ভালো থাকিস বাবারা, ভালো হয়ে ফিরে আসিস

June 26, 2020,

স্টাফ রিপোর্টার॥ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দীর্ঘদিনের কলহ। ফলে স্বামীর বাড়িতে দুটি শিশু সন্তান রেখে স্ত্রী চলে যান মায়ের কাছে। একাকীত্ব ও দুটি শিশুকে লালনপালন করতে গিয়ে মানসিকভাবে অস্থির হয়ে ওঠেন স্বামী আজগর আলী। এ থেকেই তিনি রাতের আঁধারে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রী ও শাশুড়িকে খুন করেন। ঘটনার পর পুলিশের হাতে গ্রেফতারে হয়ে বর্তমানে কারাগারে আজগর আলী।
মা-নানি মারা গেছেন। বাবা জোড়া খুনের আসামি হয়ে কারাগারে। অসহায় দুটি শিশুকে দেখার কেউ নেই।পুলিশের সহযোগিতায় এখন তাদের ঠাঁই হয়েছে সরকারি এতিমখানায়। মঙ্গলবার ২৩ জুন মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপারের নির্দেশে শিশু দুটিকে সিলেটের একটি এতিমখানায় রেখে এসেছেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আশরাফুজ্জামান। শিশু দুটির নাম ইব্রাহিম মিয়া (১০) ও ফাহিম মিয়া (৫)।
মামলার বিবরণ ও আসামির জবানবন্দী সূত্রে জানা যায়, গত ৪ জুন রাতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের আশিদ্রোন ইউনিয়নের পূর্ব জামসী গ্রামের জায়েদা বেগম (৫৫) ও তার মেয়ে ইয়াসমিন আক্তার (৩০) নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন ৫ জুন দুপুর ১২টার দিকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদেরকে খুন করেন ইয়াসমিনের স্বামী আজগর আলী। তার বাড়ি সিন্দুরখান ইউনিয়নের বেলেরতল এলাকায়।
ইসয়ামিন-আজগর দম্পতির সংসারে দুটি ছেলে সন্তান। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আনুমানিক প্রায় ১৫ মাস আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার জের ধরে দুই সন্তান রেখে ইয়াসমিন তার মায়ের সঙ্গে মায়ের বাড়িতে চলে যান। তারপর থেকে সেখানেই অবস্থান করে আসছিলেন। এ নিয়ে অনেক বিচার-সালিশ হয় কিন্তু ইয়াসমিন আর স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসেননি। দুটি সন্তান নিয়ে আজগর আলী তার দাদির সঙ্গে বসবাস করতেন। ইয়াসমিন আসতে রাজি না হওয়ায় আজগরের মনে বিশ্বাস জন্মায় যে ইয়াসমিনের মা তার মেয়েকে স্বামীর বাড়ি না যেতে প্রলুব্ধ করছে। এতে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আজগর স্ত্রী ও শাশুড়িকে হত্যা করেন। ঘটনার পর আজগরকে সিন্দুরখান এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের আজগর তার স্ত্রী ইয়াসমিন ও শাশুড়িকে হত্যার দায় স্বীকার করে হত্যার বর্ণনা দেন।
এরপর থেকে তাদের দুই শিশু সন্তানের দায়িত্ব নেয় মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ। তাদেরকে খাবার এবং কাপড় দেয় পুলিশ। কিন্তু দুই শিশুকে দেখার কেউ না থাকায় অবশেষে মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের বাগবাড়ী সরকারি শিশুসদনে (এতিমখানা) পাঠিয়েছে পুলিশ।
মৌলভীবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আশরাফুজ্জামান বলেন, সচেতন মহলের পরামর্শ ও পুলিশ সুপারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে শিশু দুটিকে সরকারি এতিমখানায় পাঠানো হয়েছে। অনেকেই তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং জীবনের নিরাপত্তার জন্য এতিমখানায় পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। মানবিক দৃষ্টিতে পুলিশও তাই মনে করে। ফলে তাদেরকে সিলেটের একটি এতিমখানায় দেয়া হয়েছে।
এদিকে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজে ওই দুই শিশুর ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘ভালো থাকিস বাবারা, ভালো হয়ে ফিরে আসিস, সমাজের অন্ধকার থেকে দূরে থাকিস, আলো হয়ে জ্বলে উঠিস।’

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com