শ্রীমঙ্গলের নান্দনিক একটি পর্যটন স্পর্ট লেমন গার্ডেন

June 23, 2025,

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি : লেমন গার্ডেন শুধু  একটি আবাসনই নয় এটি এখন হয়ে উঠেছে, বাংলাদেশের নান্দনিক  পর্যটন স্পটের একটি। যেখানে প্রবেশ করলে কিভাবে কেটে যাবে পুরো দিন তা আপনি বুঝতেই পারবেন না। এটি শ্রীমঙ্গলের মানুষের কাছেও একটি ভালোবাসার নাম এবং পছন্দের তালিকায় শীর্ষে।

শ্রীমঙ্গলের একজন সফল খামারি মো: সেলিম মিয়া। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি আনারস লেবুসহ বিভিন্ন  ধরনের ফল ও শাক-সবজি চাষ করে আসছেন। শ্রীমঙ্গলের বৃহদায়ৎ লেবু বাগান গুলোর মধ্যে একটি তাঁর। যার বাগানে প্রবেশ করে রাস্তা হারিয়ে ফেললে খুঁজে পেতে বেশ সময় লাগতো। ৩০ বছর  আগে থেকেই এই লেমন গার্ডেন বেড়াতে ছুটে যেতেন শ্রীমঙ্গল তথা দেশের সকল ভ্রমন পিপাসুরা। যেখানে হয়েছে অনেক নাটকের শুটিং।

প্রায় ৩০/৩৫ বছর আগে তার বাগানে নিজে বিশ্রাম নেয়ার জন্য সেলিম মিয়া প্রথমে তৈরী করেছিলেন একটি বাংলো। তখনও এই এলাকায় বিদ্যুৎ আসেনি। জেনারেটর দিয়ে তিনি বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেন। সে সময় সেখানে অনেকেই অনুরোধে রাত্রী যাপন করতেন। সাউন্ড-স্লিপের জন্য অন্যতম একটি বিশ্রামাগার ও প্রকৃতির কাছাকাছি একটি এলাকা হিসেবে অল্পসময়ে খ্যাতি লাভ করে সেলিম মিয়ার লেমন গার্ডেন নামে। এর পর মানুষের অনুরোধে সেলিম মিয়া সেখানে কয়েকটি কটেজ তৈরীর সিদ্ধান্ত নেন। আর এর ভিতরে বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ, পাহাড়ি রাস্তা সব মিলিয়ে অল্পদিনেই অসাধারণ একটি পর্যটন আবাসন তথা ভ্রমন স্পটে  রুপ নেয়। তখনও তিনি তার রিসোর্টের কোন নাম দেন নি। কিন্তু মানুষের মুখে মুখে লেমন গার্ডেন কথাটা এতোটা জনপ্রিয় হয়ে উঠে যে সেলিম মিয়া এর বৃহৎ পরিসরকে লেমন গার্ডেন রিসোর্ট নামে অভিহিত করেন।

লেমন গার্ডেনের বর্তমান অবস্থায় শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। পর্যাপ্ত অটো সিএনজি বা ভাড়া করা গাড়ি পাওয়া যায়। যাত্রাপথে শ্রীমঙ্গল – কমলগঞ্জ রাস্তা ধরে সবুজ কচি পাতার চাদরে মোড়ানো খন্ড খন্ড এক একটি স্বর্গ অতিক্রম করতে করতে এক সময় দেখা মিলবে কাঙ্খিত সেই লেমন গার্ডেনের। শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ সড়কের লাউয়াছড়া বনের প্রবেশ মুখের ২’শ গজ অতিক্রম করেই নূরজাহান চা বাগানের রাস্তা। বায়ে চলে গেছে লাউয়াছড়া বিট অফিস ভানগাছের রাস্তা। ডানে নুরজাহান চা বাগানের রাস্তা।  এ রাস্তা ধরেই হাতের বাঁয়ে লাউয়াছড়া বন রেখে প্রায় হাফ কিলোমিটার যাওয়ার পর বাঁ হাতে লাউয়াছড়া বনের ভিতরের আদিবাসী ত্রিপুরা জনগোষ্টীর গ্রাম ডলুছড়া। আর ডানপাশে বিশাল এলাকা জুড়ে সেলিম মিয়ার জনপ্রিয় লেমন গার্ডেন।

