জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হুমকির সম্মুখীন মৌলভীবাজারের হাওড়গুলো

চন্দন রবিদাস॥ মৌলভীবাজার জেলা একটি হাওড়বেষ্টিত এলাকা। জেলায় হাওড় রয়েছে তিনটি। হাকালুকি হাওড় (কুলাউড়া ও বড়লেখা),কাউয়া দিঘি হাওড় (রাজনগর),এবং হাইল হাওড় (শ্রীমঙ্গল)। হাওড়ের কোল ঘেঁষে থাকা সীমান্ত নদী হীজল-তমাল গাছ করচ,নলখাগড়া বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য,নানা প্রজাতির বনজ,জলজ প্রাণী,হাওরের কিনার ঘেঁষা ও পানির উপর ভেসে চলা ডিঙ্গি নৌকা আর হাওড় পাড়ের বসবাসকারি মানুষের জীবন-জীবিকার সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করে। হাওড় অঞ্চলকে প্রকৃতি সাজিয়েছে তার অপার সাজে, জীববৈচিত্র আর প্রাকৃতিক বিচারে পর্যটকদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হচ্ছে হাওড় অঞ্চল। হাওড়ের রূপ-সৌন্দর্য-মাধূর্য স্বচক্ষে না দেখলে অনুভব করা যাবে না সেখানকার অপার প্রকৃতির ঐশ্বর্য। জীবনযাত্রার দিক থেকে অন্যান্য অঞ্চল থেকে হাওড় অঞ্চলের জীবনযাত্রা ভিন্ন প্রকৃতির। হাওড় অঞ্চলে অকাল বন্যা নতুন কোনো ঘটনা নয়। বছরের প্রায় অর্ধেক সময় হাওড় এলাকায় পানি থাকে। এক ফসলি বোরো ধান হাওড় অঞ্চলের কৃষকের প্রাণ। মূলত বোরো ধানই এখানে ভালো হয়। ঝড় ঝঞ্চায় প্লাবনে ও বন্যায় হাওড় অঞ্চলের মানুষ সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে।
অনেক সময় অনাহারে অর্ধাহারে তারা দিন কাটায়। প্রায় বছরই হাওড় অঞ্চলে বৈরী আবহাওয়া,অতিবৃষ্টি,অনাবৃষ্টি এবং অকাল বন্যার কারনে কৃষকের পোহাতে হয় কষ্টের জীবন। প্রতি বছরের বন্যায় ভেসে যায় কৃষকের পাকা ধান। কৃষকরা টাকার অভাবে সময়মতো সার,বীজ,কীটনাশক,কৃষি সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করতে পারে না। হাওড় অঞ্চলের আরেকটি সমস্যা আগাম বন্যার কারনে প্রায়শই ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কৃষকরা দূর্বিসহ অবস্থার মধ্যে পড়ে। প্রথম আলো পত্রিকার মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি আকমল হোসেন নিপু বলেন, মূলত হাওর ভরাটের কারনে জলজ উদ্ভিদ মাছ বা প্রাণীয় আবাসস্থল এবং জলজ কীটপতঙ্গ উজাড় হচ্ছে। হাওরের খালবিল খনন করতে হবে তাতে জলজ উদ্ভিদের সৃষ্টি হবে। জলজ উদ্ভিদ,হিজল,করচ, তমাল রোপন করতে হবে তাতে যেমন হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে তেমনি সৌন্দর্য্য বর্ধন হবে এবং পাখি ও মাছের আবাসস্থলের সৃষ্টি হবে। তাছাড়া কৃষকরা চাষাবাদের ক্ষেত্রে কীটনাশক ব্যবহার না করে জৈব সার ব্যবহার করা উচিত,সাথে সাথে পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে। হাওড় অঞ্চলের মানুষ এক সময় বলতো মাছ আর ধান হাওড়ের প্রাণ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বিলীন হয়ে যাচ্ছে হাওড়ের প্রাণ। কৃষকরা জমিতে ব্যবহার করেন কীটনাশক । আর এই কীটনাশকের ফলে মাছ মরছে প্রতিনিয়ত, সাথে সাথে হাওড়ের পানি হচ্ছে দূষিত। হাওরের উন্নয়নে কর্মসূচী গ্রহন করলে একদিকে যেমন হাওড়বাসী উপকৃত হবে, তেমনি দেশ ও অর্থনীতিতে এগিয়ে যাবে। হাওড় এলাকাকে পর্যটন উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারলে বদলে যাবে হাওড়ের জীবন ও বৈচিত্র।
মন্তব্য করুন