কুলাউড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে ৫ম তলা নির্মাণ!

কুলাউড়া প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৌর শহরের উত্তরবাজারে এলাকায় প্রায় ৩০ বছরের পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ একটি ভবনের ছাদেই চলছে ৫ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ। পৌর কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ভবন নির্মানের নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে ফাটলকৃত এ ছাদেই ৫ তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। নির্মানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবন ভূমিকম্পসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগে ওই ভবন ধসে পথচারী, ব্যবসায়ী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির আশংকা রয়েছে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, ১৯৯৬ সালে কুলাউড়া পৌরসভা প্রতিষ্টার পূর্বে এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি কোন ধরণের অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করেন উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের বাসিন্দা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও হাওর বাঁচাও কৃষক বাঁচাও কৃষি বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সিরাজ উদ্দিন আহমদ বাদশা। তৎকালীন সময়ে নিম্নমানের মালামাল দিয়ে এই ভবনটি নির্মাণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পুরাতন একটি ভবনের উপর কোন প্রকার ফাউন্ডেশন ছাড়াই ৫ তলা ভবন নির্মানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ওই ভবনের মালিক। এই ভবনে ৭ টি বাসা ভাড়া রয়েছে আর নিচের তলায় মার্কেটে ৭/৮ টি দোকান ভাড়া রয়েছে। ভবনটি পৌর শহরের ব্যস্ততম সড়ক উপজেলা সড়কের পাশে পড়েছে। এই সড়ক দিয়ে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ ও পথচারী নিয়মিত যাতায়াত করেন। এই সড়কের পাশে রয়েছে রাবেয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া এই সড়ক দিয়ে ইয়াকুব তাজুল মহিলা ডিগ্রি কলেজ, শাহজালাল আইডিয়াল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ, সী-বার্ড কিন্ডার গার্টেন, আল-হেরা ক্যাডেট স্কুলসহ কয়েকটি প্রতিষ্টানের শত শত শিক্ষার্থী নিয়মিত যাতায়াত করেন। এ ভবনটি অনেক পুরাতন হওয়ায় নিচতলার ছাদ ও দেয়ালে বেশ কয়েকটি ফাটল ধরেছে। যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। ভবন ভেঙ্গে পড়লে শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা যেকোন সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
এমন অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা ভবন নির্মাণ কাজে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ বাঁধা দিলে সে বাধা অতিক্রম করেই নির্মাণ কাজ চলছে। ভবনের মালিক সিরাজ উদ্দিন আহমদ বাদশা এক প্রকার গায়ের জোরেই জরাজীর্ণ এই ভবনে কোন ধরণের নিয়মনীতি না মেনে ৫ তলা ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভবনের ৫ তলায় কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। ভবনটির বিভিন্ন তলার ছাদে বেশ কয়েকটি ফাটল রয়েছে। শুধু তাই নয় ভবনের ভিতরে অনেক কক্ষে সিলিংয়ের পলেস্তরা খসে পড়েছে। বাইরের দেওয়ালেও অনেক ফাটল রয়েছে এবং ফাটলগুলো রং করে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এতে যেকোনো সময় ভবনের ছাদ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এত ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে শ্রমিকেরা। ধারনা করা হচ্ছে ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে ওই ভবন ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় অনেক ভাড়াটে বাসা ছেড়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়েছেন। বর্তমানে যারা ভাড়াটে আছেন তারাও বেশ ঝুঁকির মধ্যে আছেন।
ভবনের তত্ত্বাবধায়ক কাওসার আহমদ সবুজ বলেন, ভবনের কাজ চলমান আছে। মধ্যখানে কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল। তবে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভবন নির্মানের অনুমতি সম্ভবত নিয়েছেন ভবন মালিক। এরচেয়ে বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।
নির্মানাধীন ভবনের বিষয়ে জানতে চাইলে ভবন মালিক সিরাজ উদ্দিন আহমদ বাদশা বলেন, ফাটল থাকলেও সমস্যা নেই আমি আমার নিজের জায়গায় ভবন নির্মাণের কাজ করছি। ভবন নির্মাণে পৌর কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি আছে কি এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কেন কাজ হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে ধরে বা আমার সাথে লেগে আপনার লাভ কি বলে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার তাঁর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, ভবন নির্মাণে কোন অনুমোদন নেই, পৌরসভা গঠিত হওয়ার আগে ভবন নির্মান করা হয়েছে। এখন অবৈধভাবে নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র মো. শফি আলম ইউনুছ বলেন, ভবনের কাজ বন্ধ রাখার জন্য ভবন মালিককে কয়েক বার চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তুু তিনি কোন কথা মানতেছেন না। চলমান কাজের বিষয়টি আমরা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
মন্তব্য করুন