মৌলভীবাজার হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের স্মারকলিপি : লকডাউনে হোটেল রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের ছাঁটাই বন্ধের দাবি

April 13, 2021,

বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন রেজি নং বি-২০৩৭ এর দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফেডারেশনের অন্তর্ভূক্ত মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ ২৩০৫-এর পক্ষ থেকে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিপর্যয় থেকে হোটেল শ্রমিক ও হোটেল শিল্প বাঁচাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ৭(সাত) দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি ১৩ এপ্রিল সকাল ১১ টার সময় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রদান করা হয়। একই সাথে স্মারকলিপির অনুলিপি শ্রম সচিব, শ্রমঅধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শকের দপ্তরে প্রেরণ করা হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করায় বিশ্ব অর্থনীতির মহামন্দার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও বুভুক্ষাবস্থা সৃষ্টিসহ দুর্ভিক্ষ অবস্থা সৃষ্টির উপক্রম তৈরি হচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সরবরাহ চেইনের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো গভীরভাবে সম্পৃক্ত। ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা ও দুর্ভিক্ষ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমাদের দেশে এখনই বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। হোটেল শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ খাতে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মরত এবং তাদের উপর নির্ভরশীল রয়েছে তাদের পরিবারসমূহ। ফলে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এ খাতের উপর নির্ভরশীল হয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ। অথচ এ খাতের মালিকদের শুধু মুনাফা কেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনা এবং শ্রমিকদের দায়িত্ব গ্রহণ না করার মানসিকতার কারণে এ সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের জীবনযাপন আজ অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। এমতাবস্থায় হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের জন্য জরুরিভাবে সরকারি উদ্যোগে চিকিৎসা নিশ্চয়তাসহ নিয়মিত ত্রাণ, প্রণোদনা ও রেশনিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যিক প্রয়োজন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা আক্রান্ত এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা যাতে দূর্ভোগে না পড়ে সেজন্য সরকারের উদ্যোগে প্রত্যেকে শ্রমিকের অ্যাকাউন্টে তাদের মজুরির বিপরীতে নগদ আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের শ্রমিক-কর্মচারীদের করোনা ভাইরাস মহামারী মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত হোটেল শ্রমিকদের মজুরি শত ভাগ পরিশোধ করার দাবি অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। এই ব্যাপারে সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, শ্রম সচিব, শ্রম মন্ত্রণালয়, কলকারখানা পরিদর্শক এমনকি বিগত ২২ জুন ২০২০ আপনার বরাবর স্মারকলিপি দিলেও শ্রমিকরা কোন ধরণের সহযোগিতা বা নগত অর্থ জনপ্রতি ২,৫০০/- টাকা প্রণোদনা পায় নাই। এবারো কোভিড-১৯ এর পাদুর্ভাব মারাত্মক মাত্রায় বৃদ্ধি পেলে সরকার কর্তৃক প্রথমবারের মত লকডাউন ঘোষণা করার সাথে সাথে মালিকরা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ও উৎসব ভাতা না দিয়ে ছাঁটাই-এর করে দিচ্ছে। যা শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ-বিক্ষোভসহ শ্রম অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। এই ব্যাপারে মাননীয় শ্রম প্রতিমন্ত্রী বরাবর বিগত ৪ এপ্রিল ২০২১ ইং তারিখে স্মারকলিপি পেশ করা হলেও এখনো পর্যন্ত কোন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নাই। এমতবস্থায় হোটেল শ্রমিক ও শিল্পকে রক্ষার জন্য নিম্নোক্ত ৭ (সাত) দফা দাবি বাস্তবায়নের প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করা হয়।
(১) হোটেল শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ মজুরি ও উৎসব ভাতাসহ প্রাপ্ত সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জোর দাবি জানাচ্ছি।
২) মহামারী দুর্যোগের এই সময় হোটেল সেক্টরে কোন লে-অফ, অব্যহতি বা ছাঁটাই করা যাবে না। এ বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট পরিপত্র জারির অনুরোধ জানাচ্ছি ।
(৩) যেসব শ্রমিক ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছে তাদের আইসোলেশন ও যথাযথ চিকিৎসার সমুদয় দায়িত্ব সরকার ও মালিককে বহন করার অনুরোধ করছি।
(৪) সকল হোটেল শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
(৫) কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সহ ঝুঁকি ভাতা এবং করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে এক জীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
(৬) প্রণোদনা হিসেবে মাসিক ন্যুনতম ১০ হাজার টাকা সরাসরি সরকার কর্তৃক শ্রমিকদের প্রদান করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
(৭) করোনাকালীন সময়ে শ্রমিকদের বাড়ি ভাড়া মওকুফের সুনির্দিষ্ট ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।-প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com