লেমন গার্ডেনের প্রবেশ মুখেই আপনাকে অভিবাদন  জানাতে অপেক্ষা করছে  বিশাল আকৃতির একটি “লেমন”।  অবশ্য ভেতরে প্রবেশের পর সহস্রাধিক গাছের ঝুলে থাকা লেমনও  আপনাকে স্বাগত জানাবে। যার প্রেক্ষাপটে আজ এই আবাসনের নাম হয়ে উঠেছে লেমন গার্ডেন।

তবে রিসোর্ট টি পর্যটকদের কাছে এতো আকর্ষনীয়, তার পেছনেও রয়েছে  অভাবনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং তার ভিতরে বিভিন্ন প্রকার সুযোগ সুবিধা। এটি একটি ৪ তারকা মানের হোটেল ও রিসোর্ট। রিসোর্টটিতে ১৪টি কটেজসহ  ৮৭ কক্ষ রয়েছে। যেখানে এক সাথে থাকতে পারবেন অন্তত তিনশতাধিক মানুষ। এছাড়াও  আছে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা। এই রিসোর্টটিতে  সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা  মূল্যের বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম। এছাড়াও পর্যটকদের চাহিদাকে সামনে রেখে রয়েছে কটেজ, কনফারেন্স রুম, বাংলো সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। এর ১০ হাজার টাকার মধ্যে ফ্যামিলি সুইট রুমে পাওয়া যাবে টিভি, ওয়ারড্রব, দারুন একটা ওয়াসরুম, ফ্রিজ, পাশাপাশি রয়েছে সুন্দর একটা সিটিং অ্যারেন্জম্যান্ট, রুমের সাথে বেলকনি। যেখানে বসে বৃষ্টির দিনে ভ্রমণে  আসলে দারুণ বৃষ্টিবিলাস করা যাবে।

আরোও আছে ভিআইপি কটেজ, এতে  রয়েছে বসে আড্ডা দেওয়ার মতো দারুণ জায়গা, আর ৪টি রুম, প্রতিটি রুম ৮ থেকে ১০হাজার টাকার মধ্যে, ডাবল বেডের রুম, বাথটাব সম্বলিত বাথরুম রয়েছে  সবকটা। আর সবচেয়ে আর্কশনীয় হচ্ছে এর প্রতিটি কটেজের নামও গুলো। প্রত্যেকটি নামই হচ্ছে মনোমুগ্ধকর।

এছাড়াও রয়েছে লাক্সারী সুইট ক্যাটাগরীর কিছু রুম। এখানে দুটি রুম একসাথেই রয়েছে যার ভাড়া হচ্ছে প্রায় ৩০হাজার টাকা প্লাস।

এছাড়াও এক্সিকিউটিভ সুইট কাপল রুম রয়েছে, যা কিনা সম্পূর্ণরুপে নান্দনিকতায়, শুভ্রতার চাদরে মোড়ানো একটি কক্ষ, যার ভাড়া পড়বে প্রায় ১৬ হাজার টাকা মাত্র।

এর সর্বোচ্চ মূল্যের কক্ষ হচ্ছে  প্রেসিডেন্ট সুইট, যেখানে একরাত কাটাতে গুণতে হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

প্রেসিডেন্ট সুইট এমনি এমনিই বলা হয়নি, তার সম্পূর্ণতা পেয়েছে আধুনিক নান্দনিকতায় যা চোখে না দেখলে অবর্ণনীয় ও অবিশ্বাস্য মনে হওয়া ছাড়া কিছু নয়!

