হে আল্লাহ! মাগফিরাত থেকে বঞ্চিত হতে চাই না

May 7, 2020,

এহসান বিন মুজাহির॥ রহমতে ভরা পবিত্র রমজানুল মোবারকের প্রথম দশক শেষ হয়ে ক্ষমার ঘোষণা নিয়ে মাগফিরাতের দ্বিতীয় দশকের তৃতীয় দিন আজ। রমজানের প্রথম দশ দিনে যারা আল্লাহর রহমতে সিক্ত হয়েছেন, আজ তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন মাগফিরাত আর নাজাতের বারিতে ভেজার। আমরা কী  রহমতের বারিধারায় সিক্ত হতে পেরেছি?

মাগফিরাতের এ দশকে রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের বৃষ্টি বর্ষিত হতে থাকে।  মহান আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য-অগণিত মানুষকে এই দশকে ক্ষমা করবেন। তবে যারা রমজানের এই কল্যাণময় সময়গুলোও অবহেলা ও উদাসীনতায় দূরে ঠেলে দেয় তারাই বঞ্চিত থাকে আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ থেকে। রমজানের এ দশকে আমরা মাগফিরাত থেকে বঞ্চিত হতে চাই না।

রোজা, কোরআন তেলাওয়াত, তারাবি, তাহাজ্জুদ, দান-সদকা, তাওবাহ, ইস্তেগফার, দোয়া, দরুদসসহ পূণ্যকর্মের মাধ্যমে মুমিন বান্দাদের পাপ ক্ষমা করানোর  সুবর্ণ সুযোগ পবিত্র মাহে রমজনুল মোবারক।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রমজান মাস লাভকারী ব্যক্তি যে উত্তমরূপে সিয়াম ও কিয়াম (রোজা, তারাবি ও অন্যান্য আমল) পালন করে, তার প্রথম পুরস্কার এই যে, সে রমজান শেষে গুনাহ থেকে ঐ দিনের মতো পবিত্র হয় যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। (মুসলিম : ৮৯৬৬)।

হজরত রাসুলে কারিমম (সা.) এরশাদ করেন, রমজান মাসে সিয়াম পালন পূর্ববর্তী রমজান থেকে কৃত গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয়; যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়’। (মুসলিম : ২৩৩)। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘রমজান মাসে সিয়াম পালন বছরের দশমাস সিয়াম পালন তুল্য’। (মুসলিম : ১১৬৪)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেলো, কিন্তু এই মাসেও তাকে ক্ষমা করা হলো না সে আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে চিরবঞ্চিত ও বিতাড়িত। (মুসতাদরাকে হাকিম : ১৭০)।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা আদায় করবে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (মুসলিম : ৫২৩) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলেছিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে অতি উত্তম কোনো নেক আমলের নির্দেশ দিন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি রোজা রাখো। কারণ এর সমমর্যাদার আর কোনো আমল নেই। (নাসায়ি : ২৫৩৪)।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াব লাভের খাঁটি আশায় লাইলাতুল কদরে কিয়ামুল লাইলে (তাহাজ্জুদে) অতিবাহিত করবে আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (বোখারি : ৬৭২)।

হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘তোমাদের কাছে রমজান উপস্থিত হয়েছে। রমজান এক বরকতময় মাস। আল্লাহ তোমাদের উপর এ মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে অবাধ্য শয়তানদের শেকলবদ্ধ করা হয়। এ মাসে আল্লাহ এমন একটি রাত রেখেছেন যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ হতে বঞ্চিত হল সে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত’। (নাসায়ি : ২১০৬)।

নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি খাটি ইমান ও ইখলাসের সঙ্গে রমজানের রাতে (তারাবিহতে) দাঁড়িয়ে যাবে আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (মুসলিম : ৫২৩)।

রমজান মাসের আমলগুলো যদি আল্লাহর কাছে কবুল হয়, তাহলে মহান আল্লাহ রোজাদারদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দেবেন।’ (সুরা ফুরকান : ৭০)।

মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআনে আরও এরশাদ করেন, ‘আর তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন ও পাপগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা আশ শুয়ারা : ১৫)। কোরআনুল কারিমে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন’। (সুরা বাকারা : ২২২)

মাহে রমজান আমাদেরকে আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। মাগফিরাতের এই দশকে যথাযথ হক আদায় করে রোজাসহ অন্যান্য ইবাদত এবং নেক আমলসমুহের মাঝে কাটাতে পারলে আশা করা যায় পরম করুণাময় আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি মাগফেরাতের বৃষ্টি ঝরাবেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের মাগফিরাতের বারিধারায় সিক্ত করুন।

আসুন এই দশকে আমরা বেশি  বেশি করে তাওবাহ, ইস্তেগফার, কোরআন তেলাওয়াত, দান সদকা ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার চেষ্টা করি। মাগফিরাতের এই দশকে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করে দিন। আমিন।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও প্রধান শিক্ষক, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com