ববারে কি ব্যামার আইলো, কাম কাইজ সব বন্দ কী খাইয়া রোজা থাহুম?

সাইফুল্লাহ হাসান॥ বাবারে কী এহটা ব্যামার (রোগ) আইলো, আওয়ার ফর (পর) থেহে (থেকে) আমার কাম কাইজ সব বন্দ (বন্ধ) হইয়া গেছে গা। কী করাম (করবো), কই জামু কে খায়াইবে। কাম কাজ না করলে খামু কী? এহন (এখন) আবার রোজার মাস আইয়া (এসে) পড়ছে। জিনিসের জেই (বেশি) দাম। কী খাইয়া রোজা থাহুম?’
এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বেলাগাও গ্রামের মিলন বেগম। যিনি গ্রামে গোলাপীর মা নামে পরিচিত। গোলাপীর মায়ের বয়স ৭০ বছর। তিনি ১০ থেকে ২০ টাকার বিনিময়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন জনের বাড়িতে ছুটা বুয়ার কাজ করতেন। কিন্তু করোনার কারণে সেই কাজও বন্ধ।
গোলাপীর মা বলেন, ‘বইন ফুত এজ্ঞুয়া (একজন) আছে হেতে (সে) কাম (কাজ) করিয়া মাজে মাজে কিছু টাহা পয়সা দিত, এহন হেরও কাম কাইজ বন্ধ। ঘরের মাইজে (মধ্যে) খাওয়ন নাই, হের (এই) লাইগা (জন্য) এহদিন (একদিন) বার হইছিলাম কামে (কাজে) জাইব, পুলিশ দেইহা আর কামে জাই নাই। কছিন (বলতো) বাবা কাম না করলে খাওন দিবো কেডা । কুদ্দর (কিছু) ডাইল চাইল পাইছিলাম এডি (এইটা) ক’দিন জাইবো বেশিহত্তে (বেশি হলে) এহদিন কী দুই দিন জাইবো।’
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, মিলন বেগম প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ১০ থেকে ১৫টি বাসায় কাজ করতেন। তার স্থায়ী কোনো বাসায় কাজ ছিল না। কোনা বাসা থেকে ১০ টাকা আবার কোনো বাসা থেকে ২০ টাকা পেতেন। আবার কেউ চাইলে ভাত খাওয়াতো। এভাবেই ছুটা কাজে তার কোনোমতে দিন চলছিল। কিন্তু করোনার কারণে তিনি কাজ করতে পারছেন না।
গোলাপীর মা জানান, ছোট থাকতেই মা-বাবা দুজনই মারা যান। অল্প বয়স থেকেই মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। মিলন বেগমের এক মেয়ে। অভাবের কারণে তাকেও পড়ালেখা করাতে পারেন নাই। এভাবেই কাজ করে কিছু টাকা পয়সা জমিয়ে তাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। দুই বছর আগে তার স্বামীও তাকে ছেড়ে চলে যান।
এই বয়সেও কাজ করে খাওয়া বিষয়ে তিনি জানান, মানুষের কাছে হাত পাততে তার লজ্জা করে। এ কারণে নিজে আয় করেন। কিন্তু করোনার কারণে তার কাজ বন্ধ। তাই রমজান মাসে কী খেয়ে রোজা রাখবেন তা নিয়ে চিন্তায় আছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. ফজলু মিয়া বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই ত্রাণ দিচ্ছি অনেককে। চেয়ারম্যানকে জানিয়ে দ্রুত তার জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে।’
মন্তব্য করুন