জুড়ীতে ইজারাদার ও বন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে বাঁশ মহালে হরিলুট

September 2, 2021,

আল আমিন আহমদ॥ জুড়ী উপজেলার জুড়ী রেঞ্জ ২ এর অধীনে পুঁটিছড়া বনবিট এলাকার পুঁটিছড়া বাঁশ মহালে চলছে হরিলুট। খোদ বাঁশ মহালের ইজারাদারের সাথে বনবিট কর্মকর্তার যোগসাজসে এই হরিলুট চলছে বলে জানা গেছে।
২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার অনুসন্ধানে জানা যায়, আব্দুল কাদির রুপ নামের পার্শ্ববর্তী কুলাউড়া উপজেলার এক বাসিন্দা পুঁটিছড়া বাঁশ মহালসহ আরো দুইটি বাঁশ মহাল ইজারা নেন। চলিত বৎসরের মুলি বাঁশ কাটার নিষেধাজ্ঞার সময় পেরিয়ে গেলে গত ১৭ আগষ্ট থেকে পুনরায় বাঁশ কাটা শুরু হয়। আহরিত বাঁশের প্রথম টান হয় ১৯ আগষ্ট। বন বিভাগ সূত্র জানায় এদিন মোট ১২৪ বান্ডেল বাঁশ আহরণ করা হয়। আর গত ২৬ আগষ্ট দ্বিতীয় দফা আহরিত বাঁশের টান হয়। এই টানে ১০৬ পাতা মুলি, ৭০ পাতা টেংরা মুলি ও ১১৫ পাতা মাখাল বাঁশের টান হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ২৮ হাজার ২ শত ৫০ টি বাঁশ আহরন করা হলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায় এর দ্বিগুণ পরিমান বাঁশ কর্তন করা হয়। এসব বাঁশ ডিপু থেকে সরাতে হলে ডি ফরমের প্রয়োজন হয়। আর ডিপু থেকে স্থানান্তর করার ডি ফরম নিয়েই ইজারাদার নিয়মিত বাঁশ পরিবহন করে জুড়ী নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দেন। তার পর এক সময় এসব বাঁশের বৈধ টিপি দিয়েই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে ইজারাদার। আর ইজারাদারের অবৈধ এ কারবারে পূর্ণ সহযোগিতা করে যাচ্ছে স্থানীয় বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ। অনুসন্ধান কালে ইজারাদারের আহরিত বাঁশের পাহারাদার মোঃ হেলাল মিয়া জানান এ পর্যন্ত যে, বাঁশ আহরন করা হয়েছে তা ঠিকঠাক ভাবে গণনা করলে কেউ ইজারাদারকে দোষী বানাতে পারবেন না। তবে তিনি স্বীকার করে বলেন সঠিক গণনায় কিছুটা এদিক সেদিক হতে পারে। পুঁটিছড়া বিট কর্মকর্তা প্রবীর চন্দ্র মন্ডল এর নিকট জানতে চাইলে তিনি অতিরিক্ত বাঁশ কাটার সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন ডিপো থেকে ডি ফরম অনুযায়ী বাঁশ ডেলিভারী দেওয়া হয়। ডি ফরমের অতিরিক্ত বাঁশ কেটে আহরন করা হলে আমাদের চোখে পড়ত আর সঙ্গে সঙ্গে তা আটকে দিতাম আমরা। আর বাঁশের ঘোষণার চেয়ে অতিরিক্ত বাঁশ থাকার অভিযোগটি উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন বাঁশতো জুড়ী নদীতে নোঙ্গর করা আছে আপনারা চাইতে তা গুণে দেখতে পারেন। টানের দিন অতিরিক্ত ডি ফরম কাটা হয় এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন বিটে কোন ডি ফরম কাটা হয় না। ডি ফরম দেয়া হয় রেঞ্জ অফিস থেকে। তারাই বলতে পারবে কতটা ডি ফরম দেয়া হয়। এ ব্যাপারে জুড়ী রেঞ্জ ২ এর রেঞ্জ অফিসার মোঃ আলাউদ্দিন মিয়ার নিকট জানতে চাইলে তিনি এসব কিছু এড়িয়ে গিয়ে বলেন এখন রেঞ্জ এর দায়িত্বে রয়েছেন সহকারী বন সংরক্ষক সাহেব। আপনারা তার নিকট থেকে সম্পূর্ণ তথ্য পেতে পারেন। সহকারী বন সংরক্ষক (শিক্ষানবিশ) শেখ আবুল কালাম আজাদের মুখো মুখি হলে তিনি বলেন আমি এই রেঞ্জে শিক্ষানবিশ সহকারী বন সংরক্ষক হিসাবে সদ্য যোগদান করেছি। কোন তথ্যই পরিপূর্ণভাবে আমি দিতে পারবো না। বেশি কিছু জানতে চাইলে আপনারা বন বিভাগের ওয়েব সাইট ঘেটে জানতে পারবেন, ওখানে সব কিছু দেয়া আছে। আর যদি বাঁশ আহরনে ইজারাদার কোন অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে থাকেন তাহলে সু-নির্দিষ্ট তথ্য প্রমান দিন। আমি কঠোর ভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো। এ ব্যাপারে ইজারাদার আব্দুল কাদির রুপ এর মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমি সরকারকে বেশি রেভিনিউ দিয়ে টেন্ডার ড্রপ করেছিলাম। আমার প্রতিপক্ষরা মহালগুলোর ইজারা আনতে না পেরে ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব অভিযোগ করছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com