হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র.)-এর ৬৮২তম উরুস মোবারক উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার॥ মাঘ মাসের ১লা দিনে মৌলভীবাজারবাসীর জন্য কাঙ্খিত দিনটি আসে। এ সময় মৌলভীবাজার জনপদে উৎসবের আমেজে রঙিন হয়ে ওঠে। হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র.) এর উরুসকে কেন্দ্র করে দূরদূরান্ত থেকে দোকানি এ সময় সড়কের দু’পাশে মেলায় পসরা সাজিয়ে বসেন।
শনিবার ১৪ জানুয়ারি সকাল ৯টায় মাজারের গিলাফ ছড়ানো হয়। বাদ আছর গরু জবাই ও মিলাদ মাহফিলের আনুষ্ঠানিকতা মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র.) -এর উরুস। উরুস উপলক্ষে দরগাহ প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকা জুড়ে দুই তিনদিন আগে থেকেই মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
শাহ মোস্তফা সড়কসহ আশপাশের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলায় দোকান বসে। বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। মেলায় শিশুদের নানা ধরনের খেলনা ও খাবারের দোকানের পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর, কুটির শিল্প সামগ্রীর দোকান বসে। ভোর হতেই শিশু-কিশোররা শুরু করে ছোটাছুটি। শেষ হবে সোমবার ১৬ জানুয়ারি সকালে।
সকালের কুয়াশা কাটতেই মেলা প্রাঙ্গন মুখরিত হয়ে ওঠে নানান বয়সী মানুষের পদচারণায়। শিশুরা বড়দের কাছে বায়না ধরে টমটম গাড়ি, নাগরদোলা, নানা রঙের পুতুল ও বেলুন কিনে দেয়ার জন্য। পাশাপাশি বড়রা কিনছে দৈনন্দিন ব্যবহার্য কাঠ-বাঁশ-বেতের তৈরি আসবাবপত্র ও মাছ ধরার সরঞ্জাম। মেয়েরা কিনছে মাটির হাড়ি, পিঠা তৈরির সাঝ, পিড়ি, মালসা, জলচৌকি ও রান্নার তৈজসপত্রসহ নানান ধরনের পণ্য। ৩ দিনব্যাপী চলবে এ মেলা। তিলা, কদমা, নিমকি, শখের মিঠাই, চানাচুর, খই, বাতাসা ও হরেক রকম খাবারের ঘ্রাণে ভারি হয় মেলার প্রান্তর। নাগরদোলা, ঘূর্ণি বিদেশ, বেলুন-বন্দুক নিশানায় মেতে ওঠে নানা বয়সী শিশু-কিশোরের দল।
হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র.) মাজারের মোতাওয়ালি ও উরুস উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক সৈয়দ খলিলুল্লাহ ছালিক জুনেদ বলেন, এবার মেলায় আর কোনো বাধা নেই। নেই করোনা সংক্রমণের বিধিনিষেধ। মোতাওয়ালি আরও বলেন, এ বছর হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র.) শের সওয়ার চাবুকমার হাসানী ওয়াল হোসাইনী মাহবুবে এলাহির ৬৮২তম উরুস মোবারক।
তিনি আরও বলেন, রীতি অনুযায়ী দোকানপাট বসবে। শাহ মোস্তফার মেলায় মাজার সংলগ্ন শাহ মোস্তফা সড়কজুড়ে বসে দোকানপাঠ। মেলার মূল আকর্ষণ খৈ-উখড়া। এছাড়াও মেলায় বসে ফার্ণিচার, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, কুটির শিল্প, শিশুদের খেলনাসহ বিভিন্ন দোকানপাট। বসে খাবারের দোকান।
পৌর মেয়র ফজলুর রহমান জানান, শিরনির জন্য এবার প্রায় ২০টি গরু ও ৪টি ছাগল জবাই হয়েছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা, পানি সরবরাহ, শিরনি বিতরণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কাজ করছেন। এছাড়া এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৫৩ বস্তা চাল বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ শিরনির জন্য প্রদান করেছেন বলে জানান মেয়র।
এদিকে উরুস ও মেলাকে কেন্দ্র করে সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রযেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ। মাজার প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
উল্লেখ্য মৌলভীবাজারে ১৮১ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র.) উরুস ও মেলা।
মন্তব্য করুন