কমলগঞ্জে ব্যবসায়ী নেতা নাজমুল হত্যা নিহতের পরিবারে চলছে শোকের ছায়া

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ পূর্ব শক্রতার জের ধরে কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের চৈত্রঘাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান (৩৫) খুনের ঘটনায় শোকে কাতর পরিবার। হত্যাকান্ডের চারদিনে পেরিয়েছে বুধবার। ওইদিন নিজ বাড়িতে মরহুমের কোলখানি অনুষ্ঠিত হয়। তবুও থামছে না পরিবারের বিলাপ। সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহত ব্যবসায়ী নেতা নাজমুল হাসানের বাড়িতে গিয়ে পরিবার সদস্যদের শান্তনা জানিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আটক করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ীক আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে নাজমুল হাসানের সাথে জুয়েলের বিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে নাজমুল হাসান জুয়েলের পা ভেঙ্গে দেয়। এরপর থেকে তাদের মধ্যে শত্রুতা আরও বেড়ে যায়। এছাড়াও জুয়েলের কাছের মানুষ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তফাজ্জুল ইসলাম আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে এলাকায় প্রচার করছেন। আবার অন্যদিকে নিহত নাজমুলও ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদে অংশ নিবেন বলে এলাকায় প্রচার করে আসছিলেন। আগে থেকেই তাদের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি হয়ে আসছিল।
এদিকে ব্যবসায়ী নাজমুলকে কুপিয়ে হত্যার সিসিটিভি একটি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে মঙ্গলবার থেকে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রোববার দুপুর ২টার দিকে নাজমুল হাসান বাজারের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় একটি কালো মাইক্রোবাস থেকে দ্রুত ৭ জন লোক নেমে রামদা দিয়ে তাঁকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। এ সময় আরও তিনজন যুক্ত হয়। তারাও নাজমুলকে কুপিয়ে ধলাই নদীর পার দিয়ে নিরাপদে চলে যায়।। এরপর নাজমুল মাটিতে পড়ে থাকেন। পরে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সিলেট একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টায় মারা যান নাজমুল।
হাসপাতালে নেওয়ার পথে নিহত নাজমুল হাসান তার এক স্বজনের ফেইসবুক লাইভে ১ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে বলেন, তাঁর উপর হামলাকারী তোফায়েল, রাসেল, মাসুদ ও তফাজ্জুলকে তিনি চিনতে পারছেন। তিনি আরও বলেন, যদি বেঁচে যান তাহলে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে অংশ নিবেন। আর যদি মারা যান তাহলে এলাকাবাসী জেন তাঁর দুই ভাইয়ের মধ্যে যে কোন একজনকে সদস্য পদে নির্বাচিত করেন ।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই শামসুল মিয়া বাদী হয়ে ১৪ জনকে আসামি করে সোমবার কমলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরেরদিন মাইক্রোবাস চালক আমির হোসেন হীরা (৪০) ও পরিকেল্পনাকারী জুয়েল মিয়া (৩৭) নামে এজাহারভুক্ত দুজন আসামিকে আটক করে কমলগঞ্জ থানা পুলিশ। তাদেরকে ৫দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
নিহতের ছোট ভাই রাজেল আহমেদ বলেন, আমার ভাইকে ছুরিকাঘাত করার সময় আমি দেখেছি, ভাইকে মেরেছে তফাজ্জুল, তোফায়েল, বাবর, রাসেল, মসুদ। মামলার বাদী নিহতের ভাই শামসুল মিয়া বলেন, যারা আমার ভাইকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে তাদেরকে দ্রুত আটক করা হউক। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি যেন হয়।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। এছাড়া র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে কাজ করছে।
চৈত্রঘাটের স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের দুইটি গ্রুপের মধ্যে বালুমহাল, আধিপত্য বিস্তার ও বাজারের দোকান ঘর নিয়ে বিরোধ চলছিল। তার জেরে গত ৮ মাসে উভয় গ্রুপের মধ্য একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত ও থানায় ৬টি মামলাও হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্ব শক্রতার জের ধরে গত রোববার (৩১ অক্টোবর) দুপুর ২ টায় একটি মাইক্রোবাসযোগে দুর্বৃত্তরা চৈত্রঘাট বাজারে এসে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসানকে তার বাসার সম্মুখে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৭টায় তাঁর মৃত্যু হয়।
মৃত্যু সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর চৈত্রঘাট বাজার এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। বিক্ষোব্দ জনতা একই এলাকার প্রতিপক্ষ জুয়েল আহমদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
মন্তব্য করুন