চরম দূর্ভোগ : ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আদালত ও সাবরেজিষ্ট্রার অফিস : সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ উৎকন্ঠা

November 8, 2021,

স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজারে বড়লেখায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ঝুঁকি। দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে চরম ঝুঁকি নিয়ে এখন চলছে আদালতের কার্যক্রম। যে কোন সময় দূর্ঘটনার উদ্বেগ উৎকন্ঠা সংশ্লিষ্টদের। বড়লেখায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (চৌকি আদালত) ও সাবরেজিষ্ট্রার ভবন ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন থেকে জরাজীর্ণ ও ডেমেজ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান দু’টির কার্যক্রম। এতে ভবন ধসে যেকোন সময় বড়ধরণের দুর্ঘটনার আশংকা করছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা দলিল লেখক সমিতি গত ১৫ সেপ্টেম্বর সাবরেজিষ্ট্রার অফিস উপজেলা প্রশাসনের অভ্যন্তরে স্থানান্তরের দাবিতে উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত আবেদন জানান কিন্তু এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিকার হয়নি।
জানা যায় ১৯৮৩ সালে তৎকালীন সরকার ফৌজদারী আদালত পরিচালনার জন্য বড়লেখায় আদালত ভবন নির্মাণ করা হয়। ১৯৯২ সালে সরকারি আদেশে উপজেলা আদালত প্রত্যাহার করায় সেখানে উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রার অফিস স্থানান্তর করা হয়। ২০০৪ সালের শেষের দিকে দেশের সীমান্তবর্তী ৯টি উপজেলায় চৌকি আদালত চালুর সরকারি সিদ্ধান্তে প্রায় ১ যুগ অরক্ষিত ও জরাজীর্ণ ভবনে বড়লেখা উপজেলা আদালতের কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়।
ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ও সাবরেজিষ্ট্রার ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে। এমনকি এজলাসে বিচারকার্য চলাকালিন ছাদের আস্তর খসে খোয়া বের হয়ে ভেঙ্গে ও বৈদ্যুতিক পাখা ছিটকে আইনজীবিদের মাথায় পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনার পর থেকেই আদালতের স্টাফ, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা থাকছেন আতংকে।
২৮ মে আদালত ভবনের হাজতখানার উত্তর দিকের প্রায় ৫০ ফুট দীর্ঘ সীমানা প্রাচীর ধসে পড়ে। অরক্ষিত হয়ে পড়ে কোর্ট হাজতখানা। পুলিশ ও আসামীর নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। এদিকে ভবনের ছাদ চুয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে নষ্ট হয় আদালত ও সাবরেজিষ্ট্রার অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। অন্যদিকে ডেমেজ ভবনের দেওয়াল ও নিরাপত্তা প্রাচীর যে কোন সময় ধসে পড়ার উপক্রম। আদালত ও সাবরেজিষ্ট্রার ভবনের দেয়াল, ছাদ, পিলার ও ভিমের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দৃশ্যমান।
জরাজীর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে রয়েছে আদালতের এজলাস, খাস কামরা, এপিপি কক্ষ, জিআরও কক্ষ, পুরুষ ও মহিলা হাজতখানা। অরক্ষিত নষ্ট হওয়ার পথে বিভিন্ন বিচারাধীন মামলার জব্দকৃত আলামত। দেওয়াল ও ছাদের বিভিন্ন স্থানের পলেস্তোরা খসে পড়েছে। বৃষ্টি হলেই ছাদ চুঁয়ে পড়ে পানি। ভবন সংকটে মহিলা হাজতখানায় বাস করেন আদালতের স্টাফ ও পুলিশ সদস্যরা। দেওয়াল ও ছাদ ধসে যেকোন সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা।
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এপিপি এডভোকেট গোপাল দত্ত বাবলু সাংবাদিকদের জানান, ডেমেজ ভবনে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিচারিক কার্যক্রম। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ৬ বছরে কয়েক দফা আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু আজও ব্যবস্থা নেওয়ার খবর পাননি। জনস্বার্থে দ্রুত নতুন আদালত ভবন নির্মাণ করা জরুরী।
উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মীর মখলিছুর রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের জানান আদালত ভবনের একপাশে বিচারিক কার্যক্রম ও অন্যপাশে সাবরেজিষ্ট্রী অফিসের কার্যক্রম চলছে। অতি পুরাতন ভবনটি প্রায় ডেমেজ হয়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কাজ করতে সবাই থাকেন আতংকে। নতুন ভবন নির্মাণের আগ পর্যন্ত দুর্ঘটনা এড়াতে সাবরেজিষ্ট্রার অফিস উপজেলা চত্তরের ভেতরে স্থানান্তরের দাবিতে উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট লিখিত আবেদন করেছি।
বড়লেখা উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার নিতেন্দ্র লাল দাস বলেন, সরকারের বড় অংশ রাজস্ব আদায়কারি প্রতিষ্ঠানের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোন সময় বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটতে পাড়ে। কর্মকর্তা-কর্মচারি ও নথিপত্রের নিরাপত্তা বিবেচনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে জানান।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com