রাজনগরে কুশিয়ারার অব্যাহত ভাঙ্গঁনের ফলে বিলীন হচ্ছে নদী তীরবর্তী শতশত ঘরবাড়ি
শংকর দুলাল দেব॥ কুশিয়ারা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গঁনের ফলে বিলীন হচ্ছে নদী তীরবর্তী দুই ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের শতাধীক ঘরবাড়ি, মন্দির, মসজিদ ও গোরস্থান ইত্যাদি। অব্যাহত ভাঙ্গঁনের ফলে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া এসব গ্রামের দুর্গতরা মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। কুশিয়ারা নদীর অব্যাহত এ ভাঙ্গঁন প্রতিরোধে সরকারের দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নাই। তবে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডে দাবি কুশিয়ারা ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, রাজনগরের ফতেহপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গঁন কবলিত এলাকায় বসত বাড়ীর বুক চিরে নতুন করে ফাটল দেখা দেয়ায় কুশিয়ারা নদী পাড়ের বিলবাড়ি, সাদেকপুর, পূর্ব বেড়কুঁড়ি, পশ্চিম বেড়কুঁড়ি, হামিদপুর, শাহপুর, আব্দুল্লাহপুর, কাসিমপুর এবং উত্তরভাগ ইউনিয়নের ছিক্কাগাাঁও, কামালপুর, সুরিখাল, জুগিকোনা, কেশরপাড়া, সোনামপুর, উমরপুর, গালিমপুর, বাদেনারাইনপুর গ্রামের মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। এক অজানা শংকায় কাটছে তাদের দিন। কুশিয়ারা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গঁনে রাজনগর উপজেলার নদী পাড়ের এসব গ্রামের শতাধীক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার কারণে বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। আরো প্রায় শতাধিক পরিবার ঝুকিপুর্ন অবস্থায় রয়েছে। তাদের অধিকাংশই ভূমিহীন।
বেড়কুঁড়ি গ্রামের রয়জুন বিবি (৫৫) জানান, প্রতিদিন ভিক্ষা করে ক্ষুধা নিবারণ করি। কুশিয়ারার পাড় ঘেষে ছোট্ট কুঁড়ে ঘরটি কয়েক মাস আগে নদী গর্ভে চলে গেছে। এখন গৃহহারা উদ্বাস্তুর মতো দিন কাটাচ্ছি। দেখার কেউ নাই। একই গ্রামের আকামত মিয়া জানান, ভাঙ্গঁন কবলিত এলাকায় বসত-ভিটার বুক চিরে নতুন করে ফাঠল দেখা দিয়েছে। যে কোন সময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে অবশিষ্ট অংশ টুকু। ওই গ্রামের গৃহহারা মছকন মিয়া, আব্দুল মোতালিব ও রজাক মিয়া জানান, ভাঙ্গঁনকৃত এলাকায় প্রথমে ফাটল দেখা দেয়। এ সময় মানুষ বাধ্য হয়ে ঘরবাড়ি থেকে মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেয়। প্রায় সময় নদী তীরের সমগ্র এলাকা কেঁপে উঠে আর বিকট আওয়াজ করে মুহুর্তের মধ্যে মানুষের ভিটে-মাঠি রাক্ষুসী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এদের অনেকেই আশ্রয় নেয় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে কিংবা ওয়াপদা বাঁধের উপর। ক্ষতিগ্রস্থ অনেকেই জানান, রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মৌলভীবাজার পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর একাধিকবার লিখিত আবেদন করার পরও সরকারী ভাবে নদীভাঙ্গঁন প্রতিরোধে কার্যকরী কোন ভুমিকা নেয়া হচ্ছেনা। সরকারী সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের অবহেলার জন্য দরিদ্র পরিবার গুলো দিন দিন সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও সরেজমিনে দেখা যায়, বিলবাড়ি বাজার সংলগ্ন দুটি মন্দিরের একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যেকোন মূহুর্তে পূর্ববিলবাড়ি মন্দিরটির অবশিষ্টাংশ কুশিয়ারা গর্ভে চলে যাবে। মারাত্মক ঝুকিতে রয়েছে ওই এলাকার মসজিদ ও গোরস্থান গুলো। কুশিয়ারা নদী যেভাবে তীরবর্তী অসহায় লোকদের বাড়ি-ঘর গ্রাস করছে তা দ্রুত প্রতিরোধ করা প্রয়োজন অন্যতায় অব্যাহত এ ভাঙ্গঁনের ফলে রাজনগরের মানচিত্রই পাল্টে যাবে বলে সচেতন মহল মনে করে। এলাকাবাসী নদী ভাঙ্গঁনরোধ সহ ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নিকট দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহনের দাবী জানান।
বেড়কুঁড়ি এলাকার ইউপি সদস্য এমদাদুল হক টিটু জানান, কুশিয়ারা নদীতে বহমান পানির স্রোতে নদী তীরবর্তী বাড়ি-ঘর, মন্দির, মসজিদ ও কবরস্থান প্রতিনিয়ত কুশিয়ারা গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গঁনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অতি দরিদ্র লোকজন। যাদের পান আনতে পান্তা ফুরায়।
রাজনগরের নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পাল বলেন, কুশিয়ারা তীরবর্তী এলাকাগুলো ভাল ভাবে পরিদর্শন করা হয়নি। কারন সবেমাত্র যোগদান করেছি। পূর্বে এলাকাবাসী আবেদন দিয়ে থাকলে তাদের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। যাতেকরে তাদের আবেদনটি বাস্তবায়িত হয়।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, কুশিয়ারা নদী সিলেট বিভাগের তিনটি জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত। তাই মৌলভীবাজার, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা মিলে একত্রে ‘কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গন এলাকা রক্ষা প্রকল্প’ নামে যৌথ একটি প্রস্তাবনা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে মৌলভীবাজারের ডিজাইন চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সিলেট এবং সুনামগঞ্জের ডিজাইন হয়ে গেলে একত্রে প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রস্তাবটি সরকার অনুমোদন করলে কুশিয়ারা তীরের মানুষের আর সমস্যা থাকবেনা।
মন্তব্য করুন