পদোন্নতি পেলেন মৌলভীবাজারের ৫ পুলিশ কর্মকর্তা

স্টাফ রিপোর্টার॥ পদোন্নতি পেয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের বিভিন্ন পদে দায়িত্বে থাকা ৩ জন ও ওখানে থেকে সদ্য অন্যত্র বদলি হওয়া আরো ২ জন কর্মকর্তা। তারা সকলেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে এখন মৌলভীবাজারে কর্মরত এবং অন্য ২ জন একই পদে বদলী জনিত কারনে এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেট জেলা পুলিশে কর্মরত আছেন।
পদোন্নতি পাওয়া ওই কর্মকর্তারা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম (ডিএসবি), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক (অপরাধ ও প্রশাসন), মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শাহাদাত হোসেন।
জানা যায় মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক এর বিসিএস ব্যাচ ছিল ২৪তম ব্যাচ। তিনি বর্তমান কর্মস্থলে (মৌলভীবাজারে) যোগদান করেন ২৩ মে ২০১৬।
মোহাম্মদ সারোয়ার আলম এর বিসিএস ব্যাচ ছিল ২৫ তম ব্যাচ। তিনি বর্তমান কর্মস্থল (মৌলভীবাজারে) যোগদান করেন ০৫ জুলাই ২০১৭।
মোঃ শাহাদাত হোসেন এর বিসিএস ব্যাচ ছিল ২৫তম ব্যাচ। তিনি ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মৌলভীবাজারে যোগদান করেন। তিনি মৌলভীবাজারে যোগদানের পর থেকে বেশ ক’টি চাঞ্চল্যকর রহস্যজনক খুনের ক্লু উদঘাটন ও প্রকৃত অপরাধী ও দাগী আসামীদের সন্ধান দিয়ে জনসাধারনের মাঝে পুলিশ প্রশাসনের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।
এছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর হোসেন ও রওশনুজ্জামান সিদ্দিকী দীর্ঘদিন যাবত মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ, সদর ও কুলাউড়া সার্কেলে বেশ সুনামের সাথে কাজ করেছেন। আলমগীর হোসেন বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ও রওশনুজ্জামান সিলেট জেলা পুলিশে কর্মরত আছেন। বিশেষ করে আলমগীর হোসেন মৌলভীবাজার ও কুলাউড়ায় থাকা কালে অপরাধীদের আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার দৃঢ় চেতা সাহসী পদক্ষেপের কারনে ওই এলাকায় চুরি,ডাকাতি ও ছিনতাই অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়। এতে চুরি,ডাকাতি ও ছিনতাই নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় থাকা প্রবাসী অধ্যুষিত এ অঞ্চলের মানুষ অনেকটা স্বস্থি পান। তিনি ওইসকল স্থানে কর্মস্থলে থাকা অবস্থায় তার সততা নিষ্ঠা ও কর্মক্ষেত্রে আন্তরিকতার কারনে সর্বসাধারণের অতি আপজন ছিলেন। সর্বশ্রেণীর মানুষের ভালোবাসা অর্জন যা পুলিশ বিভাগে সচরাচর চোখে পড়ে কম। তাই সাবেক ওই কর্মস্থলের মানুষ তার পদোন্নতিতে খুশি। তাদের পদোন্নতিতে অভিনন্দন জানিয়েছেন এজেলার বাসিন্দারা। জানা যায় বুধবার এই ৫ কর্মকর্তাসহ ২৩৫ কর্মকর্তাকে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর মধ্যে ৫ জন নিয়মিত এবং ২৩০ জন সুপার নিউমারারি পদোন্নতি পেয়েছেন।
এর আগে গত ৪ জুলাই পুলিশ সদর দফতর থেকে পুলিশের ৪৯৫ কর্মকর্তাকে সুপার নিউমারারি পদোন্নতি দেওয়ার প্রস্তাব করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। ওই সভায় অতিরিক্ত ডিআইজি ২০টি, এসপি ৪৫টি ও অতিরিক্ত এসপি ১৩০টি পদে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত হয়। পদোন্নতিতে ১৫ ও ১৭, ১৮, ২০, ২১, ২২, ২৫, ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় আনা হয়। নামের তালিকা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়। পুলিশ সদর দফতরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ওঅ্যান্ডএম) এস এম আখতারুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই চিঠি যাচাই-বাছাই শেষে ২৩০ জনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়- বাংলাদেশ পুলিশ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, যা রাষ্ট্রের অব্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে। ক্যাডার সার্ভিসে বিসিএস প্রশাসন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন্দ্রীয় ক্যাডার হিসেবে বিবেচিত। প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে পুলিশ ক্যাডারের সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে খুবই ঘনিষ্ঠ। দুটি বিভাগই সরকারের মাঠপর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করে। প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোর তুলনা করলে পুলিশ ক্যাডারের তদারকি পর্যায়ে পদের অপ্রতুল খুব সহজে দৃষ্টিগোচর হয়।
চিঠিতে প্রশাসন এবং পুলিশ ক্যাডারের সাংগঠনিক কাঠামোর তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রশাসন ছাড়াও অন্যান্য ক্যাডার, সড়ক ও জনপদ, ফরেন সার্ভিস, শুল্ক ও আবগারি, কর ইত্যাদির তুলনায়ও বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চতর পদে ব্যাপক ঘাটতি তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, প্রশাসন ক্যাডারে উপ-সচিব থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ে সুপার নিউমারারি পদোন্নতি দেওয়া হয়। অন্যান্য ক্যাডারেও এই পদোন্নতি দেওয়ার রীতি রয়েছে। সেই রীতি অনুযায়ী, পুলিশ সুপার থেকে অতিরিক্ত আইজিপি পদে যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের সুপার নিউমারারি পদোন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে।
সেই চিঠির আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ পুলিশ সুপার পদে (গ্রেড-৫) সুপার নিউমারারি পদোন্নতি দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে পুলিশের ২৪টি ইউনিটের সাংগঠনিক কাঠামোতে ২৩০টি পদ অস্থায়ীভাবে সৃষ্টির জন্য ৩১ অক্টোবর (২০১৮) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ সম্মতি দেয়। এরপর বিষয়টি প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে সুপারিশের জন্য উপস্থাপন করা হয়। সচিব কমিটির অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। সেখান থেকেও এ ফাইল অনুমোদন দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন