কৃত্রিম একটি হাতে বাঁচবে মছুর আলীর সংসার, প্রয়োজন একটি কৃত্রিম হাত

September 14, 2020,

সাইফুল্লাহ হাসান॥ বাড়ির একমাত্র কর্তা মছুর আলী। মা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভালোই দিন যাপন করে আসছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দিনমজুর। এখন তিনি থমকে যাওয়া জীবনের সাথে লড়েই যাচ্ছেন।

মসুর আলীর বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা সীমান্তবর্তী লাঠিটিলা এলাকার ডুমাবাড়ি গ্রামে। তিন বছর আগে বাবার মৃত্যু ও নিজের বিয়ে শাদীর পর পরিবারের পুরো দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। শুরু হয় তার নতুন যাত্রা। নিজে দিনমজুর হলেও ১ ছেলে ও ৩ মেয়েকে মানুষের মত মানুষ করাই ছিল তার লক্ষ্য। মসুর আলীর রোজগার দিয়ে চলে ৯ জনে পুরো সংসার। তবে কখনোই হতাশ হন না তিনি। চার সন্তান ও স্ত্রী এবং নিজের মাকে নিয়ে হাসিখুশিতেই দিন পার করে আসছেন। কিন্তু হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত এক দুর্ঘটনায় সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হতে চলছে।

ঘটনাটি চলতি বছরের ২০ আগস্ট। এদিন মসুর জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা। প্রতিদিনের মত ঐদিন ধান ভাঙ্গার মেশিন নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। এরকম এক বাড়িতে ধান ভাঙ্গার সময় হঠাৎ করে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তার ডান হাতটি মেশিনের ভেতর চলে যায়। সাথে সাথে হাতের কনুই পর্যন্ত ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেন। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ঘটনার ৪/৫ দিন পর মসুর ডান হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়। কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে টাকার অভাবে বাড়িতে নিয়ে আসেন তার পরিবার।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ৩৫ বছর বয়সের মসুর আলী ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র হর্তাকর্তা। ধান ভাঙ্গার মেশিন তার মামাতো ভাই কিনে দিয়েছেন। মেশিন চালিয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে কোনমতে চলতো তার পরিবার। ধান মাড়াইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য কাজও করতেন তিনি। পরিবারের একমাত্র আশা- ভরসার জায়গা ছিল এই মসুর।

মসুর চিকিৎসার অর্থ জোগাতে না পারায় দিনরাত তার পরিবার কাটছে বিষণ্নতা আর হতাশায়।

স্থানীয় খোরশেদ আলম জানান, মসুর একমাত্র উপার্জনের সম্বল ছিল ধান ভাঙ্গার মেশিন। গ্রামে হাতেগোনা কয়েকটি মেশিনের মধ্যে ছিল তার এই মেশিনটি। খোরশেদ বলেন, ঘটনার পরপরই আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আর্থিক আবেদন চেয়ে অনেক পোস্ট করেছি, বড় বড় অনেক গ্রুপেও দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু সাড়া পেয়েছি। কিন্তু মসুর চিকিৎসার জন্য আরও বড় অঙ্কের টাকার প্রয়োজন।

এদিকে এ ঘটনাটি চোখে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মারুফ খান শাহীনের নজরে। তিনি কেয়ার ফাউন্ডেশন নামক একটি সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক। তার বাড়িও জুড়ী উপজেলায়। শাহীন করোনার জন্য গত ছয় মাস থেকে বাড়িতেই আছেন। মসুর চিকিৎসার টাকার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তার ফাউন্ডেশন এর অন্যান্য সদস্যদের কে নিয়ে। তার এই  উদ্যোগের ফলে প্রশংসায় ভাসছেন উপজেলার মানুষের কাছে।

কথা হয় মারুফ খান শাহীন এর সাথে। তিনি  বলেন, মসুর আলী ভাইয়ের ঘটনাটি জানার পর আমি তার বাড়িতে যাই। কৃত্রিম ফাংশনাল হাত লাগানোর জন্য উনার পরিবারের সঙ্গে কথা বলি। কৃত্রিম এই হাতটি লাগাতে ২ লক্ষ টাকার মতো লাগবে। কিন্তু তার পরিবারের পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা মোটেও সম্ভব নয়। যেখানে ঔষধ পত্র চিকিৎসা করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, টাকার অভাবে একজন মানুষ সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। তাই আমরা কয়েকজন মিলে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে এই উদ্যোগটি হাতে নেই। এপর্যন্ত আমরা ২৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছি। বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসেন তাহকে হয়তো আমাদের এ কার্যক্রম সফল হবে। তবেই একজন মানুষ তার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে। এ কাজের জন্য ০১৭১৪-৯৯১৯৭৭ এই নাম্বারে যোগাযোগ করে আর্থিক সহায়তা পাঠাতে পারেন।

এবিষয়ে জুড়ী উপজেলার ভইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাশ  বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। দুই-একদিনের মধ্যে উনার বাড়িতে যাবো। আমি নিজে এবং উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com