবাজারের হাওর ও জলাভূমি রক্ষার আইনত দাবি নিয়ে সরকারের প্রশাসন ও হাওরপরিবেশ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে গিয়েছি।
কিন্তু কোনো সুফল হয়নি। প্রাণ আরএফএল কোম্পানি- সহ অনেক প্রভাবশালীরা ফিসারিজের নামে দখল ও ধ্বংসের মহোৎসব করছে হাইল হাওরে, সরকারের ১ নং খতিয়ানের কৃষি ভূমি, জলাভূমি তাঁরা দখল করে নিয়েছে, জাল জালিয়াতির দলিল করে জবরদখল করে নিচ্ছে গরীব কৃষকের ধানি জমি। বিকল্প জায়গা থাকতেও কাউয়াদিঘী হাওরের গভীরে সৌরবিদ্যুত প্রকল্প স্থাপনের নামে শিল্পপতিরা ক্ষেতের জমি ক্রয় করছে, এশিয়ার বৃহত্তম মিঠাপানির রিজার্ভায়র হাকালুকি হাওরেও দখল প্রক্রিয়া চলমান। মৌলভীবাজার ৩০ টি হাওরই আজ ধ্বংসপ্রায়।
এই মৌলভীবাজারেই আমরা কয়েকবার হাওর ও জলাভূমি বিশেষজ্ঞ, মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ নিয়ে সভা-সেমিনার করেছি। কেউ-ই এদের কার্যক্রম এলাউ করছেন না। সরকার তথা প্রশাসনের চোখের সামনে আইন কানুন লঙ্ঘন করে, ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনের মতো শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে, সরকারের হাওর ও জলাভূমি উন্নয়নের ১২ বছরের মাস্টার প্ল্যানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেও সরকার এদের বিরুদ্ধে মামলা করেনা, শাস্তি দেয়না। উল্টো কোম্পানির প্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা ঠুনকো অজুহাতে গরীব কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করে। সরকারের এই নীরবতা ও পক্ষপাতিত্ব কেন হয় — তা জনগণ বুঝে এবং বিগত ৫৩ বছরের শাসকগোষ্ঠী দেশে যে আইনের প্রতিষ্ঠা করেনি, লুটেরা স্বৈরাচারের আজ্ঞাবহ হয়ে দেশ চালিয়েছে; এটা তো দিনের আলোর মতো সত্য।
বৈষম্যের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে এতোগুলো জীবন বলিদান, এতো মানুষ পঙ্গু হবার পরও প্রশাসন একই ধারাবাহিকতা এখনো চলছেন। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাঁচার স্বার্থে, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য মৌলভীবাজার রেখে যাবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়েই আমরা আন্দোলন করছি। মৌলভীবাজারের দেশী-বিদেশী সকল নাগরিকের সহযোগিতা চাই। অনুষ্টানের বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিত্ব খালেদ চৌধুরী বলেন, আপনাদের এই ন্যায্য আন্দোলনে আমার সমর্থন সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আমিও আপনাদের সাথে আছি।
সভা শেষে হাওর রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব এম খছরু চৌধুরী’র সামযিক বিদেশ ভ্রমণ ও কানাডার টরন্টো শহরে বৃহত্তর সিলেটের হাওরবাসী প্রবাসীদের অনুষ্ঠানে যোগদন উপলক্ষে তাঁকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয়।
মন্তব্য করুন