হাকালুকি হাওরের মৎস্য সম্পদের বর্তমান অবস্থা বিষয়ে পর্যালোচনা সভা: ২৫ মেট্রিক টন মাছ মরেছে

এস এম উমেদ আলী॥ হাকালুকি হাওরের পানিতে তলিয়ে থাকা ধান পচে অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস এর মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। আধা কাঁচা ধান পঁচে কয়েকদিনে হাওরে গ্যাস সৃষ্টি হয়ে মাছ, গৃহপালিত হাঁস, শামুক, কাঁকড়া সহ নানা প্রজাতীর জলজ প্রাণী মারা যায়। অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাবে মারা যাওয়া পচা মাছ আর পচা ধানের দুর্গন্ধ ঝড়ো হাওয়ায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। পানিতে অ্যাসিড ও ক্ষার এর মাত্রা ৮ দশমিক ৫-এর বেশি হলে পানির স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়ে যে কোন ধরনের জলজ মারা যায় বলে মৎস্য বিশেষঅজ্ঞরা জানান। দু’দিন থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় আবহাওয়া অনুকুলে আসায় ও মৎস্য বিভাগ হাওরের পানিতে চুন ও ঔষধ ছিটালে পানির স্বাভাবিকতা ফিরে আসে।
২২ এপ্রিল শনিবার বিকেলে মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে শহরের শমসেরনগর রোডস্থ মৎস্য অফিসে সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আ.ক.ম শফিক উজ-জামান আরো জানানো হয় হাকালুকি হাওরে ১৫ এপ্রিল থেকে মাছ মরে যাওয়ার কারণ ও বর্তমান অবস্থা বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে পর্যালোচনা সভা করেছে জেলা মৎস্য বিভাগ।
গত ১৫ এপ্রিল থেকে হাকালুকি হাওরে মাছ মরে পানিতে ভেসে থাকতে দেখা যায়। এরপর মৎস্য বিভাগ মাছ মরার কারণ অনুসন্ধানে জানতে পারে হাওরের ধান পঁচে পানিতে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিষক্রিয়ার ফলে পানির অক্সিজেন ও পিএইচ কমে গিয়ে অ্যামোনিয়া বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছ মরে যায়।
হাওরের এ পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সৈয়দ মেহেদি হাসানের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সমন্বিত দল এবং স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে হাকালুকি হাওর যান।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সৈয়দ মেহেদি হাসান দিনভর এলাকার মৎস্যজীবী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হন এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। এসময় তার সঙ্গে সমন্বিত দলের সদস্য হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ রমজান আলী, মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকার্তা আ ক ম শফিক-উজ-জামান, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাসুদ খান, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ সহ মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পরিদর্শন শেষে আরও জানান, সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং পানি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে হাওরের অবস্থা প্রায় স্বাভাবিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
১৭ এপ্রিল হাওরের পানির পিএইচ-৬, ডিও-৪.৯, পিপিএম এবং অ্যামোনিয়া ১ পিপিএম ছিল। পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে পিএইচ ও ডিও বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং অ্যামোনিয়া কমতে থাকে। ২০ এপ্রিল মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়, বিএফআরআই টিমসহ অন্যান্যরা হাওরের বিভিন্ন স্থানের পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ পরীক্ষা করেন। উভয়দলের পরীক্ষায় পানির পিএইচ-৭, ডিও-৫.২ পিপিএম, অ্যামোনিয়া-১ পিপিএম পাওয়া যায়।
মৎস্য বিভাগ হাকালুকি হাওরের অংশে অবস্থিত কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা এই তিন উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থ ৪ হাজার জেলের জন্য খাদ্য সহায়তা দেওয়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া এই তিনটি উপজেলায় ৮টি বিল নার্সারীর মাধ্যমে ১০-১৫ সেন্টিমিটার লম্বা ১৮ লক্ষ রুই, কাতলা, মৃগেলসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন করছে যা আগামী জুনের মধ্যে হাওরে অবমুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে হাওরের পানির ভৌত রাসায়নিক গুণাগুণ পরিমাপ সন্তোষজনক। কয়েকদিনের মধ্যে জেলেদের হাওর থেকে মাছ আহরণের সুযোগ দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, এই মৌসুমে সারা জেলার হাওরাঞ্চলে ৪১হাজার মেট্টিক টন মাছ জলাশয়ে থাকে। যার মধ্যে হাকালুকি হাওরে ১৪হাজার মেট্টিক টন।
সৃষ্ট এই সমস্যার কারণে কুলাউড়া উপজেলায় ৭ মেট্টিক টন, জুড়ী উপজেলায় ৮ মেট্টিক টন এবং বড়লেখা উপজেলায় ১০ মেট্টিক টন মিলে মোট ২৫ মেট্টিক টন মাছ মারা গেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকসহ বিভিন্ন উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
মন্তব্য করুন