শালিক পাখির বাচ্চা

June 30, 2020,

সায়েকা আহমদ॥

এক

আমার পাপা খুব ভোরে হাঁটতে বের হন। মাঝে মাঝে আমাকেও সাথে নিয়ে যান। কিছুদিন আগে আম্পান নামে একটি ভয়াবহ ঝড় বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল। সেদিন রাত্রেও খুব ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল। কাজেই ভোরে হাঁটতে বের হয়ে আমরা দেখি ঝড়বৃষ্টি কমেছে ঠিকই, কিন্তু চারপাশের রাস্তাঘাট দিয়ে তখনো বৃষ্টির পানি গড়িয়ে গড়িয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ আমার চোখে পড়ল রাস্তায় খুব ছোট্ট একটি পাখির বাচ্চা পড়ে আছে। আমি পাপার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি পাখির বাচ্চাটিকে নেড়েচেড়ে দেখে বললেন, ‘আহা, পাখির বাচ্চাটির এখনো চোখই ফুটেনি। রাতের ঝড়ে মারা গেছে।’ পাপার কথায় আমি খুবই দুঃখিত হলাম। কিন্তু ভাগ্য খারাপ। পাখির বাচ্চাটির মত কত পশু পাখি যে এই ঝড়ে মারা গেছে তার ইয়ত্তা নেই।

আরেকটু সামনে গিয়ে আরেকটি পাখির বাচ্চা দেখলাম। আমি ভেবেছিলাম এটাও বোধহয় আগেরটির মত মরে গেছে। কিন্তু আমার পাপা এই বাচ্চাটিকেও নেড়েচেড়ে দেখে বললেন, ‘মাহি, ভাগ্য ভালো। এ বাচ্চাটি এখনো মরেনি।’

আমি সাথে সাথে আনন্দে লাফিয়ে উঠে পাখির বাচ্চাটিকে একটি কচুপাতার উপরে যত্ন সহকারে রেখে বাসায় নিয়ে এলাম। পাপার সাথে মোবাইল ফোন ছিল। আমি পাপাকে অনুরোধ করায় তিনি পাখির বাচ্চা দুটির ছবি মোবাইল ফোনে তুলে ফেললেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘এটা কোন পাখির বাচ্চা পাপা?’

পাপা বললেন, ‘এটা শালিক পাখির বাচ্চা। মনে হয় বাঁচবে না।’

পাপার কথার পরও আমি বাচ্চাটিকে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করলাম। এখনো চোখ ফুটেনি। শুধু মুখ দিয়ে হা করতে পারে। আমি দু’তিন দানা ভাত খাওয়ালাম। তারপর পাখিটি ঘুমিয়ে পড়ল। ঘন্টাখানেক পর আমি আবারো পাখির কাছে গেলাম। ভেবেছিলাম মরে গেছে। কিন্তু না, তখনো বেঁচে আছে। আমি আবারো আগের মত খাওয়ালাম। আমার আম্মু বললেন, ‘পাখির এত ছোট বাচ্চাকে বাঁচাতে পারবে না মা।’ আমাদের বাসায় কাজ করেন ধ্রুব চাচা। তিনিও বললেন, ‘আম্মু, এ বাচ্চাটি মরে যাবে।’

সবাই মরে যাওয়ার কথা বললেও আমি ভেবেছিলাম পাখির বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পারবো। কিন্তু আমার পাপা আমার এ প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা দেখে বললেন, ‘মা, ঝড়ে বাচ্চাটি আহত হয়েছে। অনেক দূর থেকে ছিটকে এসে রাস্তায় পড়েছে। বৃষ্টিতে ভিজেছে। কাজেই বাঁচার কোন আশাই নেই।’ পাপার কথায় আমার মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। তারপরও আমি পাখিটিকে বাঁচাবার জন্য সেবাযত্নের কোন ত্রুটি করলাম না। অবশেষে বিকেলের দিকে পাখির বাচ্চাটি মারাই গেল। এই অল্প সময়ের জন্য বাচ্চাটি আমার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিল। যদিও আমিও জানতাম পাখির বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পারব না। তারপরও অনেক বড় আশা করেছিলাম। পাখির বাচ্চাটির মৃত্যুতে আমার খুব কান্না পেল। অবশেষে পাপা আর ধ্রুব চাচার সহযোগিতায় আমি শালিক পাখির বাচ্চাটিকে ছোট্ট একটি কবরে যত্ন সহকারে কবর দিলাম।

পাখির বাচ্চাটির জন্য আমার কয়েকদিন মনটা খুবই খারাপ ছিল। ভাবলাম, হায় বাচ্চাটি পৃথিবী কি রকম, তা দেখেও যেতে পারল না! এটাই বোধহয় পৃথিবীর একটি কঠিন নিয়ম!

[সায়েকা আহমদ, ৪র্থ শ্রেণি, বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।]

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com