দেড় সহস্রাধিক পরিবারের নিজের বাড়িতে প্রথম ঈদ

July 22, 2021,

বিকুল চক্রবর্তী॥ স্বপ্নের বাড়িতে প্রথম ঈদ। আগে যেখানে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুরবানীর মাংস চেয়ে আনেতেন এবার বঙ্গবন্ধুর নামে তারাই সম্মিলত কুরবানী দিয়ে মাংস ভাগাভাগী করে নিয়েছেন। নিজের ঘরে প্রথম ঈদ। কথা হয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারে ঠিকানা পাওয়া শ্রীমঙ্গল মোহাজেরাবাদ আশ্রায়নের বীরঙ্গনা মায়া খাতুনের সাথে। চোখে আনন্দ অশ্রু নিয়ে বীরঙ্গনা মায়া খাতুন বলেন, থাকতেন অন্যের বাড়িতে। ভাঙ্গাঘর চালের টিনে চুইচুই পানি পড়তো। ঘরের ভেড়া খসে পড়তো। ঈদ করতেন কখনও অন্যের বাড়িতে কখণ ও ভাসমান অবস্থায়। মাংস আনতেন মানুষের বাড়ি থেকে হাত পেতে পেতে। এবার মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে উপহার পাওয়া নিজের বাড়িতেই করলেন ঈদ। নিজের ঘরের সামনেই হয়েছে সম্মিলিত কুরবানী। তার ভাগে ও পড়েছে বেশ মাংস। ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে সিন্দুরখান থেকে বেশ বেশ কয়েকজন স্বজন আসবেন ঈদের দাওয়াত খেতে। এ যেন এক অন্যরকম অনুভুতি। এ অনুভুতি শুধু মায়া খাতুনের নয়,নতুন ঘর পাওয়া হৃদয় মিয়া, সুফিয়া বেগম, হালিমা বেগম, হাসনাে বগম, রুনা বেগমসহ জেলার দেড় সহস্রাধিক পরিবারের।
শুধু বয় স্করানয় আশ্রায়ন প্রকল্পের শিশুদের মধ্যে ও আনন্দের শেষ ছিলো না। নতুন জামা পড়ে তারা এক ঘর থেকে আরেক ঘরে দাওয়াত খেয়েছে।অনেকে বেলুন দিয়ে খেলেছে। কেউ খেলেছে ফুলগুটি। সংসারে শত অভাব অনটন থাকলে কারো চোখে মূখে ছিলো না বিষাদের কোন ফুলকি। মানুষগুলোর আনন্দ দেখে মনে হয়েছিলো এই তো ঈদ।
আশ্রায়নের অপর বাসিন্দা হৃদয় মিয়া জানান, শুধ ুনিজের ঘর নয়। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের কাছ থেকে উপহার পেয়ে তারা এবার বড় একটি গরু বঙ্গবন্ধুর নামে কুরবানী দিয়েছেন। মোহাজেরাবাদ ও বেগুন বাড়ি দুটি আশ্রায়নে প্রত্যেকেই সমান ভাবে মাংস ভাগা ভাগিকরে নিয়েছেন।
মোহাজেরাবাদের ওই আশ্রায়নে একমাত্র হিন্দু ছিলেন বীরাঙ্গনা শিলাগুহ । ঈদ আনন্দে সামিল হয়েছেন তিনিও। শিলাগুহ জানান, জেলা প্রশাসক মুসলিমদের জন্য কোরবানীর গরু দিয়েছেন। আর শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে দুটি মুরগী দিয়েছেন। সকালে আশ্রায়নের ঘরে ঘরে চা সেমাই এর দাওয়াত খেয়েছেন। ঈদে এতো আনন্দ হয় এই প্রথম তিনি অনুভব করলেন।
এই ঈদের আনন্দ যজ্ঞে সামিল হতে দুপুরে সেখানে যোগ দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। বেশ কিছু সময় তিনি সেখানে কাটান। কারো ঘরে সেমাই, কারো ঘরে চা আর কারো ঘরে ডিম মাম লেটখান।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, ঠিকানাহীন মানুষে রাতাদের নিজের ঠিকানায় প্রথম ঈদ করছে।তাদের ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে তিনি ছুঠে আসেন এখানে। সরল এই মানুষগুলোর সাথে তিনি ঈদ করেছেন। কিছু সময়ের জন্য তিনি যেন সব ভুলে গিয়েছিলেন। মনে হচ্ছিল যেন তিনি ওই পরিবার গুলোরই সদস্য।প্রধানমন্ত্রী এই ঠিকানা হীন মানুষের জন্য বিশাল উদ্যোগ নিয়েছেন। ঠিকানা হীন মানুষদের ঠিকানা করে দেয়ার যে স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রীর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। যা সম্পন্ন হলে বাংলাদেশে কেউই আর ভাসমান থাকবেন না। সরল এই মানুষগুলো আজ মন ভরে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেছে।
আর মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানালেন,অন্য যে কোন জায়গার চেয়ে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের প্রকল্পগুলো স্বতন্ত্র। যার যোগাযোগ থেকে জীবিকায়ন সকল সুবিধা বিরাজ মান। এখানে আশ্রয় হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনক রা বীর মাতাদের ও। পরিবারসহ তিনি নিজে ও করোনা আক্রান্ত। তাই নিজে বের হতে পারেন নি। না হলে ঈদের দিনে বিভিন্ন আশ্রায়ন ঘুরে বেড়াতেন। তিনি জানান, মোহাজেরা বাদে তিনি কুরবানীর জন্য একটি গরু দিয়েছেন। যেটি বঙ্গবন্ধুর নামে উৎসর্গ করে আশ্রায়ন বাসী কোরবানী দিয়েছেন।তারা যে ঈদে আনন্দ করছেন তিনি ঘরে বসেই খবর নিয়েছেন। শুনে তাঁর খুব ভালো লেগেছে।
নিরাশ্রয় এ মানুষগুলো আশ্রয় পেয়ে এবারের ঈদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য আল্লাহর কাছে দু হাত তুলে প্রাথর্না করেছেন তিনি যেন ভালো থাকেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com