আর রিসোর্টে থাকা ঝাড়বাতির আলো  রাত্রিকালীন সৌন্দরে‌্যর মাত্রা বাড়িয়ে বহুগুণ করে দেয়।

এখানে রয়েছে  নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, গাড়ি পার্কিং এর জন্য সুব্যবস্থা, বাচ্চাদের জন্য বিনোদনের বাহারী পসরা, রয়েছে সুবিশাল একটি সুইমিং পুল যা কিনা প্রতিটি রুমের পর্যটকদের জন্য কমপ্লিমেন্টারি সুযোগ। নানা প্রকার খেলাধুলার ইনডোর ও আউটডোরে ব্যবস্থা, সিনেপ্লেক্স, স্পা, জিম আছে বড়দের জন্য, লং টেনিস, বাস্কেটবল, ভলিবল সহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা।

বাচ্চাদের সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় হচ্ছে ছোট পরিসরে  একটি চিড়িয়াখানা। যেখানে দেখতে পাওয়া যাবে এক পাল হরিণ, উট পাখি, আছে ময়ূর যা আপনাকে অধিকাংশ সময়ই পেখম মেলে স্বাগত জানাবে। এছাড়াও স্টেজ পারফরম্যান্স করার জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা।

এর সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখার ব্যবস্থা রয়েছে, জন প্রতি ৪/৫শত টাকা করে থ্রি ডি মুভি দেখা যায়, তবে একক বা ফ্যামিলি নিয়ে সিনেমা দেখতে চাইলে আপনাকে গুনতে হবে ৪০০০টাকা।

সকল প্রকার ইনডোর গেম খেলতে চাইলে সেই শখও অপূর্ণ থাকবে না।

এছাড়াও আছে সব সুবিধা সহ এক সুবিশাল জিম সেন্টার। আধুনিকতার ছোয়ায় ১২০জন  ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি  সুসজ্জিত ও সুবিশাল কনফারেন্স রোমও রয়েছে।

২৫০ জন বসে একসাথে  ব্রেকফাস্ট বা লাঞ্চ বা ডিনার করার সুব্যবস্থা, দেশী, চায়নিজ থাই সহ বিভিন্ন খাবারের আয়োজন, বিশেষ অর্ডারে পাওয়া যাবে নিজেদের  পছন্দসই যেকোন আইটেমের খাবার। আর এর বুফে খাবারে থাকছে ১০টিরও বেশি আইটেম।

এর ভিতরের বেশিরভাগ জায়গায়ই রয়েছে বাহারী ফুল ও দৃষ্টি নন্দন বৃক্ষ রাজীর বাগান। যার ভিতরে হাজার হাজার প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়। যা দেখলে এক নিমিশেই আপনার মনকে নিয়ে যাবে নতুন কোন ভূবনে।

এর সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রতিদিনই মানুষ ভীড় করায় সেলিম মিয়া এর পরিস্কার ও পরিচ্ছন্নতার জন্য এবং নিরাপত্তার জন্য নিয়োগ দিতে হয়েছে প্রচুর লোক। যেখানে এখন কাজ করেন প্রায় আড়াইশ লোক। এই খরচ নির্বাহনের জন্য তিনি দর্শনার্থীদের কাছ থেকে একটি ফিসও নিয়ে থাকেন। এন্টি ফিসের মাধ্যমে প্রবেশ করে এখানে না থেকেও সারাদিন কাটিয়ে আসা যায়।

এখান থেকে খুব কাছেই লাউয়াছড়া মুলগেল, ডলুছড়া ত্রিপুরা পল্লি, নুরজাহান চা বাগান, মাধবপুর লেক, দাজিংলিং টিলা, চা জাদুঘর, আনারস, লেবু ও পান বাগান।

এ ব্যাপারে লেমন গার্ডেন এর মালিক মো: সেলিম মিয়া জানান, এটি চার তারকা মানের একটি রিসোর্ট হলেও স্থানীয় মানুষদের জন্য তিনি উন্মুক্ত রেখেছেন। তাছাড়া প্রভাসীদের কথা চিন্তা করে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিকে এমনভবে তৈরী করেছেন পুরোটাই ইউরোপিয়ান আদলে। তিনি জানান, চাইলে যে কেউ তাদের বিয়ে-সাদীসহ অনান্য অনুষ্ঠানাদিও এখানে সারতে পারেন।

নি:সন্দেহে বলাযায় নিস্তব্ধতা নিরিবিলি নির্জনতায় কাটানোর জন্য এই রিসোর্ট হচ্ছে এক টুকরো স্বর্গরাজ্য।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com