পোল্ট্রি ফার্মের দূর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী, পরিদর্শনে গিয়ে ফেঁসে গেলেন জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক

May 5, 2020,

স্টাফ রিপোর্টার॥ জুড়ীতে একটি পোল্ট্রি ফার্মের দূর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। বিগত তিন বছর যাবৎ এই ফার্মকে উচ্ছেদের জন্য স্থানীয়রা বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দেয়। কিন্তু কোন অভিযোগকে তোয়াক্ষা না করে ফার্মের মালিক দীনবন্ধু ও তার সহযোগীরা বহাল তবিয়তে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।
সর্বশেষ গত ১ মে শুক্রবার রাতে তারাবির নামাজ শেষে জুড়ীর আমতৈল গ্রামে অবস্থিত ওই ফার্মের পাশে রাখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার স্বরূপ দেয়া ধান কাটার হারভেষ্টার মেশিন পরিদর্শনে যান জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মোঈদ ফারুক। তাঁর উপস্থিতির কথা শুনে স্থানীয়রা সেখানে জড়ো হন। এ সময় স্থানীয়দের সাথে ফার্মের মালিক দিনবন্ধু ও তার সহযোগীদের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সংগঠিত হবে। পরদিন এ ঘটনায় ফার্মের মালিক দীনবন্ধু সেন জুড়ী থানায় উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করে এবং স্থানীয় আরও ১১ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় চেয়ারম্যানকে আসামী করায় জুড়ী উপজেলা জুড়ে বইছে নিন্দার ঝড়। চেয়ারম্যানের দাবি, তাকে সামাজিকভাবে হেনস্তা করা জন্য পূর্বের একটি পক্ষ এ নাটক সাজিয়েছে। যা বলতে গেলে আমার অধীনন্থরাই আমাকে ফাঁসাতে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ রাখছে হেনস্তা করতে।
স্থানীয় ও প্রতক্ষ্যদর্শী সূত্র জানায়, উপজেলা পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের ওই গ্রামে ‘বন্ধু পোলট্রি ফার্ম’ নামে দীনবন্ধু সেন একটি মুরগীর খামার পরিচালনা করে আসছেন। খামারটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকায় দুর্গদ্ধে অতিষ্ট হয়ে উঠেন স্থানীয়রা। এনিয়ে দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় কয়েকটি পরিবারের সাথে খামার মালিকের বিরোধ চলছিলো। যার ফলশ্রুত পাল্টাপাল্টি দু’টি মামলাও চলমান রয়েছে আদালতে।
সূত্র জানায়, খামার মালিক দীনবন্ধু আব্দুল মতিনদের বিরুদ্ধে সহকারী জজ আদালত (কুলাউড়া) মৌলভীবাজারে একটি নিষেধাজ্ঞা মামলা (নং- ১৪০/২০১৯) দায়ের করেন। পরে আব্দুল মতিন বাদি হয়ে খামার দ্বারা পরিবেশ দূষিত হচ্ছে মর্মে খামার মালিকের বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি ফৌজদারি মামলা (নং ৫৯২/১৯-জুড়ী) দায়ের করেন।
এদিকে গত শুক্রবার ১ মে রাতে তারাবির নামাজ শেষে জুড়ীর আমতৈলে অবস্থিত ফার্মের পাশে রাখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার স্বরূপ দেয়া ধান কাটার মেশিন পরিদর্শনে যান জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুক। তাঁর উপস্থিতির কথা শুনো স্থানীয়রা সেখানে জড়ো হয়। এসময় স্থানীয়দের সাথে ফার্মের মালিক দীনবন্ধু ও তার সহযোগীদের সাথে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে দীনবন্ধুর পক্ষের স্থানীয় এক বাসিন্দাকে আঘাত করলে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি চেয়ারম্যানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। এসময় উত্তেজিতরা খামরটি ভাঙচুর করে। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
পরদিন এ ঘটনায় ফার্মের মালিক দীনবন্ধু সেন জুড়ী থানায় উপজেলা চেয়ারম্যানকে ১ নং আসামী করে এবং স্থানীয় আরও ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।
দীনবন্ধুর ওই ফার্মকে নিয়ে এলাকাবাসী সঙ্গে বিবাদকে ইতোপূর্বে কয়েকবার মীমাংসার চেষ্টা করেন জুড়ীর বাসিন্দা সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি, নাগরিক অধিকার ও আইন সহায়তা ফোরামের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানান, ২০০৬ সালে দীনবন্ধু সেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে ফার্মটি চালু করেন দীনবন্ধু। পরবর্তীতে স্থানীয় আব্দুল মতিনদের সাথে পরিবেশ দূষণের অভিযোগে দ্বন্ধ সৃষ্টি হয়। আব্দুল মতিনরা এই ফার্মটি উচ্ছেদের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানসহ একাধিক দফতরে অভিযোগ করেন।

তিনি জানান, খামারের মালিক জানতেন না শুধু স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে পোল্ট্রি ফার্ম চালু করা যায় না। এক্ষেত্রে পরিবেশ ছাড়পত্রসহ প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের নিবন্ধনের প্রয়োজন হয়। বিষয়টি জানার পর ফার্মের মালিক এসব দপ্তরে আবেদন করেন।
এ প্রসঙ্গে জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ ফারুক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভর্তুকি দিয়ে জুড়ীতে ধান কাটার দু’টি হারভেস্টার মেশিন উপহার দেন। দিনে তা দেখতে যেতে পারিনি। রাতে তারাবীর নামাজ শেষে মেশিনগুলো দেখতে আমতৈলে যাই। দীনবন্ধুর খামারের পাশে রাখা হারভেস্টার মেশিনের ক্রেতা শাহজাহানসহ উপস্থিত কয়েকজনের সাথে এবিষয়ে আলাপ করছিলাম। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে স্থানীয় অনেকেই সেখানে উপস্থিত হয়। এক পর্যায়ে ফার্মের বিষয়ে কথা উঠলে স্থানীয়দের সাথে ফার্মের মালিক পক্ষের কথা কাটাকাটি হয়। পরিস্থিতি আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে আমি থানা প্রশাসনকে খবর দেই। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
তিনি বলেন, যেহেতু পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না তাই হামলার প্রশ্নই আসে না। আমার হাতে ছিলো এন্টি স্মোক যন্ত্র। যেগুলোকে তারা অস্ত্র হিসেবে প্রকাশের অপচেষ্টা করে। আমার নির্বাচনী প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসাতে উঠেপড়ে লেগেছে। এক সময় সত্যের জয় হবে।
মামলা প্রসঙ্গে জুড়ী থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম সরদার বলেন, থানায় মামলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com