কুলাউড়ার নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, টাকার বিনিময়ে প্রশংসাপত্র দেওয়ার অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

September 16, 2025,

মাহফুজ শাকিল : কুলাউড়ায় নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে প্রশংসাপত্র দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক মো: আমির হোসেনের বিরুদ্ধে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনুমোদন ছাড়া প্রধান শিক্ষকের একক সিদ্ধান্তে রসিদ বিহীন অর্থ আদায়ের বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা যায়, নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় মোট ২৫০ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রশংসাপত্র বাবদ ৫০০ টাকা করে মোট ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এতে বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন দরিদ্র শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে গত শিক্ষাবর্ষে বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই প্রশংসাপত্র নেওয়ার সময় ৩০০-৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা প্রশংসাপত্র ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে না। এই সুযোগে বিগত বছরের ন্যায় এবারও তাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ধরণের খরচ বাবদ টাকা আদায়ের বিষয়টি বিধিবহির্ভূত। একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি স্কুলে খরচ কম সেজন্য ছেলেকে ভর্তি করেছিলাম। এখন দেখতেছি পাস করার পরও নানা অজুহাতে টাকা নেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, মৌলভীবাজার আলী আমজদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রশংসাপত্রের জন্য কোনো রকম টাকা নেওয়া হয়নি। অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানেও কোন টাকা নেয়া হয়নি। অথচ আমাদের স্কুলের সবার কাছ থেকেই প্রশংসাপত্র বাবদ ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। কলেজে ভর্তির জন্য প্রয়োজন তাই বাধ্য হয়েই ৫০০ টাকা দিয়ে প্রশংসাপত্র নিতে হয়েছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আমির হোসেন অর্থ আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে মুঠোফোনে বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশংসাপত্র বাবদ যে টাকা আদায় হয়েছে সেই অর্থ দিয়ে বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন সাতজন শিক্ষক ও ছয়জন কর্মচারীর সম্মানী বাবদ ব্যয় করা হয়েছে। সরকারি স্কুলে এরকম টাকা নেয়ার নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতনসহ বিভিন্ন ফি’র টাকা সরকারী তহবিলে জমা হয়। প্রতিষ্ঠানের সাত শিক্ষক ও ছয় কর্মচারী পদ শূন্য রয়েছে। সরকারিভাবে নিয়োগ দেয়া হয়নি। তাই ওইসকল খাতের ব্যয়ের জন্য আমরা বাজেট উপস্থাপন করেছি। তবে রেজুল্যশন ও বাজেটের অনুমোদন মিলেনি বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: ফজলুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, সরকারি-বেসরকারি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ মুদ্রণ খরচ বাবদ ৫০ টাকা নেয়া যেতে পারে। তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুধু প্রশংসাপত্রের জন্য ৫০০ টাকা করে অর্থ আদায়ের বিষয়টি নিয়মবহির্ভূত। তদন্ত করে যদি সত্যতা মিলে তাহলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, সরকারি বিদ্যালয়ে প্রশংসাপত্রের জন্য অর্থ আদায়ের বিষয়টি সমীচীন নয়। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে আমার কার্যালয়ে ডেকে আনবো। প্রধান শিক্ষক কিসের ভিত্তিতে অর্থ আদায় করেছেন সেটি খতিয়ে দেখা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com