বড়লেখায় স্কুলছাত্র ইসতিয়াককে কারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল ? মায়ের ধারণা কিডনি খুলে নেওয়ার অপচেষ্টা

September 5, 2021,

আব্দুর রব॥ বড়লেখার আরকে লাইসিয়াম স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইসতিয়াক হাসান (১৪)। ১ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে সাতটা প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশে সে বাড়ি থেকে বের হয়। বারইগ্রাম এলাকায় একটি অটোরিকশায় ওঠেছিল। পৌরশহরের পানিধার এলাকায় পৌঁছার পর অটোরিকশাটির চালক তাকে জানায় অটোরিকশাটি নষ্ট হয়ে গেছে। পরে ওই অটোরিকশাচালক পানিধার এলাকায় তাকে চার চাকার (অটোরিকশা) সবুজ রঙের একটি গাড়িতে তুলে দেয়। ওই গাড়িতে ওঠার পর সেটিতে বসে থাকা এক নারী ইসতিয়াকের নাম-পরিচয় ও রক্তের গ্রুপ জানতে চায়। এসময় ইসতিয়াক নিজের নাম-পরিচয় ও রক্তের গ্রুপ বলেছিল। পরে সে ঘেমে গেছে বলে ওই নারী তাকে একটি টিস্যু এগিয়ে দিয়ে ঘাম মুছতে বলে। ইসতিয়াক টিস্যুটি ভেজা জানালে ওই নারী জানায়, এটি বিদেশি টিস্যু। এরপর মুখ মুছতেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে ইসতিয়াক। বেলা সাড়ে ১১টায় জ্ঞান ফিরলে ইসতিয়াক নিজেকে একটি নির্জন টিলায় পাতার ওপর শোয়া অবস্থায় আবিস্কার করে। এই সময়ে তার সাথে কী ঘটেছে তার কিছুই মনে নেই ইসতিয়াকের।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ইসতিয়াক। কিন্তু এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি। অজানা এক আতঙ্ক যেন তাড়া করছে তাকে। রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের এই ঘটনাটির বর্ণনা দিয়েছে ইসতিয়াকের পরিবার। তার মা লাইলি আক্তার জানান, এই ঘটনায় তিনি থানায় জিডি করেছেন। ইসতিয়াক উপজেলার মুছেগুল গ্রামের কয়েছ আহমদের ছেলে। এদিকে প্রশ্ন ওঠেছে, দিন-দুপুরে কে বা কারা ইশতিয়াককে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, আবার ফেলেও গিয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য কি ছিল।
ভুক্তভোগী ইসতিয়াক হাসান জানায়, জ্ঞান ফেরার পর সে একটি টিলার ওপরে পাতার ওপর শোয়া অবস্থায় দেখতে পায়। তখন তার গায়ে কিছুই ছিল না। বইয়ের ব্যাগও দূরে রাখা ছিল। পরে দ্রুত সেখান থেকে নেমে দৌঁড়াতে থাকে। কিছুপথ এসে একটি পাকা সড়ক পেয়ে দাঁড়ায়। এসময় একটি অটোরিকশা দেখে চালককে সবকিছু খোলে বললে তিনি শোনে এনে নামিয়ে দিয়েছেন। আমি গাড়িতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। তবে কোথায় নামিয়ে দিয়েছেন ঠিক মনে নেই। পরে হঠাৎ দেখি আদালত এলাকায় আছি। সেখান থেকে একটি অটোরিকশায় ওঠে পানিধার নেমে মাকে কল দিয়ে বিষয়টি জানাই। পরে মা এসে আমাকে বাড়িতে নেন। বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে যাই। পরে আমাকে হাসপাতাল নেওয়া হয়। সে জানায়, তার ডান হাতের আঙুলে সুঁচ জাতীয় কিছুর দাগ রয়েছে। এখনও তার শরীরিক দুর্বলতা কাটেনি।
ইসতিয়াকের মা লাইলি বেগম রোববার বিকেলে বলেন, প্রতিদিন সকালে আমার ছেলে বড়লেখায় এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়। ঘটনার দিনও সে প্রাইভেট পড়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু কে বা কারা দিন-দুপুরে তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তার শরীর এখনও দুর্বল। ডান হাতের আঙুলে সুঁচের দাগ রয়েছে। কারও সাথে তাদের কোনো শত্রুতাও নেই। আর তার ছেলেও শান্ত স্বভাবের। তার ধারণা, হয়তো কোনো চক্র তার ছেলের কিডনি নেওয়ার জন্য তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। রক্তের গ্রুপের সাথে না মিলায় তাকে নির্জন স্থানে ফেলে গেছে। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে একধরনের ভয় কাজ করছে। আজ আমার ছেলের সাথে এরকম ঘটনা ঘটেছে। কাল আরও কারও সাথে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি জড়িতদের খুজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রত্নদ্বীপ বিশ্বাস বলেন, ছেলেটি শনিবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তার শরীরিক অবস্থা দেখেছি ঠিক আছে। ওর বয়স কম। হয়তো খুব ভয় পেয়েছে। কিছুদিন গেলে হয়তো পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com