শ্রমিকদের ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ইউপি সদস্য ও বাগান সভাপতির বিরুদ্ধে
মাহফুজ শাকিল : কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা-বাগানে হতদরিদ্র চা-শ্রমিকদের সরকারি প্রণোদনার ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মী ও বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি আগনু দাসের বিরুদ্ধে। চা শ্রমিক জীবন মান উন্নয়ন কর্মসূচীর ভাতা আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগে ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মীর পদত্যাগ ও বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি আগনু দাসকে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতির জন্য ক্ষোভ জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে ভুক্তভোগী সাধারণ শ্রমিকবৃন্দ।
জানা যায়, বরমচাল চা-বাগানে হতদরিদ্র চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার থেকে জনপ্রতি ৬ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দিলে ২৪৯ জনের একটি তালিকা তৈরি করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মী ও বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি আগনু দাস। ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মী ও বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি আগনু দাস মিলে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রকৃত চা-শ্রমিকদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের পরিবারের সদস্য এবং বাগানের প্রায় ২৪টি পরিবারের একাধিক সদস্যদের নাম সরকারি টাকা প্রাপ্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এছাড়া বাগানের অনেক শ্রমিকের কাছ থেকে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মী নিজে ও তার স্ত্রী বিনা কুর্মীকে তালিকাভুক্ত করেছেন। অন্যদিকে বাগান সভাপতি আগনু দাস স্বজনপ্রীতি করে নিজে ও তার স্ত্রী সাবিত্রী দাস, ছেলে সাগর দাস ও সুমন দাসকে তালিকাভুক্ত করেছেন। এরমধ্যে সুমন দাস কাতারে থাকেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও তাদের মনোনীত আরো ৪টি পরিবারের মোট ১২ জন সদস্য তালিকায় নাম দিয়ে টাকা নিয়েছেন। এছাড়া বাগানের প্রকৃত চা-শ্রমিক নন এমন ব্যক্তিদেরও তালিকাভুক্তি করেন।
এদিকে ১৪ আগস্ট বরমচাল চা বাগানের ভুক্তভোগীসহ সাধারণ শ্রমিকরা মানববন্ধন ও মিছিল করেন। মানববন্ধনে ছাত্র-যুবক, নারী শ্রমিক, সাধারণ চা শ্রমিক ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এসময় বরমচাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আহমদ খান সুইট উত্তেজিত শ্রমিকদের শান্ত হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে খতিয়ে দেখা হবে। তদন্তে ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মী কর্তৃক টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়টি প্রমাণিত হলে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর তিনি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিনকে অবগত করেন। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাহানুর রহমান সাদনকে প্রধান করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোরশেদ আহমদ খান সুইট।
বাগানের শ্রমিকদের দাবি, ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মীকে অবিলম্বে পদ থেকে অপসারণ/পদত্যাগ করতে হবে। শ্রমিকদের কাছ থেকে নেয়া টাকা ফেরত প্রদান নিশ্চিত করা। যেসব প্রকৃত শ্রমিক তালিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের ভাতা প্রদান করতে হবে। ভবিষ্যতে যেকোনো সরকারি ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত কমিটির সকল সদস্যকে অবগত করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। ভাতার তালিকা প্রণয়নে স্বজনপ্রীতি ও পরিবারের নাম অর্ন্তভুক্তির বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তদন্ত কমিটির নেতৃবৃন্দরা জানান, তদন্ত প্রতিবেদন বুধবার বরমচাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোরশেদ আহমদ খান সুইট ও বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়া হয়েছে। ভাতাভোগীর তালিকায় ২৪৯ জনের মধ্যে ১৮৭ জনের তদন্ত অনুযায়ী ৩৬ জন উপকারভোগীর ভাতা ৬ হাজার টাকা করে পাওয়া যায়নি। বাগানের ভাতাভোগী ৯ জনের বিকাশ নাম্বার পরিবর্তন করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে বরমচাল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মী বলেন, আমি শ্রমিকদের ভাতার টাকা আত্মসাৎ করিনি। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়।
বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি আগনু দাস বলেন, আমি ও ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মী ভাতাভোগীর তালিকা তৈরি করে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে জমা দিয়েছি। প্রত্যেক শ্রমিকের বিকাশ নাম্বারে টাকা গেছে। এখানে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক নয়।
বরমচাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আহমদ খান সুইট বলেন, অভিযোগ পেয়ে ইউএনও স্যারের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করি। গঠিত কমিটি সরেজমিনে তদন্তে করে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের বিষয়টির সত্যতা পেয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন ইউএনও স্যারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। ভাতাভোগীর তালিকায় যারা বঞ্চিত ছিল তাদের টাকা ফেরত দিবেন ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মী ও বাগান সভাপতি আগনু দাস।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।



মন্তব্য করুন